Follow

আপনি কি জানেন, বাংলাদেশ হওয়ার পর “বঙ্গভূমি আন্দোলন” নামে একটি হয়েছিল?

জি, এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কালিদাস বৈদ্য ও চিত্তরঞ্জন সুতার। তাদের স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশকে হিন্দু বাংলা ও মুসলমান বাংলা নামে দুই টুকরা করে ফেলা। এর জন্য তিনি মূলত ভারতে যাওয়া শরণার্থী যুবকদের নিয়ে নামে একটি ব্যক্তিগত বাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনী মাঝে মাঝে পশ্চিমবঙ্গে মিছিল-মিটিং করত। এমনকি সীমান্তের ওপারে ভারতের হরিদাসপুরে এসেও হৈচৈ করত। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন।

অবিভক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খান রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর ১৯৭০-এর নির্বাচনের আগে চিত্তরঞ্জন সুতার, ডা. কালীদাস বৈদ্য, মলয় কুমার ভৌমিকসহ আরও কয়েকজন মিলে ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরি মিলনায়তনে একটি হিন্দু সম্মেলন ডেকে মূলত তফসিলি হিন্দুদের নিয়ে জাতীয় দল নামে একটি রাজনৈতিক গড়ে তুলেছিলেন। দেশের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে শুধু হিন্দুদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা অদৌ সঙ্গত হবে কিনা তা নিয়ে সম্মেলনে তুমুল হয়। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বিপ্লবী অতীশ রায়, অ্যাডভোকেট সুধীর হাজরা প্রমুখ হিন্দু দল গঠনের তীব্র বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন।

১৯৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় গণমুক্তি দল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে প্রার্থী দিয়ে একটাতেও জিততে পারেনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৃশ্যত এই দলের তেমন কোনো ছিল না। কালিদাস বৈদ্য ‘বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ ’ নামে একটি বইও লিখে ফেলেছিলেন। কালীদাস বৈদ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। একই সঙ্গে তিনি ঘৃণা করতেন ইসলাম ধর্মকে এবং এই ধর্মের অনুসারী মুসলমানদের। তিনি তার বইয়ে কোরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করে যেভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন তা হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসকেও হার মানায়।

কোলকাতার দৈনিক আজকাল ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ও ২৪শে এপ্রিল বাংলাদেশের ৬টি জেলা নিয়ে হিন্দুদের আলাদা বাসভূমিক ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ প্রতিষ্ঠার ভারতীয় চক্রান্তের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ৩টি ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক ধারণা লাভের জন্যে এই রিপোর্টই যথেষ্ট। ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ শীর্ষক রঞ্জিত শূর-এর লেখা রিপোর্টটি এইঃ“... বাংলাদেশের দু’টুকরো করে হিন্দুদের জন্য আলাদা গঠনের জন্য জোর তৎপরতা চলছে। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ২০,০০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ গঠনের উদ্যোগ আয়োজন চলছে অনেকদিন ধরে। এতদিন ব্যাপারটা সামান্য কিছু লোকের উদ্ভট চিন্তা বা প্রলাপ বলেই মনে হত। কিন্তু সম্প্রতি দেশী-বিদেশী নানা শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে ব্যাপারটা বেশ দানা বেধে উঠেছে।

ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’

রাষ্ট্রপতি পার্থ সামন্ত।

রাজধানী সামন্তনগর (মুক্তি ভবন)।

সবুজ ও গৈরিক রঙের মাঝে সূর্যের ছবি নিয়ে নির্দিষ্ট হয়েছে জাতীয় পতাকা।

জাতীয় সঙ্গীতঃ ধনধান্যে পুষ্পে ধরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।

সীমানাঃ উত্তরে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে ভারত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রস্তাবিত সীমানার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের ছয়টি জেলাঃ খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং পটুয়াখালী।

এই ছয়টি জেলা নিয়েই ২৫ মার্চ ১৯৮২ ঘোষিত হয়েছে তথাকথিত ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ রাষ্ট্র। স্বাধীন বঙ্গভূমিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সমস্ত উদ্যোগই চলছে কিন্তু পশ্চিম বঙ্গ থেকে। নেপথ্য নায়করা সবাই জানেন এই রাজ্যেই বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বিভিন্ন জেলা - ২৪ পরগনা, নদীয়া এবং উত্তর বাংলায় চলছে ব্যাপক তৎপরতা। অভিযোগ, ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত দুই বাংলাদেশী নেতা কাদের (বাঘা) সিদ্দিকী এবং চিত্তরঞ্জন ছুতোর মদত দিচ্ছেন হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে। প্রবক্তাদের যুক্তি বাংলাদেশে মুসলমানদের শাসন চলছে। হিন্দুদের জীবন ও সম্পত্তি তাদের হাতে নিরাপদ নয়। বিশেষত বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র ঘোষনার পর ঐ দেশের হিন্দুরা পরাধীন জীবন যাপন করছে। তাই প্রয়োজন হিন্দুদের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র-বঙ্গভূমি। বঙ্গভূমি আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সংগঠক নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ। ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় এই সংগঠনকির জন্ম হয়। জন্ম উপলক্ষে ১৫৯ গরফা মেইন রোডের সভায় নাকি উপস্থিত ছিলেন একজন আইএএস অফিসার অমিতাভ ঘোষ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ কালিদাস বৈদ্য (এমবিবিএস ডাক্তার), সুব্রত চট্টোপাধ্যয় (বিলাত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার), নীহারেন্দ্র দত্ত মজুমদার (পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন আইনমন্ত্রী) এবং শরৎ চন্দ্র মজুমদার (বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী)। অন্য সূত্রের খবর চিত্তরঞ্জন ছুতোরও ঐ সভায় হাজির ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর সংস্থা গোলপার্কে সভা করে প্রথম প্রকাশ্যে ‘হোমল্যাণ্ড’ দাবী করে। এরপর মাঝে মধ্যে সভা-সমাবেশ হত। এর মধ্যেই নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘে ভাঙন ধরে। ১৯৭৯ সালে হয় দু’টুকরো। ডাঃ কালিদাস বৈদ্যের নেতৃত্বাধীন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ গরফা মেইন রোড। সুব্রত চ্যাটার্জির নেতৃত্বাধীন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ ৮০ ধনদেবী মান্না রোড, নারকেলডাঙ্গা। এদের থেকে বেরিয়ে আর একটি অংশ তৈরী করে বঙ্গদেশ মুক্তিপরিষদ। ঠিকানা মছলন্দপুর। আরও একটি অংশ তৈরী করে সংখ্যালঘু কল্যাণ পরিষদ। চলে চিত্ত ছুতোরের ভবানীপুরের বাড়ী থেকে।পরস্পরের বিরুদ্ধে চাপান উতোরের মধ্যেই ঢিমেতালে চলছিল ‘বঙ্গভূমি’র পক্ষে প্রচার। কিন্তু ১৯৮২ সালে বঙ্গভূমি আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। ঐ বছরের ২৫শে মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। তৈরী হয় ‘সৈন্য বাহিনী’ বঙ্গসেনা। সৈনাধ্যক্ষ ডাঃ কালিদাস বৈদ্য। সুব্রত চ্যাটার্জীর গ্রুপ ঐ ঘোষণা না মানলেও বঙ্গভূমি দখলের জন্য ঐ বছরেই তৈরী করে ‘অ্যাকশন ফোরাম’ বাংলা লিবারেশন অর্গানাইজেশন (বিএলও)। আরও পরে বঙ্গদেশ মুক্তি পরিষদ তৈরী করে ‘সৈন্য বাহিনী’ লিবারেশন টাইগার্স অব বেঙ্গল (বিএলটি)। নেতা রামেশ্বর পাশোয়ান একজন বিহারী, থাকেন গরফার রামলাল বাজারে। এরপর বিভিন্ন সংগঠন মাঝে মাঝেই বঙ্গভূমি দখলের ডাক দেয়। সীমান্ত অভিযান করে। কিন্তু কখনই ব্যাপারটা এদেশের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। ’৮৮ এর জুলাই থেকে অবস্থাটা ধীরেধীরে পাল্টাতে শুরু করে। ঐ বছর ২২ জুলাই ‘বঙ্গসেনা’ একটি সম্মেলন করে।

এরপরই শুরু হয় একের পর এক কর্মসূচী। সীমান্ত জেলাগুলোতে চলতে থাকে একের পর এক সমাবেশ মিছিল মিটিং। ২৩ নভেম্বর ‘বঙ্গভূমি’ দখলের জন্য বনগাঁ সীমান্ত অভিযানে ৮/১০ হাজার লোক হয়। ২২-২৩ জানুয়ারী বনগাঁ থেকে বঙ্গ ‘সেনা’র মহড়া হয়। ২৪ মার্চ ও ২৫ মার্চ হয় আবার বঙ্গভূমি অভিযান। ৭ এপ্রিল রাজীব গান্ধীর কলকাতা আগমন উপলক্ষে সিধু কান ডহরে বিএলও এক জমায়েতের ডাক দেয়। প্রত্যেকটা কর্মসূচীতে ভাল লোক জড়ো হয়। বাংলাদেশে গেল গেল রব উঠে। এপারের সংবাদ মাধ্যমগুলো এই প্রথম গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশ করে খবর প্রচার করে। দেশে-বিদেশে ‘বঙ্গভূমি’র দাবি এবং দাবিদার নিয়ে কম-বেশী হৈচৈ শুরু হয়। আবার ২২ জুলাই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে বঙ্গভূমি দখলের জন্য। কালিদাস বৈদ্যের দাবি ঐ দিন এক লক্ষ লোক জমায়েত হবে।স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলনের নেপথ্য নায়কদের আসল পরিচয় কি? কি তাদের আসল উদ্দেশ্য? কে এই ‘রাষ্ট্রপতি’ পার্থ সামন্ত? কি ভূমিকা নিচ্ছেন ভারত সরকার? এসব তথ্য জানার জন্য অনুসন্ধান চালাই তাদের কর্মস্থলগুলিতে। দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলি ডাঃ কালিদাস বৈদ্য, সুব্রত চ্যাটার্জী, রামেশ্বর পাশোয়ার, কে পি বিশ্বাস, রাখাল মণ্ডল প্রমুখ নেতাদের সঙ্গে। অনুসন্ধানের সময় বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে চিত্ত ছুতোরের নাম। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি কিন্তু কিছুতেই দেখা করতে বা কথা বলতে রাজী হননি। এই দীর্ঘ অনুসন্ধানে এটা স্পষ্ট হয়েছে, ‘স্বাধীন’ হিন্দুরাষ্ট্র তৈরীর চেষ্টা আজকের নয়। পঞ্চাশের দশকেই হয়েছিল এর ব্লুপ্রিন্ট। “বঙ্গভূমি ও বঙ্গসেনা” পুস্তিকায় ডাঃ কালিদাস বৈদ্য নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ১৯৫২-তে তাঁরা তিনজন যুবক কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যান এবং ‘সংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মতৎপরতা’ চালান।

‘গোপনে স্বাধীনতা ও তার সঙ্গে স্বতন্ত্র বাসভূমির কথাও’ প্রচার করেন। ঐ তিন যুবক হলেন কালিদাস বৈদ্য, চিত্তরঞ্জন ছুতোর এবং নীরদ মজুমদার (মৃত)।বাংলাদেশে বেশ কিছু কাগজে লেখা হয়েছে “বঙ্গভূমি আন্দোলন ভারতেরই তৈরী”। ৮৮ সালের জুলাই থেকেই বঙ্গভূমি আন্দোলন ধীরে ধীরে দানা বাধতে শুরু করে। এটা কি নেহাৎই কাকতালীয়? ১৯৮২ সালে যখন ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি সরকার’ ঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশের কাগজগুলিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মূল সুর ছিল, ইন্দিরার মদতেই এসব হচ্ছে। সাম্প্রতিক ‘বঙ্গভূমি’ আন্দোলনের পেছনে নাকি ভারত সরকারের হাত আছে।প্রথম আন্দোলনের মূল হোতা ডাঃ কালিদাস বৈদ্য এবং রহস্যময় চরিত্র চিত্ত ছুতার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে বহুকাল ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনেও ছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বস্তুত ভারতীয় এজেন্ট হিসেবেই এই দু’জন এবং নীরদ মজুমদার তৎকালীন পূর্ববঙ্গে গিয়েছিলেন। চিত্তবাবু ওখানে রাজনৈতিকভাবেও বিশেষ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন মূলত তার ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। সংসদের সদস্যও হয়েছিলেন।ডাঃ বৈদ্য এতটা পারেননি। পরবর্তীকালে দু’জনের মধ্যে বিরোধও হয়। ডাঃ বৈদ্য ভারত সরকারের সমর্থন হারান। কিন্তু মুজিব সরকারের ওপর প্রভাব খাটাবার জন্য চিত্ত ছুতারকে ভারত সরকার চিরকালই ব্যবহার করেছে। এখনও ভারত সরকারের তরফে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন চিত্তবাবু। অনেকেই বলে, তাঁর সোভিয়েত কানেকশন নাকি প্রবল। চিত্তবাবু ভবানীপুরের রাজেন্দ্র রোডের বিশাল বাড়িতে সপরিবারে অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। কোথা থেকে আসে ঐ টাকা? ভারত সরকার কেন তাকে জামাই আদরে পুষছেন? তার বসতবাড়িটাও দুর্ভেদ্যও। পাহারা দেন বেশকিছু শক্ত সমর্থ যুবক। যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ করত। বনগাঁ লাইনে ‘বঙ্গভূমি’ সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার যে, ঐ বাড়িটাই ‘বঙ্গসেনা’র ঘাঁটি। ভারত সরকারের মদদের আরও প্রমাণ, রাজীব গান্ধীর বিবৃতি। তিনি একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে অনুপ্রবেশ। আকাশবাণী থেকেও একাধিকবার প্রচার হয়েছে। যেমন, ১৭ জানুয়ারী ‘বঙ্গভূমি’ পন্থীরা বাংলাদেশ মিশন অভিযান করলে ঐ খবর আকাশবাণী প্রচার করে। ১৮ জানুয়ারী রাজীব গান্ধী অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।এছাড়াও বলা যায়, এতদিন ধরে বঙ্গভূমি জিগির চলছে, বারে বারে শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে লোক নিয়ে গিয়ে সীমান্তে গণ্ডগোল ছড়ানো হচ্ছে তীব্র সাম্প্রদায়িক প্রচার চালানো হচ্ছে, ‘সৈন্যবাহিনী’ ঘোষণা করছে, প্রতিবেশী দেশের এলাকা নিয়ে পাল্টা সরকার ঘোষিত হয়েছে – তবুও পুলিশ তাদের কিছু বলে না কেন? সীমান্তে সমাবেশ বা ওপারে ঢোকার চেষ্টা হলে পুলিশ তুলে নিয়ে কয়েকশ’ গজ দূরে ছেড়ে দেয়। নেতাদের গ্রেফতারও করা হয় না। ভারত সরকারের মদদ না থাকলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ না থাকলে, এটা কি সম্ভব হত?ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা ডাঃ বৈদ্যও অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “মদদ নয় প্রশ্রয় দিচ্ছে বলতে পারেন। তবে মদদ দিতেই হবে। আমরা জমি প্রস্তুত করছি’। তিনি বলেন, “আমি ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, কিভাবে রাখছি, কার মাধ্যমে রাখছি বলব না। আমার বক্তব্য ক্রমাগতই তাদের বোঝাবার চেষ্টা করছি। সত্যিই যদি যথেষ্ট লোকজন জড় করতে পারি, তবে ভারত সরকারকে সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করতেই হবে। আমার একটা সরকার আছে। সৈন্যবাহিনী আছে। ভারতীয় সৈন্যবাহিনী ‘বঙ্গসেনা’ নামেই ঢুকবে বাংলাদেশে। আমরা সেই পরিস্থিতি তৈরী করার চেষ্টা করছি”। কিভাবে?বঙ্গসেনা, বিএলও, বিএলটি সবার সঙ্গে কথা বলে যা বুঝেছি সেটা এরকমঃ ‘বঙ্গভূমি’ পন্থীরা চান বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক অত্যাচার চালাক। যাতে তারা দলে দলে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে শুরু করে। শরণার্থীদের বোঝা বইতে হবে ভারত সরকারকে। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে কিছু অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের আরও একটা ইচ্ছা, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগুক, ব্যাপক হিন্দু নিধন হোক, যাতে এদেশের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সেন্টিমেন্টকে খুশী করার জন্য ভারত সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।‘বঙ্গভূমি’র ফেরিওয়ালাদের স্পষ্ট বক্তব্যঃ ভারত সরকারকে বেছে নিতে হবে দু’টোর একটা। তারা দেড় কোটি হিন্দু শরণার্থীর দায়িত্ব নেবেন, নাকি ‘স্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র’ ‘বঙ্গভূমি’ তৈরী করে দেবেন, যে বঙ্গভূমি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সিকিমের মত ভারতের অঙ্গরাজ্যে রূপান্তরিত হবে?

"তথ্যসূত্র :

1. কালীদাস বৈদ্যের বই এবং আমাদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে, দৈনিক ইনকিলাব, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ঈসায়ী

2. Hindu republic 'born' in Bangladesh, THE TIMES OF INDIA, Feb 4, 2003

3.স্বাধীন বঙ্গভূমি, (কোলকাতার) দৈনিক আজকাল, ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ও ২৪শে এপ্রিল (৩টি ধারাবাহিক রিপোর্ট)

4. আবুল আসাদ / একশ' বছরের রাজনীতি ॥ [ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি - মে, ২০১৪ । ]

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

Sign in to participate in the conversation
Qoto Mastodon

QOTO: Question Others to Teach Ourselves
An inclusive, Academic Freedom, instance
All cultures welcome.
Hate speech and harassment strictly forbidden.