Follow

জন্মদিনে লহ সালাম - সৈয়দ মুজতবা আলী

তিনি বলেছিলেন-"বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না!" প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সাহেব ক্ষমা না চাইলে স্কুলে যাবেন না। বাবা রেগে গিয়ে তাঁকে এক মোজা তৈরির কারখানায় ঢুকিয়ে দিলেন। আবার বাবা নিজে বলেছিলেন একটা কিছু তো পড়তে হবে। তিনি তখন নির্দ্বিধায় পিতার কাছে শান্তিনিকেতনে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ছাত্রটির নাম ,যার রচনা পড়লে ঘরে বসেই হয়ে যায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

জন্ম ১৯০৪ সালে জন্মাষ্টমীর দিন। বলতেন

তিথি মানলে হয় কখনো ১৩ই সেপ্টেম্বর কখনো ২৩শে সেপ্টেম্বর। আদতে শিলেটি মানে শ্রীহট্টের বাসিন্দা। পিতা ছিলেন করিমগঞ্জের কোর্ট রেজিস্ট্রার। ভর্তি হলেন সেখানকার এক স্কুলে। একবার সরস্বতী পূজার দিন স্কুলের ছেলেরা ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটের বাংলোয় ঢুকে না বলে অনেক তোলে। সাহেব তো রেগে আগুন, হুকুম দিলেন ছেলেদের ধরে মারতে। সে সময়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে দেশ এমনিতেই ছিল গরম। ছাত্রদের বেত মারার জন্য স্কুলে হয়ে গেল হরতাল, কেউ ক্লাস করবে না। ক’‌দিন স্কুল বন্ধ থাকলো। এদিকে অভিভাবকদের অধিকাংশই ছিল কর্মচারী। সরকারের চাপে একসময় আন্দোলন মিটল। সব ছাত্ররা ক্লাসে যোগ দিলেও তিনি কিন্তু অটল। সাহেব ক্ষমা না চাইলে স্কুলে যাবেন না। বাবা রেগে গিয়ে তাঁকে এক মোজা তৈরির কারখানায় ঢুকিয়ে দিলেন।

এর কিছুদিন আগে রবীন্দ্রনাথ করিমগঞ্জে এক সাহিত্যসভায় এসেছিলেন। বক্তৃতায় তিনি এক প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যথার্থ মানুষ হতে হলে আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করতে হবে। ওই বয়সেই তিনি রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লেখেন, আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করতে হলে কী করা উচিত। উত্তরে লেখেন, আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করতে হলে আত্মস্বার্থ ছেড়ে অপরের জন্য, দেশের জন্য ভাবতে হবে।এদিকে মোজার কারখানায় ঢুকিয়ে দিয়ে পিতা তো আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন না। পুত্রকে জিজ্ঞেস করেন, একটা কিছু তো পড়তে হবে।তিনি তখন নির্দ্বিধায় পিতার কাছে এ পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। পিতা লেখালেখি করে ব্যবস্থা করে দিলেন।

© ধ্রুবতারাদের খোঁজে

শান্তিনিকেতনে পড়তে এসে তাঁর সামনে বিশ্বসভার দুয়ার খুলে গেল। তখন দেশি–বিদেশি পণ্ডিতদের উপস্থিতিতে শান্তিনিকেতন উজ্জ্বল। একদিকে যেমন বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন, দিনু ঠাকুর শেখাচ্ছেন, অন্যদিকে বগ্‌দানব, ভিনটারনিৎস, হিডজিভাই মরিস প্রভৃতি বিদেশি পণ্ডিত। এখানেই তিনি পেলেন তাঁর আজীবনের সুহৃদ প্রমথনাথ বিশীকে। আসার পর রবীন্দ্রনাথ তাঁকে একদিন যে কোনও একটা কবিতা আবৃত্তি করতে বলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথেরই একটি কবিতা করলেন। কবি শুনে বললেন, তোর মুখে এখনও শ্রীহট্টের কমলালেবুর রস লেগে আছে। ওটা মুছতে হবে।

পরে উনি স্মৃতি চারণায় বলেছিলেন, সিলেটে আমরা ও–কার উচ্চারণে গোলমাল করি। ও–কার উচ্চারণে উ–কার উচ্চারণ করি, চোরকে বলি ‘‌চুর’‌। গুরুদেব এইটাই সংশোধন করত বলেছিলেন।

শান্তিনিকেতনের তিনিই প্রথম ভিন রাজ্যের । পাঁচ বছর পড়াশোনার পর আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু আলিগড়ের পরিবেশ তাঁর ভাল লাগেনি। শেষে কাবুলের শিক্ষা বিভাগে পেলে নির্দ্বিধায় সেখানে চলে যান। কাবুলে তিনি আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিলেন। এমন সময়ে সেখানে বাচ্চাই সাকোর অভ্যুত্থানে ভারতীয়দের জীবন বিপন্ন হলে, বাধ্য হয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

আফগানিস্তানে যাওয়া ও থাকা নিয়েই তাঁর গ্রন্থ ’‌–বিদেশে’‌। নামকরণ নিয়ে বলেছিলেন, যেহেতু বইয়ের খানিকটা লেখা ভারতের বিষয়ে, বাকিটা আফগানিস্তানের তাই নাম দিলাম ‘‌দেশে ’‌।

১৯২৯ সালে, দেশে ফেরার পর তিনি যান। আদ্যন্ত নাস্তিক মানুষটি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রে ডক্টরেট পান। ও শিখে নেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখলেন আরো এক অনবদ্য গ্রন্থ ‘‌চাচাকাহিনী’‌। সেখান থেকে ফিরে তিনি বরোদা কলেজের অধ্যক্ষ হন। অনেকদিন কাটিয়েছেন কায়রোতে, ছিলেন ফ্রান্সেও। এক জায়গায় লিখেছিলেন, তিনি চাকরী পেলে লেখেন না! চাকরী না থাকলে লেখেন। এই চাকরী তিনি বারবার কেন খুইয়েছেন,সেটাও খুব সহজ! কয়েক ডজন গণ্ডমূর্খের সঙ্গে তিনি চাকরী করতে পারতেন না! আর অবধারিত ভাবে তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষই হতেন সেই ছাগল! স্বাভাবিক ভদ্রতাবশে তিনি ঝগড়া না করে, চাকরীটাই ছেড়ে দিতেন!

ভাগ্যিস ছাড়তেন, আর তাই বাংলা পেল অনবদ্য এক .... সৈয়দ মুজতবা আলী।

তার সব ও আড্ডার অনবদ্য ছড়িয়ে আছে ‘‌পঞ্চতন্ত্র’‌, ‘‌ময়ূরকণ্ঠী’‌ প্রভৃতি গ্রন্থে। মুজতবা আলীর রচনা পড়লে ঘরে বসেই হয়ে যায় বিশ্ব ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

তাঁর কথায় "বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না!" এই মুসাফিরের চোখ দিয়ে যদি আজ সবাই দুনিয়াটা দেখতো.......…. ‌

আজ সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্মদিবসে আমাদের

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

@Bangladesh @bengali_convo @masindia
আমাদের একজন সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন। ওপারে ভাল থাকবেন।

Sign in to participate in the conversation
Qoto Mastodon

QOTO: Question Others to Teach Ourselves
An inclusive, Academic Freedom, instance
All cultures welcome.
Hate speech and harassment strictly forbidden.