Follow

ষাটের দশক। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে সময় এক ধরণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছিল ঢাকায়। পুরান ঢাকার এক হিন্দু বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্য এক বন্ধুর সাথে সেই বাড়িতে গিয়েছিল ছফা। তার বন্ধুর আত্মীয়ের বাড়ি ছিল সেটা। সারারাত জেগে ছিলেন বাড়িটাতে।

সেই বাড়িতে ছিল পুরানো ধুলোয় জমা এক বুকশেলফ। সেখান থেকে বেছে একটা বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করেছিলেন ছফা। ছেড়া বই। কাভার নেই। বইটার নামটাও ছিল না কোথাও। তারপরও অদ্ভুত এক মুগ্ধতা নিয়ে পড়তে থাকেন বইটা।

এরই মধ্যে রাত্রী শেষে ভোর হয়। বইটাও পুরোটা পড়ে শেষ করতে পারেনি ছফা। বন্ধুর সাথে আবারও ফিরে আসেন হলে। কিন্তু মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে সেই বইয়ের লাইন-

"All theory, dear friend, is grey, but the golden tree of actual life springs ever green. "

কয়েকটা দিন যায় এভাবে। নাহ! বইটা মাথা থেকে যাচ্ছেই না। বইটা পুরোটা পড়ে শেষ করতেই হবে। কিন্তু ছফা তো নাম জানে না বইটার। কোথায় পাবে আর সেই বই?

দ্বারস্থ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইংরেজির অধ্যাপকের। ভীষণ রাগী ছিলেন সেই শিক্ষক। ধুকপুক বুকে সাহস সঞ্চয় করে অধ্যাপকের সামনে গিয়ে বলেন, " স্যার কয়েকদিন আগে আমি একটা বই পড়েছি, পুরোটা শেষ করতে পারিনি। বইটাও নেই আমার কাছে। বইটার নামও জানি না। কে লিখেছেন তাও জানি না। কিন্তু বইটা আমি পড়তে চাই। বইটাতে একটা লাইন আছে এমন, 'all theory is grey...' ছেড়া বই হওয়ায় নাম লেখা ছিল না বইটাতে। তবে হ্যাঁ, ফোলিও লাইনে লেখা ছিল ফাউস্ট।"

একথা শুনে অধ্যাপক সাহেব রক্তচক্ষু করে ছফার দিকে তাকায়। বলেন, "আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে জার্মান কবি গ্যোটেকে চিনো না। ফাউস্ট গ্যোটের বিখ্যাত মহাকাব্য।"

ছফার এক প্রবন্ধে এই ঘটনা পড়ার সময় ঠিক এই জায়গায় এসে শিউরে উঠেছিলাম আমি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জার্মান কবি গ্যোটেকে চেনে না, এটা মেনে নিতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

আর আজ? কে-ই বা কাকে চেনে, কাকেই বা পড়ে!

পরের গল্পটা তো সবারই জানা। গ্যোটের প্রেমে পড়ে ছফা বেশ কয়েকবার গেছেন গ্যোটের শহরে। জার্মানিতে ছিলেন অনেকদিন। অনুবাদও করেছেন ফাউস্ট।

সেদিন ফেসবুকে দেখলাম। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোটের স্মৃতিবিজড়িত কিয়স্কটি(পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে। খবরটা পড়ে ভীষণ আনন্দ হয়েছে আমার।

৩০ জুন ছিল ছফার জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন মৌলবী সাব।

লেখা কৃতজ্ঞতা - আঞ্জুমান লায়লা নওশিন

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

Sign in to participate in the conversation
Qoto Mastodon

QOTO: Question Others to Teach Ourselves
An inclusive, Academic Freedom, instance
All cultures welcome.
Hate speech and harassment strictly forbidden.