অবিভক্ত বাংলার জাতীয় নেতা এ কে ফজলুল হককে শের-ই-বাংলা বলা হত কেন?

কলকাতার বাবুরা বলেছেন, "ঢাকায় করার কোন দরকার নেই। আছে, আছে পাশে একটা করে দাও। "

এই ধরনের কায়েমী স্বার্থবাদী আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে লর্ডের কাছে গিয়ে বোঝালেন ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় করতেই হবে। এবার ব্রিটিশরা কিছুটা নমনীয় হল --- কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হল একটু দেরীতে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন বাংলার ছিলেন শেরে বাংলা ফজলুল হক ।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯১৬ সালে এর নির্বাচিত হন । পরের বছর ১৯১৭ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় এর সাধারণ সম্পাদক হন । তিনিই ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি যিনি একই সময়ে মুসলিম লীগ এর এবং কংগ্রেস এর জেনারেল ছিলেন । ১৯১৮ -১৯ সালে জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ফজলুল হকের ব্যক্তিগত সচিব ।

১৯৩৭ এর নির্বাচনে শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক ঘোষণা দিয়েছেন নির্বাচনে জিতলে তিনি প্রথা চিরতরে উচ্ছেদ করবেন।

তিনি যাতে নির্বাচিত হতে না পারেন তার জন্য সারা বাংলাদেশ আর কলকাতার জমিদাররা একত্র হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন। লাভ হয়নি --- তাদের নেতাকে ভোট দিয়েছেন।

মুসলিম লীগ এর লাহোর অধিবেশনে বক্তব্য দিচ্ছেন । হঠাৎ করে একটা গুঞ্জন শুরু হলো, দেখা গেল জিন্নাহর বক্তব্যের দিকে কারও মনযোগ নাই । জিন্নাহ ভাবলেন, ঘটনা কী ? এবার দেখলেন, এক কোণার দরজা দিয়ে ফজলুল হক সভামঞ্চে প্রবেশ করছেন, সবার আকর্ষণ এখন তার দিকে । জিন্নাহ তখন বললেন --- When the tiger arrives, the lamb must give away. এই সম্মেলনেই তিনি উত্থাপন করেছিলেন ঐতিহাসিক

১৯৪০ সালের ২২-২৪ শে মার্চ লাহোরের ইকবাল পার্কে মুসলিম লীগের কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এই কনফারেন্সে আবুল কাশেম ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি তার প্রস্তাবে বলেন, হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার বাস্তবতায় একসাথে বসবাস অসম্ভব। সমাধান হচ্ছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি স্বাধীন মুসলিম এবং পূর্বাঞ্চলে বাংলা ও আসাম নিয়ে আরেকটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।

পাঞ্জাবের মওলানা জাফর আলী খান, সীমান্ত প্রদেশের সর্দার আওরঙ্গজেব, সিন্ধের স্যার আব্দুল্লাহ হারুন, বেলুচিস্তানের কাজী ঈসা ফজলুল হকের প্রস্তাব সমর্থন করেন। কনফারেন্সে এই প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়।

লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের সময়ে প্রদেশগুলোতে মুসলিম মাত্রা বাড়তে থাকার কারণে ফজলুল হক খুবই উদ্বিগ্ন এবং কিছুটা উত্তেজিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে একবার বলেন, ‘ আমি আগে মুসলিম, পরে বাঙালী (muslim first, bengali afterwards)’। বক্তৃতার এক পর্যায়ে এসে বলেন, ‘কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলোতে যদি আর কোনো মুসলিম নির্যাতিত হয় তাহলে আমি বাংলার হিন্দুদের উপর তার নেব।’

যে ফজলুল হক তিন বছর আগে সোহরাওয়ার্দী, নাজিমউদ্দিনকে রেখে শ্যামাপ্রসাদের সাথে কোয়ালিশন গঠন করেছেন সেই ফজলুল হকের মুখে এমন বক্তব্য তখনকার ভারতে ব্যাপক আলোড়ন সৃাষ্ট করেছিল।

বর্তমানে যে রাষ্ট্র তার ভিত্তি হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব। তাই ২৩ শে মার্চ কে পাকিস্তানে দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

কিন্তু লাহোর প্রস্তাব পাশ হওয়ার কয়েকদিন পরে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ চালাকির আশ্রয় নেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবটি টাইপ করার সময়ে ভুল করে muslim majority states লেখা হয়েছে; আসলে হবে state । জিন্নাহর ধারণা ছিল, দেন-দরবার করে দুই পাশে দুইটা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তাই স্টেটস এর জায়গায় স্টেট লিখে একটা মুসলিম মেজরিটি রাষ্ট্র করতে হবে।

জিন্নাহর এই ধূর্ততার কারণে ফজলুল হক তার সাথে পাকিস্তান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হননি। তরুণ শেখ মুজিব যখন জিন্নাহর নেতৃত্বে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তখন অভিজ্ঞ ফজলুল হক পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছেন। 'তিঁনি অনুমান করতে পেরেছিলেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলে কী কী দুর্দশা হবে বাংলার মানুষের। তাই তিঁনি পাকিস্তানের বিরোধিতা করেছেন। তে লিখেছেন.......

"বাংলার মাটিও তাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেছি, তখনই বাধা পেয়েছি। একদিন আমার মনে আছে একটা সভা করছিলাম আমার নিজের ইউনিয়নে, হক সাহেব কেন লীগ ত্যাগ করলেন, কেন পাকিস্তান চাননা এখন? কেন তিনি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জির সাথে মিলে মন্ত্রীসভা গঠন করেছেন? এই সমস্ত আলোচনা করছিলাম, হঠাৎ একজন বৃদ্ধ লোক যিনি আমার দাদার খুব ভক্ত, আমাদের বাড়িতে সকল সময়েই আসতেন, আমাদের বংশের সকলকে খুব শ্রদ্ধা করতেন- দাঁড়িয়ে বললেন, ”যাহা কিছু বলার বলেন, হক সাহেবের বিরুদ্ধে কিছুই বলবেন না। তিনি যদি পাকিস্তান না চান, আমরাও চাই না। জিন্নাহ কে? তার নামও তো শুনি নাই। আমাদের গরিবের বন্ধু হক সাহেব।” এ কথার পর আমি অন্যভাবে বক্তৃতা দিতে শুরু করলাম। সোজাসুজিভাবে আর হক সাহেবকে দোষ দিতে চেষ্টা করলাম না। কেন পাকিস্তান আমাদের প্রতিষ্ঠা করতেই হবে তাই বুঝালাম। শুধু এইটুকু না, যখনই হক সাহেবের বিরুদ্ধে কালো দেখাতে গিয়েছি, তখনই জনসাধারণ আমাদের করেছে। অনেক সময় ছাত্রদের নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি, মার খেয়ে।"

বঙ্গবন্ধু ' র বাবা বলেছেন , " বাবা তুমি যাই করো শেরে বাংলার বিরুদ্ধে কিছু বলো না। শেরে বাংলা এমনি এমনি শেরে বাংলা হয়নি। "

ফজলুল হক জানতেন মাঝখানে ভারতকে রেখে পশ্চিম আর পূর্বে জোড়া দিয়ে এক পাকিস্তান করলে তা কখনো টিকবে না। ‘ জিন্নাহ আমার লাহোর প্রস্তাবের খৎনা করে ফেলেছে -বলে ফজলুল হক পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় থাকেননি।

১৯৪৬ এ এসে জিন্নাহ সোহরাওয়ার্দীর দুই বাংলা একত্র করে স্বাধীন যুক্তবাংলার দাবী মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাও ভাগ করতে হল।

ফজলুল হক বলেছিলেন, একটি পাকিস্তান কখনও টিকবে না। বাংলা এবং আসামকে নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র করতে হবে।

১৯৭১ সালে এসে দেখা গেল, ফজলুল হকের আশঙ্কা এবং ভবিষ্যতবাণী সঠিক। ১৯৭১ এর মত এমন কিছু যে ঘটবে শেরে বাংলা ফজলুল হক তা আঁচ করতে পেরেছিলেন ১৯৪০ সালেই। তাই তিনি ১৯৪০ সালেই বাংলা আর আসাম নিয়ে পৃথক রাষ্ট্র করতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম হলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।

১৯৭১ এর হল ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবায়ন। লাহোর প্রস্তাব ফজলুল হক যেভাবে উত্থাপন করে ছিলেন সেভাবে মানলে একাত্তরে এই দেশে রক্তগঙ্গা বইত না।

পেশাজীবনে 'কলকাতা হাইকোর্টের নামকরা ছিলেন। একদিন তাঁর জুনিয়র হাতে একগাদা নিয়ে এসে বললেন, " স্যার , দেখুন , কলকাতার পত্রিকাগুলো পাতার পর পাতা লিখে আপনার দুর্নাম ছড়িয়ে যাচ্ছে --- আপনি কিছু বলছেন না । " তিঁনি বললেন, " ওরা আমার বিরুদ্ধে লিখছে তার মানে হল আমি আসলেই পুর্ব বাংলার কৃষকদের জন্য কিছু করছি। যেদিন ওরা আমার প্রশংসা করবে সেদিন মনে করবে বাংলার কৃষক বিপদে আছে। "

মুহাম্মদ ওয়াজেদ আলী বরিশাল বারের নামকরা উকিল । একবার আলী র প্রতিপক্ষ মামলার ইস্যু জটিল হওয়ার কারণে কলকাতা থেকে উকিল ফজলুল হককে নিয়ে আসে ওয়াজেদ আলীকে মোকাবেলা করার জন্য । ফজলুল হক ওই সময়ে কেবলমাত্র ফজলুল হক , শেরে বাংলা তখনও হননি । তিনি মামলা লড়তে এসেছেন , কিন্তু বিপক্ষের উকিল কে সেই খবর জানতেন না ।

কোর্টে এসে দেখলেন বিপক্ষে তার ওয়াজেদ আলী দাঁড়িয়েছেন । ফজলুল হক স্বাভাবিকভাবে শুরু করলেন ।

এক পর্যায়ে ওয়াজেদ আলী আদালতকে উদ্দেশ করে বললেন , “ ইনি যা বলছেন তা আইনসংগত না । আইনটা হল আসলে এরকম এরকম ....... ইনি নতুন উকিল তো আইন কানুন ভালো বোঝেন না । “

উত্তরে ফজলুল হক বললেন , “ তিনি হলে কী হবে ? তিনি হচ্ছেন কৃষকের ছেলে উকিল ( প্রকৃতপক্ষে তার দাদা আকরাম আলী ছিলেন ভাষার পন্ডিত ) , তিনি আইনের কী আর বোঝেন ? আমি হচ্ছি উকিলের ছেলে উকিল , আমারটাই ঠিক । “

খ্যাতির সাথে ৪০ বছর ধরে কলকাতা হাইকোর্টে ওকালতি করেছেন । আইন পাশ করার আগে কলকাতা থেকে আর ম্যাথমেটিক্সে ট্রিপল অনার্স করেছেন । করেছেন এ । ছোটবেলায় একবার পড়ে বইয়ের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলার গল্প রূপকথার মত এদেশের সবার মুখে মুখে ।

বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের বাজেট অধিবেশনে একজন এম পি শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে লাগলেন । ঐ এম পি শেরে বাংলার বিরুদ্ধে গানও লিখে এনেছেন এবং সংসদের বক্তুতা করতে গিয়ে সেই গানটি হেলেদুলে কর্কশ কণ্ঠে গাইতে শুরু করলেন । এরকম পরিস্থিতিতে যে কারও পক্ষে মাথা ঠাণ্ডা রাখা মুশকিল ।

শেরে বাংলা ঐ এমপি র বক্তব্যের মধ্যেই বলে উঠলেন -- "Mr Speaker, I can jolly well face the music, but I cannot face a monkey."

এবার ঘটলো মারাত্মক বিপত্তি । তার মত নেতার কাছ থেকে এরকম মন্তব্য কেউ আশা করেনি । এদিকে , ঐ এম পি স্পিকারের কাছে দাবী জানালেন -- এই মুহূর্তে ক্ষমা চাইতে হবে এবং এই অসংসদীয় বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে । স্পিকার পড়লেন আরেক বিপদে -- তিনি কীভাবে এত বড় একজন নেতাকে এই আদেশ দেবেন।

শেরে বাংলা ছিলেন ঠাণ্ডা মাথার মানুষ । তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন --- " Mr. Speaker, I never mentioned any honourable member of this House. But if any honourable member thinks that the cap fits him, I withdraw my remark."

'জ্ঞানতাপস প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক তাঁর জীবনী লিখতে চান জেনে বলেছিলেন, " রাজ্জাক, সত্যি বলো, তোমার মতলবটা আসলে কী ? " প্রফেসর রাজ্জাক বললেন, " আমার এই বিষয়টা খুব ভালো লাগে ---- আপনি যখন ইংরেজদের সাথে চলেন তখন মনে হয় আপনি জাত ইংরেজ। যখন বরিশালে আসেন মনে হয় আপনি বহুবছর ধরে নিজেই করেন। আবার যখন কলকাতায় শ্যামাপ্রসাদ বাবুকে ভাই বলে ডাক দেন তখন আপনাকে আসলেই মনে হয়। আবার যখন ঢাকার নবাব বাড়িতে ঘুড়ি উড়ান তখন মনে হয় আপনিও পরিবারের একজন । নিজেকে কেউ আপনার মত এত পাল্টাতে পারে না। আপনি যাই বলেন, সত্য হোক -- মিথ্যা হোক, মানুষ বিনা দ্বিধায় তা করে। "

মহাত্মা গান্ধী র নাতি রাজমোহন গান্ধী তার বইতে লিখেছেন -- তিন নেতার মাজারে তিনজন নেতা শায়িত আছেন যার মধ্যে দুজন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন । একজনকে পাকিস্তানের হতে দেওয়া হয়নি, অথচ তিনিই ছিলেন সত্যিকারের বাঘ ।

কিন্তু এটা তার জীবনের কোনো অপূর্ণতা নয়, একমাত্র রাষ্ট্রপতি হওয়া ছাড়া সম্ভাব্য সব ধরনের পদে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে । তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী, পূর্ব বাংলার তৃতীয় মুখ্য মন্ত্রী; পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব - পাকিস্তানের গভর্নর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ।

ছেড়ে শুধু পূর্ববাংলার রাজনীতি কেন করছেন এই প্রশ্নের উত্তরে ফজলুল হক বলেছিলেন -- এরোপ্লেন এ উঠলে নিচের জিনিস ছোট আর ঝাপসা দেখাতে পারে, তাই আমি মাটিতেই থাকছি । রাজনীতির এরাপ্লেন এ না চড়লেও সৌদি বাদশাহ সউদ ফজলুল হকের সাথে একটা মিটিং করার জন্য নিজের ব্যক্তিগত বিমান পাঠিয়েছিলেন ফজলুল হককে নিয়ে যাওয়ার জন্য ।

অসীম সাহসী এই মানুষটি আমাদেরকে সকল অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন। বাঙালী জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন অনেক আগেই । তিনি বলেছেন, যে জাতি তার বাচ্চাদের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহের সাথে লড়াই করা কিভাবে শিখবে ?

প্রফুল্লচন্দ্র রায় ছিলেন ফজলুল হকের । আবুল মনসুর আহমদের সাথে আলাপচারিতায় ফজলুল হক সম্পর্কে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মন্তব্য :

"ফযলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত ।সেই সঙ্গে ফযলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি । খাঁটি বাঙ্গালীত্বের সাথে খাটি মুসলমানত্বের এমন অপূর্ব সমন্বয় আমি আর দেখি নাই। ফযলুল হক আমার ছাত্র বলে বলছিনা, সত্য বলেই বলছি।খাঁটি বাঙ্গালীত্ব ও খাটি মুসলমানত্বের সমন্বয়ই ভবিষ্যৎ বাঙ্গালীর ।"

রেফারেন্স: আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর।(পৃষ্ঠা ১৩৫-৩৬)

বৈশাখের , বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠা এই ফজলুল হকের অবদান । কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ফজলুল হক মানুষের পেয়েছেন কারণ -- সংখ্যাগরিষ্ঠ এই উপমহাদেশে মাত্র একজন ব্যক্তি কৃষকদের জন্য রাজনীতি করেছেন । তিঁনি হলেন -- শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ।

১৯৪৮ সালে ঢাকায় এসেছিলেন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বললে ছাত্ররা তীব্র প্রতিবাদ করে। জিন্নাহ ছাত্রদের সাথে বৈঠকও করেন। কিন্তু ছাত্ররা ছিল নাছোড়বান্দা। জিন্নাহর ধারণা হলো, ফজলুল হক ছাত্রদেরকে উসকানি দিচ্ছেন। ফজলুল হকের বুদ্ধিতে ছাত্ররা উর্দুর বিরোধিতা করছে। জিন্নাহ এবার ফজলুল হকের সাথে দেখা করতে চাইলেন। কিন্তু ফজলুল হক দেখা করতে রাজি হলেন না। ফজলুল হক জিন্নাহকে ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করতেন।

জিন্নাহর পীড়াপিড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন ফজলুল হক। বন্ধ দরজার আড়ালে কথা হয়েছিল দুই মহান নেতার। কিন্তু ইংরেজিতে কী ধরনের বাক্য বিনিময় হয়েছিল তাদের মধ্যে পরবর্তীতে তা লিখেছেন ফজলুল হকের একান্ত সহকারী আজিজুল হক শাহজাহান --

জিন্নাহ : পাকিস্তান তো তুমি কোনোদিন চাওনি। সব সময়ে বিরোধিতা করে এসেছো।

হক : প্রস্তাবটি তো আমিই করেছিলাম। পরে ওটার খতনা করা হয়েছে। আমি এটা চাইনি।

জিন্নাহ: পাকিস্তানের এই অংশ বেঁচে থাক তা তুমি চাও না। তাই ভারতের কংগ্রেসের টাকা এনে ছাত্রদের মাথা খারাপ করে দিয়েছ। তারা আমাকে হেস্তনেস্ত করছে।

হক: আমি এখানে কোনো রাজনীতি করি না। হাইকোর্টে শুধু মামলা নিয়ে চিন্তা করি। নিয়ে থাকি ।

জিন্নাহ : জানো, তুমি কার সাথে কথা বলছো ?

হক: আমি আমার এক পুরোনো বন্ধুর সাথে কথা বলছি।

জিন্নাহ: নো নো, ইউ আর টকিং উইথ দ্য গভর্নর জেনারেল অব পাকিস্তান ।

হক: একজন কনস্টিটিউশনাল গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা আমি জানি।

জিন্নাহ: জানো, তোমাকে আমি কী করতে পারি ?

হক: (ডান হাতের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে) তুমি আমার এ্যাই করতে পারো। মিস্টার জিন্নাহ, ভুলে যাওয়া উচিত নয় এটা বাংলাদেশ এবং তুমি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সাথে কথা বলছ।

(আজিজুল হক শাহজাহানের কলাম,অমরাবতী প্রকাশনী,ঢাকা;পৃষ্ঠা ৪৬-৪৭)

@bengali_convo
@masindia
নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

Follow

শেরে বাংলা'র সম্পর্কে জানতে হলে, কোন কোন বই পড়া উচিত?

এটা সবচেয়ে অথেনটিক বই

Sign in to participate in the conversation
Qoto Mastodon

QOTO: Question Others to Teach Ourselves
An inclusive, Academic Freedom, instance
All cultures welcome.
Hate speech and harassment strictly forbidden.