একটি ব্যতিক্রমী বাঙালি প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস।
তার নাম হল সাধনা ঔষধালয়,ঢাকা। আজকের দিনে বড় বেমানান এই #প্রতিষ্ঠান।
দোকান বন্ধ। অথচ কর্মচারীদের এখনও বসিয়ে বসিয়ে মাহিনা দেয়। সারা ভারতবর্ষে একটি বিরল ঘটনা।
আজ ফিরে দেখা সেই #ইতিহাস।
১৯০৫ সাল বঙ্গভঙ্গ।
চারিদিকে তখন স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ার।
বিদেশি পণ্য বয়কট কর।
দেশিয় শিল্প গড়ে তুলতে নেমে পড়লেন একদল উদ্যোগী #বাঙালি #যুবক।
একের পর এক দেশিয় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল।
এইচ বোসের কলের গান,কেশতেল, দেলখোশ সুবাস, সি কে সেনের জবাকুসুম, বেঙ্গল পটারি,বেঙ্গল গ্লাস ফ্যাক্টরি, পি এম বাকচির কালি, সুগন্ধি, মোহিনী মিলের কাপড়ের #কারখানা,সেন রেলের #সাইকেল কারখানা এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের #বেঙ্গল #কেমিক্যাল আরো কত #শিল্প।
আর এই পথ ধরে এক #বাঙালি #যুবক গড়ে তুললেন ঢাকায়, সাধনা ঔষধালয়।
নাম তার যোগেশচন্দ্র ঘোষ।
সেই আমলে #কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের এম এ।
ভাগলপুরে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে #মাস্টারমশাই আচার্য পি সি রায়ের অনুপ্রেরণায় গড়ে তুললেন আয়ুর্বেদ ঔষধের #কারখানা।
তার নাম হল #সাধনা #ঔষধালয় ঢাকা।
অচিরেই এই প্রতিষ্ঠানের নাম সারাভারতে ছড়িয়ে পড়ল।
#সুভাসচন্দ্র বসু, #শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এই প্রতিষ্ঠানের #ওষুধ ব্যবহার করতেন।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জ্বর হলেই এই প্রতিষ্ঠানের ওষুধ খেতেন।
সেইসময় প্রায় চারশোর বেশি শাখা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল।
পণ্য রফতানি হত #আমেরিকা, #চীন, #ইরাক, #ইরান, আফ্রিকার দেশে।
এবার এল সেই দিন! ১৯৭১ সাল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।
যোগেশচন্দ্র পরিবারের সকলকে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন।
শত বলা সত্বেও #বাংলাদেশ ছেড়ে গেলেন না।
বললেন, মরলে এখানেই মরবো।
তবু এদেশ ছেড়ে কোথাও যাবো না।
ফলে যা হবার হল।
১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস।
সশস্ত্র খান সেনেরা কারখানায় এলো।
গুলি করে খুন করল যোগেশচন্দ্র ঘোষকে।🙂
তবু #ফ্যাক্টরি বন্ধ হল না।
কারণ সাধনা ঔষধালয়ের প্রডাক্টের চাহিদা তখনও ভারতজুড়ে।
একশো তিরিশটা #দোকান চলছে ভারতে।
কলকাতায় তিরিশটা #শাখা।
দাক্ষারিস্ট,চ্যবনপ্রাশ, সারিবাদি সালসা, জ্বরের #ওষুধ,বিউটি ক্রিম আরো কত প্রডাক্টের তখনও হেভি ডিমান্ড।
৮০ সাল পর্যন্ত #কোম্পানি চার কোটি টাকা লাভ করেছে।
তারপর ২০০৮ থেকে ২০১২ কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায় আধুনিকীকরণের অভাবে।
অনেক দোকান তবু খোলা ছিল।
কিন্তু যোগেশচন্দ্রের অলিখিত #নিয়ম অনুযায়ী কর্মীদের #বেতন দেওয়া বন্ধ হল না।
তাদের চলবে কিভাবে?
সারা ভারতবর্ষে এই ঘটনা এক বিরল দৃষ্টান্ত।
যেখানে মালিকরা #শ্রমিক কর্মচারীদের পি এফ, গ্র্যাচুয়াটির টাকা মেরে দেয় সেখানে যোগেশচন্দ্ররা ব্যতিক্রম তো বটেই।
সব মালিক যদি এরকম হত!
এই কোম্পানির জীবিত একমাত্র বংশধর হলেন শীলা ম্যাডাম।
তিনিই #উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমানে কোম্পানির মালিক।
তিনি #বিবাহ করেননি।
তিনি আধ্যাত্মিকতা নিয়ে থাকেন।
এই কোম্পানির বর্তমানে কিছু দোকান এখনও খোলা আছে।
অনেক ওষুধই নেই।
বিক্রি একরকম নেই।
কর্মচারীরা বলেন আজকের দিনে ৩৪ টাকা কিংবা ৫৫ টাকায় কোন ওষুধ পাওয়া যায়?
দাম বাড়ানো দরকার।
কিন্তু শীলা ম্যাডাম অনড়।
তিনি বলেন অল্প লাভ রেখে #গরীব মানুষের পাশে একটু দাঁড়ালে ক্ষতি কি?
অত টাকা করে কী লাভ?
যতদিন পারে চলুক।
তবু টিমটিম করে জ্বলছে শতবর্ষের বেশি #প্রাচীন #সাধনা #ঔষধালয়।
এখনও #কলকাতা ও রাজ্যের বুকে দু'একটা রঙচটা সাধনা ঔষধালয়ের #বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে,
" সাধনা #ঔষধালয়, ঢাকা" একটি #আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠান।
কালের নিয়মে একদিন হারিয়ে যাবে এই #প্রতিষ্ঠান।
শুধু জেগে থাকবে এক #দেশপ্রেমিক বাঙালির স্বপ্ন,
"সাধনা ঔষধালয়। "
শ্রদ্ধা ছাড়া আর কিবা জানাতে পারি আপনাকে যোগেশচন্দ্র ঘোষ মহাশয়।
তথ্যসূত্র
#আনন্দবাজার পত্রিকার নিবন্ধ।
নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:
#Bangladesh #Bangla #Bengali #Dhaka #Bangladeshi #BD
#বাংলাদেশ #বাংলা #বাঙালী #ঢাকা #বাংলাদেশী