Show newer

@BengaleeBabu @bengali_convo @masindia এরাই ছিল ব্রিটিশরাজের একনিষ্ঠ সেবক। সেই যুগ থেকে এদের বীজ এখনো রয়ে গেছে।

ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের নামকরণের ইতিকথা।

★গেন্ডারিয়া ইংরেজি শব্দ Grand Area থেকে এসেছে, এখানে আগেরদিনের অভিজাত ধনী ব্যাক্তিগন থাকতো।

★ভুতের গলি এখানে বৃটিশ একজন লোক থাকতেন নাম ছিল Mr. boot, তার নাম থেকে বুটের গলি, পরবর্তীকালে ভুতের গলি নাম হয়েছে।

★মহাখালী মহা কালী নামের এক মন্দীরের নাম থেকে হয়েছে বর্তমানের

★ইন্দিরা রোডঃ🧜‍♀️ এককালে এ এলাকায় "দ্বিজদাস বাবু" নামে এক বিত্তশালী ব্যক্তির বাসাস্থান, অট্টলিকার পাশের সড়কটি নিজেই নির্মাণ করে বড় কন্যা "ইন্দিরা" নামেই নামকরণ ।

: 🧚‍♀️ ইংরেজ শাসনামলে প্রচুর হাতি ব্যবহার করা হোতো । বন্য হাতিকে পোষ মানানো হোতো যেসব জায়গায়, তাকে বলা হোতো । বর্তমান "পিলখানা" ছিলো সর্ববৃহৎ ।

★এলিফ্যানট রোডঃ🧚‍♂️ পিলখানা হতে হাতিগুলোকে নিয়ে যাওয়া হতো "হাতির ঝিল"এ গোসল করাতে, তারপর "রমনা পার্ক"এ রোঁদ পোহাতো । সন্ধ্যের আগেই হাতির দল পিলখানায় চলে আসতো । যাতায়াতের রাস্তাটির নামকরণ সেই কারণে

★"এলিফ্যান্ট রোড" । পথের মাঝে ছোট্ট একটি কাঠের পুল ছিলো, যার নামকরণ হোলো "হাতির পুল" ।

★কাকরাইলঃ🏇 ঊনিশ শতকের শেষ দশকে ঢাকার কমিশনার ছিলেন মিঃ ককরেল । নতুন শহর তৈরী করে নামকরণ হোলো " " ।

★রমনা পার্কঃ🤼 অত্র এলাকায় বিশাল ধনী রম নাথ বাবু মন্দির তৈরী করেছিলো "রমনা কালী মন্দির" । মন্দির সংলগ্ন ছিলো ফুলের বাগান আর খেলাধুলার পার্ক । পরবর্তীতে সৃষ্টি হয় " পার্ক" ।

★গোপীবাগঃ🚴‍♂️ গোপীনাগ নামক এক ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন । নিজ খরচে "গোপীনাথ জিউর মন্দির" তৈরী করেন । পাশেই ছিলো হাজারো ফুলের বাগান " "

★টিকাটুলিঃ🏄‍♂️ হুক্কার প্রচলন ছিলো । হুক্কার টিকার কারখানা ছিলো যেথায় সেটাই " " ।

★তোপখানাঃ🤾‍♀️ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর গোলন্দাজ বাহিনীর অবস্থান ছিল এখানে ।

★পুরানা , নয়া পল্টনঃ🫂 ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ঢাকাস্থ সেনানিবাসে এক প্ল্যাটুন সেনাবাহিনী ছিল, প্ল্যাটুন থেকে নামকরন হয় পল্টন । পরবর্তীতে আগাখানিরা এই পল্টনকে দুইভাগে ভাগ করেন, নয়া পল্টন ছিল আবাসিক এলাকা আর পুরানো পল্টন ছিল বানিজ্যিক এলাকা ।

মোকারম নামঃ 🤽‍♂️ ১৯৫০-৬০ দিকে প্রেসিডেন্ট আয়ুবের সরকারের পরিকল্পনা পুরানো ঢাকা-নতুন ঢাকার যোগাযোগ রাস্তার । তাতে আগাখানীদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান,আবাসিক বাড়িঘর চলে যায় । আগাখানীদের নেতা আব্দুল লতিফ বাওয়ানী (বাওয়ানী জুট মিলের মালিক) সরকারকে প্রস্তাব দিলো, তারা নিজ খরচে এশিয়ার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ তৈরী করবে । এটা একটা বিরাট পুকুর ছিল "পল্টন পুকুর", এই পুকুরে একসময় ব্রিটিশ সৈন্যরা গোসল কোরতো । ১৯৬৮ সনে মসজিদ ও মার্কেট প্রতিষ্ঠিত হয় ।

: এখানে এককালে বড় একটি হাট বোসতো । হাটটি ধান ও অন্যান্য শস্য বিক্রির জন্য বিখ্যাত ছিল।

পরীবানু নামে নবাব আহসানউল্লাহর এক মেয়ে ছিল । সম্ভবত পরীবানুর নামে এখানে একটি বড় বাগান করেছিলেন আহসানউল্লাহ । পাগলাপুলঃ ১৭ শতকে এখানে একটি নদী ছিল, নাম – পাগলা । মীর জুমলা নদীর উপর সুন্দর একটি পুল তৈরি করেছিলেন । অনেকেই সেই দৃষ্টিনন্দন পুল দেখতে আসত । সেখান থেকেই জায়গার নাম "পাগলাপুল"।

উন্নয়ন, কৃষি ও পশুপালন গবেষণার জন্য বৃটিশ সরকার এখানে একটি ফার্ম বা খামার তৈরি করেছিল । সেই ফার্মের প্রধান ফটক বা গেট থেকে এলাকার নাম হোলো ফার্মগেট।🧚‍♀️

১৯৫৭ সালে সমাজকর্মী আব্দুল গণি হায়দারসহ বেশ কিছু ব্যক্তি এ এলাকায় বাড়ি করেন । এখানে যেহেতু প্রচুর গাছপালা ছিল তাই সবাই মিলে আলোচনা করে এলাকার নাম রাখেন শ্যামলী।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

জানেন কি ভারত উপমহাদেশের প্রথম কারা?

উপমহাদেশে ফারগানা থেকে তৈমুরী যুবরাজ বাবর এসে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার বহু আগে থেকেই 'যুদ্ধ ' ছিলো। মুঘলরা হাতির সাহায্যে হাতির পিঠে ব্যবহার করলেও এই রীতি প্রচলিত হয়েছিলো বাংলা সালতানাতে।

সেই থেকে বাংলার হাতি হিন্দুস্তানের বিন্ধ্যাচলের হাতির চাইতে বিখ্যাত ও অধিক শক্তিশালী। যার প্রমাণ পাওয়া যায় সাম্রাজ্যের সময় ভ্রমণে আসা আব্বাসীয় খিলাফতের আরব পর্যটক সুলায়মানের বর্ণনায় ও

পাল আমলের বিভিন্ন তাম্রশাসনে। বাঙালি পাল সম্রাট দেবপালের ১,০০,০০০ বর্মাবৃত রণহস্তীর ফৌজ ছিলো। সেসময় প্রাগজ্যোতিষরাজ হর্জর করতোয়া নদীর সীমানা অতিক্রম করে বাংলায় বিস্তার করলে ক্রুব্ধ হয়ে দেবপাল ঘোষণা করেন এবং সেনাপ্রধান জয়পালকে নির্দেশ দেন প্রাগজ্যোতিষরাজ কে ধরে আনার। বিশাল হস্তীবাহিনী নিয়ে জয়পাল রওনা হলেন হর্জর কে ধরতে। এই বিশাল রণহস্তীর কথা শুনেই হর্জর প্রাণভয়ে পালালেন তিব্বতে, পাল বাহিনীর পদানত হলো । দেবপাল ক্রুব্ধ হয়ে পুনরায় নির্দেশ দিলেন-

" যদি সে তিব্বতে (কম্বোজরাজ্য) পালিয়ে যায় তাকে ধরে নিয়ে এসো। কম্বোজরাজ যদি তাকে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাকে হাতির পায়ের নিচে মাড়িয়ে দাও। যদি চীনে পালিয়ে যায় সেখান থেকেও তাকে ধরে আনো!"

বিশাল বাহিনী নিয়ে যাত্রা করলেন তিব্বতের দিকে..যথারীতি কম্বোজরাজ বাধা হয়ে দাঁড়ালেন..এবং বাংলার হস্তীবাহিনীর সাথে টিকতে না পেরে প্রাণভয়ে আশ্রয় নিলেন চীনে। শুধু তাই নয় যে হর্জরের জন্য এত কিছু, সেও আশ্রয় নিলো চীনে।

সম্রাট দেবপালের শক্তির বর্ণনা দিয়ে হর্জরকে তার হাতে তুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে চীন সম্রাটকে লিখলেন জয়পাল। প্রমাদ গুনলেন চীন ..বাঙালির শৌর্যের প্রতীক সেই চিঠি আজও সংরক্ষিত বেইজিংয়ের জাদুঘরে..

• হাতির সাহায্যে প্রথম ট্যাঙ্ক তৈরির ধারণাটি ছিলো সুলতান শাহর।

চট্টগ্রামের পার্বত্য অরণ্য, ছিলো বাংলার হাতির মূল কেন্দ্র। ইলিয়াস শাহ্ হাতির পিঠে কামান বসিয়ে সর্বপ্রথম "পিল মিনার" নামক এই অভিনব ট্যাংক প্রস্তুত করেন। হাতির পিঠে একজন সৈন্য ও চালনা করার জন্য তার সাথে থাকতো একটি 'হালকা কামান'। এই কামান একদালার মহাযুদ্ধের সময় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলো..

বাংলা সালতানাতের শেষ শাহর ছিলো ৩৬০০ যুদ্ধহস্তী (প্রতিদ্বন্দ্বী বাদশাহ আকবরের ছিলো ৫০০০ যুদ্ধহস্তী) হাতির সাহায্যে যুদ্ধবিদ্যায় বাংলার সুলতানদের বীরত্ব ও দূরদর্শিতা প্রশংসনীয়।

বাংলা কামান ব্যবহারের প্রমাণ সম্পর্কিত তথ্যসূত্র:-

(১) 'তুযুক-ই-বাবরীতে' সম্রাট বাবর ১৫২৯ ঈসায়ী-অব্দে বাংলা সালতানাত ও বিতাড়িত আফগান ফৌজের সাথে সাম্রাজ্যের (ঘাগরার যুদ্ধ) বাংলার সৈনিকদের কামান ব্যবহারের পারদর্শিতার কথা তুলে ধরেছেন।

(২) 'শূন্যপুরাণ'- রামাই পণ্ডিত

উড়িষ্যা বিজয়ে বাঙালি সৈন্যদের মাথায় টুপি, মুখে এক আল্লাহর নাম ও হাতে কামান শোভা পাওয়ার কথা বলা আছে..

(৩) হাজারদুয়ারী প্যালেসে সংরক্ষিত তোপ-ই-বাচ্চাওয়ালীর প্রত্নপ্রমাণ

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

আপনি কি জানেন, বাংলাদেশ হওয়ার পর “বঙ্গভূমি আন্দোলন” নামে একটি হয়েছিল?

জি, এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কালিদাস বৈদ্য ও চিত্তরঞ্জন সুতার। তাদের স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল ভারত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ভারতকে দিয়ে বাংলাদেশকে হিন্দু বাংলা ও মুসলমান বাংলা নামে দুই টুকরা করে ফেলা। এর জন্য তিনি মূলত ভারতে যাওয়া শরণার্থী যুবকদের নিয়ে নামে একটি ব্যক্তিগত বাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনী মাঝে মাঝে পশ্চিমবঙ্গে মিছিল-মিটিং করত। এমনকি সীমান্তের ওপারে ভারতের হরিদাসপুরে এসেও হৈচৈ করত। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন।

অবিভক্ত পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খান রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার পর ১৯৭০-এর নির্বাচনের আগে চিত্তরঞ্জন সুতার, ডা. কালীদাস বৈদ্য, মলয় কুমার ভৌমিকসহ আরও কয়েকজন মিলে ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরি মিলনায়তনে একটি হিন্দু সম্মেলন ডেকে মূলত তফসিলি হিন্দুদের নিয়ে জাতীয় দল নামে একটি রাজনৈতিক গড়ে তুলেছিলেন। দেশের এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে শুধু হিন্দুদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করা অদৌ সঙ্গত হবে কিনা তা নিয়ে সম্মেলনে তুমুল হয়। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ বীরেন্দ্রনাথ দত্ত, বিপ্লবী অতীশ রায়, অ্যাডভোকেট সুধীর হাজরা প্রমুখ হিন্দু দল গঠনের তীব্র বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন।

১৯৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় গণমুক্তি দল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে প্রার্থী দিয়ে একটাতেও জিততে পারেনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৃশ্যত এই দলের তেমন কোনো ছিল না। কালিদাস বৈদ্য ‘বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে অন্তরালের শেখ ’ নামে একটি বইও লিখে ফেলেছিলেন। কালীদাস বৈদ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চরমভাবে ঘৃণা করতেন। একই সঙ্গে তিনি ঘৃণা করতেন ইসলাম ধর্মকে এবং এই ধর্মের অনুসারী মুসলমানদের। তিনি তার বইয়ে কোরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করে যেভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন তা হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসকেও হার মানায়।

কোলকাতার দৈনিক আজকাল ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ও ২৪শে এপ্রিল বাংলাদেশের ৬টি জেলা নিয়ে হিন্দুদের আলাদা বাসভূমিক ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ প্রতিষ্ঠার ভারতীয় চক্রান্তের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ৩টি ধারাবাহিক রিপোর্ট প্রকাশ করে। ষড়যন্ত্রের প্রাথমিক ধারণা লাভের জন্যে এই রিপোর্টই যথেষ্ট। ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ শীর্ষক রঞ্জিত শূর-এর লেখা রিপোর্টটি এইঃ“... বাংলাদেশের দু’টুকরো করে হিন্দুদের জন্য আলাদা গঠনের জন্য জোর তৎপরতা চলছে। বাংলাদেশের এক তৃতীয়াংশ ২০,০০০ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ গঠনের উদ্যোগ আয়োজন চলছে অনেকদিন ধরে। এতদিন ব্যাপারটা সামান্য কিছু লোকের উদ্ভট চিন্তা বা প্রলাপ বলেই মনে হত। কিন্তু সম্প্রতি দেশী-বিদেশী নানা শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে ব্যাপারটা বেশ দানা বেধে উঠেছে।

ইতিমধ্যেই ঘোষিত হয়েছে ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’

রাষ্ট্রপতি পার্থ সামন্ত।

রাজধানী সামন্তনগর (মুক্তি ভবন)।

সবুজ ও গৈরিক রঙের মাঝে সূর্যের ছবি নিয়ে নির্দিষ্ট হয়েছে জাতীয় পতাকা।

জাতীয় সঙ্গীতঃ ধনধান্যে পুষ্পে ধরা, আমাদের এই বসুন্ধরা।

সীমানাঃ উত্তরে পদ্মা, পূর্বে মেঘনা, পশ্চিমে ভারত, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রস্তাবিত সীমানার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশের ছয়টি জেলাঃ খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং পটুয়াখালী।

এই ছয়টি জেলা নিয়েই ২৫ মার্চ ১৯৮২ ঘোষিত হয়েছে তথাকথিত ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি’ রাষ্ট্র। স্বাধীন বঙ্গভূমিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার সমস্ত উদ্যোগই চলছে কিন্তু পশ্চিম বঙ্গ থেকে। নেপথ্য নায়করা সবাই জানেন এই রাজ্যেই বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বিভিন্ন জেলা - ২৪ পরগনা, নদীয়া এবং উত্তর বাংলায় চলছে ব্যাপক তৎপরতা। অভিযোগ, ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত দুই বাংলাদেশী নেতা কাদের (বাঘা) সিদ্দিকী এবং চিত্তরঞ্জন ছুতোর মদত দিচ্ছেন হিন্দু রাষ্ট্রের পক্ষে। প্রবক্তাদের যুক্তি বাংলাদেশে মুসলমানদের শাসন চলছে। হিন্দুদের জীবন ও সম্পত্তি তাদের হাতে নিরাপদ নয়। বিশেষত বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র ঘোষনার পর ঐ দেশের হিন্দুরা পরাধীন জীবন যাপন করছে। তাই প্রয়োজন হিন্দুদের জন্য স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র-বঙ্গভূমি। বঙ্গভূমি আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সংগঠক নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘ। ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় এই সংগঠনকির জন্ম হয়। জন্ম উপলক্ষে ১৫৯ গরফা মেইন রোডের সভায় নাকি উপস্থিত ছিলেন একজন আইএএস অফিসার অমিতাভ ঘোষ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ কালিদাস বৈদ্য (এমবিবিএস ডাক্তার), সুব্রত চট্টোপাধ্যয় (বিলাত ফেরত ইঞ্জিনিয়ার), নীহারেন্দ্র দত্ত মজুমদার (পশ্চিম বাংলার প্রাক্তন আইনমন্ত্রী) এবং শরৎ চন্দ্র মজুমদার (বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী)। অন্য সূত্রের খবর চিত্তরঞ্জন ছুতোরও ঐ সভায় হাজির ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর সংস্থা গোলপার্কে সভা করে প্রথম প্রকাশ্যে ‘হোমল্যাণ্ড’ দাবী করে। এরপর মাঝে মধ্যে সভা-সমাবেশ হত। এর মধ্যেই নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘে ভাঙন ধরে। ১৯৭৯ সালে হয় দু’টুকরো। ডাঃ কালিদাস বৈদ্যের নেতৃত্বাধীন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ গরফা মেইন রোড। সুব্রত চ্যাটার্জির নেতৃত্বাধীন নিখিল বঙ্গ নাগরিক সংঘের ঠিকানাঃ ৮০ ধনদেবী মান্না রোড, নারকেলডাঙ্গা। এদের থেকে বেরিয়ে আর একটি অংশ তৈরী করে বঙ্গদেশ মুক্তিপরিষদ। ঠিকানা মছলন্দপুর। আরও একটি অংশ তৈরী করে সংখ্যালঘু কল্যাণ পরিষদ। চলে চিত্ত ছুতোরের ভবানীপুরের বাড়ী থেকে।পরস্পরের বিরুদ্ধে চাপান উতোরের মধ্যেই ঢিমেতালে চলছিল ‘বঙ্গভূমি’র পক্ষে প্রচার। কিন্তু ১৯৮২ সালে বঙ্গভূমি আন্দোলন একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড় নেয়। ঐ বছরের ২৫শে মার্চ ঘোষিত হয় স্বাধীন বঙ্গভূমি রাষ্ট্র। তৈরী হয় ‘সৈন্য বাহিনী’ বঙ্গসেনা। সৈনাধ্যক্ষ ডাঃ কালিদাস বৈদ্য। সুব্রত চ্যাটার্জীর গ্রুপ ঐ ঘোষণা না মানলেও বঙ্গভূমি দখলের জন্য ঐ বছরেই তৈরী করে ‘অ্যাকশন ফোরাম’ বাংলা লিবারেশন অর্গানাইজেশন (বিএলও)। আরও পরে বঙ্গদেশ মুক্তি পরিষদ তৈরী করে ‘সৈন্য বাহিনী’ লিবারেশন টাইগার্স অব বেঙ্গল (বিএলটি)। নেতা রামেশ্বর পাশোয়ান একজন বিহারী, থাকেন গরফার রামলাল বাজারে। এরপর বিভিন্ন সংগঠন মাঝে মাঝেই বঙ্গভূমি দখলের ডাক দেয়। সীমান্ত অভিযান করে। কিন্তু কখনই ব্যাপারটা এদেশের মানুষের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। ’৮৮ এর জুলাই থেকে অবস্থাটা ধীরেধীরে পাল্টাতে শুরু করে। ঐ বছর ২২ জুলাই ‘বঙ্গসেনা’ একটি সম্মেলন করে।

এরপরই শুরু হয় একের পর এক কর্মসূচী। সীমান্ত জেলাগুলোতে চলতে থাকে একের পর এক সমাবেশ মিছিল মিটিং। ২৩ নভেম্বর ‘বঙ্গভূমি’ দখলের জন্য বনগাঁ সীমান্ত অভিযানে ৮/১০ হাজার লোক হয়। ২২-২৩ জানুয়ারী বনগাঁ থেকে বঙ্গ ‘সেনা’র মহড়া হয়। ২৪ মার্চ ও ২৫ মার্চ হয় আবার বঙ্গভূমি অভিযান। ৭ এপ্রিল রাজীব গান্ধীর কলকাতা আগমন উপলক্ষে সিধু কান ডহরে বিএলও এক জমায়েতের ডাক দেয়। প্রত্যেকটা কর্মসূচীতে ভাল লোক জড়ো হয়। বাংলাদেশে গেল গেল রব উঠে। এপারের সংবাদ মাধ্যমগুলো এই প্রথম গুরুত্ব সহকারে মনোনিবেশ করে খবর প্রচার করে। দেশে-বিদেশে ‘বঙ্গভূমি’র দাবি এবং দাবিদার নিয়ে কম-বেশী হৈচৈ শুরু হয়। আবার ২২ জুলাই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে বঙ্গভূমি দখলের জন্য। কালিদাস বৈদ্যের দাবি ঐ দিন এক লক্ষ লোক জমায়েত হবে।স্বাধীন বঙ্গভূমি আন্দোলনের নেপথ্য নায়কদের আসল পরিচয় কি? কি তাদের আসল উদ্দেশ্য? কে এই ‘রাষ্ট্রপতি’ পার্থ সামন্ত? কি ভূমিকা নিচ্ছেন ভারত সরকার? এসব তথ্য জানার জন্য অনুসন্ধান চালাই তাদের কর্মস্থলগুলিতে। দীর্ঘ সময় ধরে কথা বলি ডাঃ কালিদাস বৈদ্য, সুব্রত চ্যাটার্জী, রামেশ্বর পাশোয়ার, কে পি বিশ্বাস, রাখাল মণ্ডল প্রমুখ নেতাদের সঙ্গে। অনুসন্ধানের সময় বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে চিত্ত ছুতোরের নাম। বার বার অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি কিন্তু কিছুতেই দেখা করতে বা কথা বলতে রাজী হননি। এই দীর্ঘ অনুসন্ধানে এটা স্পষ্ট হয়েছে, ‘স্বাধীন’ হিন্দুরাষ্ট্র তৈরীর চেষ্টা আজকের নয়। পঞ্চাশের দশকেই হয়েছিল এর ব্লুপ্রিন্ট। “বঙ্গভূমি ও বঙ্গসেনা” পুস্তিকায় ডাঃ কালিদাস বৈদ্য নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ১৯৫২-তে তাঁরা তিনজন যুবক কলকাতা থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যান এবং ‘সংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মতৎপরতা’ চালান।

‘গোপনে স্বাধীনতা ও তার সঙ্গে স্বতন্ত্র বাসভূমির কথাও’ প্রচার করেন। ঐ তিন যুবক হলেন কালিদাস বৈদ্য, চিত্তরঞ্জন ছুতোর এবং নীরদ মজুমদার (মৃত)।বাংলাদেশে বেশ কিছু কাগজে লেখা হয়েছে “বঙ্গভূমি আন্দোলন ভারতেরই তৈরী”। ৮৮ সালের জুলাই থেকেই বঙ্গভূমি আন্দোলন ধীরে ধীরে দানা বাধতে শুরু করে। এটা কি নেহাৎই কাকতালীয়? ১৯৮২ সালে যখন ‘স্বাধীন বঙ্গভূমি সরকার’ ঘোষণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশের কাগজগুলিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। মূল সুর ছিল, ইন্দিরার মদতেই এসব হচ্ছে। সাম্প্রতিক ‘বঙ্গভূমি’ আন্দোলনের পেছনে নাকি ভারত সরকারের হাত আছে।প্রথম আন্দোলনের মূল হোতা ডাঃ কালিদাস বৈদ্য এবং রহস্যময় চরিত্র চিত্ত ছুতার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে বহুকাল ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ সৃষ্টির পিছনেও ছিল তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বস্তুত ভারতীয় এজেন্ট হিসেবেই এই দু’জন এবং নীরদ মজুমদার তৎকালীন পূর্ববঙ্গে গিয়েছিলেন। চিত্তবাবু ওখানে রাজনৈতিকভাবেও বিশেষ প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন মূলত তার ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। সংসদের সদস্যও হয়েছিলেন।ডাঃ বৈদ্য এতটা পারেননি। পরবর্তীকালে দু’জনের মধ্যে বিরোধও হয়। ডাঃ বৈদ্য ভারত সরকারের সমর্থন হারান। কিন্তু মুজিব সরকারের ওপর প্রভাব খাটাবার জন্য চিত্ত ছুতারকে ভারত সরকার চিরকালই ব্যবহার করেছে। এখনও ভারত সরকারের তরফে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন চিত্তবাবু। অনেকেই বলে, তাঁর সোভিয়েত কানেকশন নাকি প্রবল। চিত্তবাবু ভবানীপুরের রাজেন্দ্র রোডের বিশাল বাড়িতে সপরিবারে অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। কোথা থেকে আসে ঐ টাকা? ভারত সরকার কেন তাকে জামাই আদরে পুষছেন? তার বসতবাড়িটাও দুর্ভেদ্যও। পাহারা দেন বেশকিছু শক্ত সমর্থ যুবক। যারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ করত। বনগাঁ লাইনে ‘বঙ্গভূমি’ সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার যে, ঐ বাড়িটাই ‘বঙ্গসেনা’র ঘাঁটি। ভারত সরকারের মদদের আরও প্রমাণ, রাজীব গান্ধীর বিবৃতি। তিনি একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে হিন্দুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। বাড়ছে অনুপ্রবেশ। আকাশবাণী থেকেও একাধিকবার প্রচার হয়েছে। যেমন, ১৭ জানুয়ারী ‘বঙ্গভূমি’ পন্থীরা বাংলাদেশ মিশন অভিযান করলে ঐ খবর আকাশবাণী প্রচার করে। ১৮ জানুয়ারী রাজীব গান্ধী অনুপ্রবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেন।এছাড়াও বলা যায়, এতদিন ধরে বঙ্গভূমি জিগির চলছে, বারে বারে শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে লোক নিয়ে গিয়ে সীমান্তে গণ্ডগোল ছড়ানো হচ্ছে তীব্র সাম্প্রদায়িক প্রচার চালানো হচ্ছে, ‘সৈন্যবাহিনী’ ঘোষণা করছে, প্রতিবেশী দেশের এলাকা নিয়ে পাল্টা সরকার ঘোষিত হয়েছে – তবুও পুলিশ তাদের কিছু বলে না কেন? সীমান্তে সমাবেশ বা ওপারে ঢোকার চেষ্টা হলে পুলিশ তুলে নিয়ে কয়েকশ’ গজ দূরে ছেড়ে দেয়। নেতাদের গ্রেফতারও করা হয় না। ভারত সরকারের মদদ না থাকলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে গভীর যোগাযোগ না থাকলে, এটা কি সম্ভব হত?ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের কথা ডাঃ বৈদ্যও অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, “মদদ নয় প্রশ্রয় দিচ্ছে বলতে পারেন। তবে মদদ দিতেই হবে। আমরা জমি প্রস্তুত করছি’। তিনি বলেন, “আমি ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি, কিভাবে রাখছি, কার মাধ্যমে রাখছি বলব না। আমার বক্তব্য ক্রমাগতই তাদের বোঝাবার চেষ্টা করছি। সত্যিই যদি যথেষ্ট লোকজন জড় করতে পারি, তবে ভারত সরকারকে সৈন্যবাহিনী দিয়ে সাহায্য করতেই হবে। আমার একটা সরকার আছে। সৈন্যবাহিনী আছে। ভারতীয় সৈন্যবাহিনী ‘বঙ্গসেনা’ নামেই ঢুকবে বাংলাদেশে। আমরা সেই পরিস্থিতি তৈরী করার চেষ্টা করছি”। কিভাবে?বঙ্গসেনা, বিএলও, বিএলটি সবার সঙ্গে কথা বলে যা বুঝেছি সেটা এরকমঃ ‘বঙ্গভূমি’ পন্থীরা চান বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক অত্যাচার চালাক। যাতে তারা দলে দলে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে শুরু করে। শরণার্থীদের বোঝা বইতে হবে ভারত সরকারকে। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের হস্তক্ষেপ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশে ঢাকাসহ বিভিন্ন বড় বড় শহরে কিছু অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের আরও একটা ইচ্ছা, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগুক, ব্যাপক হিন্দু নিধন হোক, যাতে এদেশের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সেন্টিমেন্টকে খুশী করার জন্য ভারত সরকার হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।‘বঙ্গভূমি’র ফেরিওয়ালাদের স্পষ্ট বক্তব্যঃ ভারত সরকারকে বেছে নিতে হবে দু’টোর একটা। তারা দেড় কোটি হিন্দু শরণার্থীর দায়িত্ব নেবেন, নাকি ‘স্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র’ ‘বঙ্গভূমি’ তৈরী করে দেবেন, যে বঙ্গভূমি একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সিকিমের মত ভারতের অঙ্গরাজ্যে রূপান্তরিত হবে?

"তথ্যসূত্র :

1. কালীদাস বৈদ্যের বই এবং আমাদের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে, দৈনিক ইনকিলাব, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ঈসায়ী

2. Hindu republic 'born' in Bangladesh, THE TIMES OF INDIA, Feb 4, 2003

3.স্বাধীন বঙ্গভূমি, (কোলকাতার) দৈনিক আজকাল, ১৯৮৯ সালের ২২, ২৩ ও ২৪শে এপ্রিল (৩টি ধারাবাহিক রিপোর্ট)

4. আবুল আসাদ / একশ' বছরের রাজনীতি ॥ [ বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি - মে, ২০১৪ । ]

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

লুটপাটের ছোট্ট একটু ধারণা...

ভারতের সাবেক মন্ত্রী, , জাতিসংঘের সাবেক কূটনৈতিক এবং লেখক শশী থারুর ‘এন এরা অব ডার্কনেস (২০১৬)’ নামে একটি বই লিখেছেন। বইখানা পরে থেকে ‘ইনগ্লোরিয়াস এম্পায়ার—হোয়াট দি ব্রিটিশ ডিড টু (২০১৭)’ নামে প্রকাশিত হয়। তাঁর মতে, ভারতবর্ষ শাসনকালে ব্রিটিশরা যা করেছিল তা রীতিমতো দানবীয় অপরাধ। ব্রিটিশরা আসার আগে এখানকার অর্থনীতির আয়তন বিশ্ব অর্থনীতির মোট ২৩ শতাংশ ছিল। ব্রিটিশরা এখান থেকে যাওয়ার সময় যার পরিমাণ ৪ শতাংশে নেমে এসেছিল। ব্রিটিশরা ভারতে আসার আগে বিশ্বের বস্ত্রশিল্পের মোট ২৭ শতাংশ হতো ভারত থেকে, যা ব্রিটিশ শাসনের সময়কালে ২ শতাংশে নেমে গিয়েছিল। ব্রিটিশ শাসন আমলে তাদের নীতি প্ররোচিত প্রায় ১৫ থেকে ২৯ মিলিয়ন ভারতীয় মারা গেছেন।

শশী থারুর আরও লিখেছেন, ব্রিটিশরা উপমহাদেশে রেলের প্রচলন করেছিল তাদের লাভের জন্য। ভারতের লাভের জন্য নয়। ১৮৪৩ সালে গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ এবং পরে ১৮৫৩ সালে লর্ড ডালহৌসি এই যুক্তি দেখান যে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত করতে পারলে ভারতে ব্রিটিশ পণ্যের প্রবেশ ও বাজারজাত সহজ হবে। সেই সঙ্গে ভারতবর্ষ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে ব্রিটেনের শিল্পকারখানাগুলোতে পাঠানো যাবে। এই রেললাইন নির্মাণেও ছিল চুরি ও লুণ্ঠন। বার্ষিক ৫ শতাংশ নিশ্চিত লাভে রেললাইন তৈরির প্রকল্পে টাকা খাটিয়ে ব্রিটিশ মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা প্রচুর অর্থের মালিক হন। সেই সময় ভারতে প্রতি মাইল নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১৮ হাজার পাউন্ড। অথচ আমেরিকাতে তখন প্রতি মাইল নির্মাণে খরচ হয়েছিল ২ হাজার পাউন্ড।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া থেকে গত বছর প্রকাশিত ভারতীয় অর্থনীতিবিদ উষা পাটনায়েকের গবেষণায় দেখা যায় যে ১৭৬৫ থেকে ১৯৩৮ সালের মধ্যে ব্রিটিশরা আত্মসাৎ করেছে প্রায় ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার। আর এই অর্থ পাচার হয়েছিল বাণিজ্যের আড়ালে। অর্থের এই অঙ্ক বর্তমানে ব্রিটেনের মোট জিডিপির ১৭ গুণ বেশি। ব্রিটিশ শাসনামলে ভারতীয়দের মাথাপিছু আয় বাড়েনি বরং কমে গিয়েছিল। ১৮৭০ থেকে ১৯২০ সালের মধ্যে ভারতীয়দের গড় আয়ুকাল কমে গিয়েছিল এক–পঞ্চমাংশ।

তারা যখন শোষণের কারণে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়েছে তখন খুবই নিষ্ঠুর আচরণ করেছে। লাখ লাখ মানুষ করেছে। আসলে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সৃষ্টি হয়েছিল নিজ দেশ ব্রিটেনকে সমৃদ্ধ করার জন্য। কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নয়। তাই দেশগুলোকে লুণ্ঠন, অত্যাচার, বর্ণবাদ, দাসপ্রথা, নিপীড়ন, শোষণ, ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ী, ব্যক্তিগত লোভ–লালসা, জাতিগত বিভেদ এসব অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হয়েছে।

আবার শশী থারুরের কথায় ফিরে আসি। তিনি মনে করেন, ব্রিটেনের উপনিবেশবাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য তাদের (ব্রিটেন) উপমহাদেশকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত। তিনি মূলত কোনো আর্থিক ক্ষতিপূরণের কথা বলেননি। তাঁর দাবি, ব্রিটেনের উচিত তার অতীতের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাওয়া। তিনি এটাও মনে করেন, বর্তমান ব্রিটেন তার অতীতের কৃতকর্মের জন্য দায়ী নয়। তাই তাঁর মতে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি বর্তমান ব্রিটেন নীতিগতভাবে মেনে নিলেই যথেষ্ট।

সাম্রাজ্যবাদের জন্য ব্রিটেনের এই ক্ষমা চাওয়ার দাবি অনেক পুরোনো। কিন্তু ব্রিটেন বরাবরই তা উপেক্ষা করে এসেছে। ২০১৩ সালে ব্রিটিশ ডেভিড ক্যামেরন অমৃতসার গণহত্যার স্থান পরিদর্শনকালে ব্রিটিশদের হুকুমে হাজারো ভারতীয় হত্যার বিষয়টিকে তিনি লজ্জাজনক ঘটনা বলে অভিহিত করলেও চাওয়ার বিষয়টি তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।

চ্যান্সেলর থাকাকালে আরেক সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেছিলেন, ব্রিটেনের উপনিবেশবাদের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দরকার নেই। বরং ব্রিটেনের উচিত স্বাধীনতা এবং সহনশীলতার বিষয়ে ব্রিটিশ মূল্যবোধের বিষয়টিকে প্রচার করা। আবার অনেকেই বলেন , কাল ও পাত্রভেদে সব সাম্রাজ্যবাদের ধরন একই। ব্রিটিশরাও ৪০০ বছর রোমান দ্বারা শাসিত হয়েছে। তাই বলে তারা রোমানদের কাছে এই রকম কিছু দাবি করেনি।

রাশিয়ান লিও তলস্তয় একবার মাহাত্মা গান্ধীকে দেওয়া একটি চিঠিতে আমাদের এই উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তিনি ভেবে অবাক হন যে কীভাবে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে এসে লুটপাট আর শোষণে জড়িয়ে গেল। তিনি আরও লিখেছিলেন, এটি হয়তো সম্ভব হয়েছে মানবতার মধ্যে নিহিত ভালোবাসাকে সম্পূর্ণভাবে হৃদয়ঙ্গম না করার কারণে। হয়তো বিষয়টি সেটাই। খোদ ব্রিটেনের সাধারণ জনগণ বা এখনকার সাধারণ জনগণ উপনিবেশবাদের সঠিক ইতিহাস জানলে বিষয়টি হয়তো সানন্দে গ্রহণ করবে না।

(-২১ সালে প্রকাশিত একটি আর্টিকেল হতে সংগৃহীত।)

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

ইরাক-কুয়েত যুদ্ধের ছয় মাসের মাথায় মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনী কাছে যখন ইরাকের নিশ্চিত তখন ইরাকের সৈন্যরা স্বদেশে ফেরত যাচ্ছিল। ঠিক এই সময় ঘটে ইতিহাসের অন্যতম । কিন্তু মহলে এই যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে তেমন উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি।

১৯৯০ সালের ২ আগস্ট ইরাক তার প্রতিবেশী দেশ করে। ধরনা করা হয় কুয়েতের শাসকরা ঋণ মওকুফ করতে অস্বীকৃতি বা কুয়েতের অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস এর মতো ঘটনা গুলো পছন্দ হয় নি সাদ্দাম হুসেইনের। এর ফলশ্রুতিতে আক্রমের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো। হাইওয়ে এইট্টি (Highway 80) পথ ধরে ইরাকের সৈন্যরা কুয়েত আক্রমণের কয়েকদিনের মাথায় কুয়েতের পতন ঘটে। কুয়েতের রাজপরিবারের সদস্যরা আরবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হলেও ইরাক এটিকে কর্ণপাত করে নি। কর্তৃক ইরাকের প্রত্যাহার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয় কিন্তু এতেও অস্বীকৃতি জানায় ইরাক।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইরাকি বাহিনীকে উৎখাত করতে ‘যেকোনো পদক্ষেপ’ গ্রহণ করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এরপরই মূলত ন্যাটোর ইরাকি দখলদার বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়, শুরু হয় ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’। যুদ্ধের শেষ দিকে যখন ইরাকের পরাজয় নিশ্চিত তখন ইরাকের বাহিনী পশ্চাদপসরণ শুরু করে। হাইওয়ে এইট্টি এর পথ ধরেই ফিরে আসতে শুরু করে তারা। এই পথে ওঁৎ পেতে থাকা মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী ইরাকের দীর্ঘ গাড়িবহরের উপর হামলা শুরু করে। শুরুর ও শেষের যানবাহনগুলোর উপর বোমাবর্ষণ করায় মধ্যের যানবাহন গুলোর জন্য আর পথ ছিল না।

এরপরে প্রায় দশ ঘন্টা ধরে চলে অবিরাম বোমাবর্ষণ। প্রায় ১০ হাজারের মতো সেনার মৃত্যু ও সাড়ে তিন হাজার গাড়ি ধ্বংসের পর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় পুরো রাস্তা। মার্কিন জোটের এই সুস্পষ্ট ‘যুদ্ধাপরাধ’ কারণ ইরাকি সেনাবাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে স্বদেশে ফিরছিল। কিন্তু এই নিয়ে কখনোই উচ্চবাক্য শোনা যায় নি আন্তর্জাতিক মহলে। তাহলে কি পশ্চিমাদের সব অপরাধের কোন বিচার নেই???

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

এক স্বর্ণকারের মৃত্যুর পর তার পরিবারটা বেশ সংকটে পড়ে গেলো। খাদ্য-বস্ত্রে দেখা দিল চরম অভাব।

বিধবা স্ত্রী তার বড় ছেলেকে একটা হীরের হার দিয়ে বললো--এটা তোমার কাকার দোকানে নিয়ে যাও সে যেন এটা বেচে কিছু টাকার ব্যবস্থা করে দেয়

ছেলেটা হারটি নিয়ে কাকার কাছে গেল। কাকা হারটা ভালো করে করে বললো- বেটা, তোমার মাকে গিয়ে বলবে যে এখন বাজার খুবই মন্দা, কয়েকদিন পর বিক্রি করলে ভাল দাম পাওয়া যাবে। কাকা কিছু টাকা ছেলেটিকে দিয়ে বললেন--আপাতত এটা নিয়ে যাও আর কাল থেকে তুমি প্রতিদিন দোকানে আসবে আমি কোন ১দিন ভাল খদ্দোর পেলেই যেন তুমি দৌড়ে হার নিয়ে আসতে পার তাই সারাদিন থাকবে।

পরের দিন থেকে ছেলেটা রোজ দোকানে যেতে লাগলো।সময়ের সাথে সাথে সেখানে সোনা-রুপা- কাজ শিখতে আরম্ভ করলো।

ভাল শিক্ষার ফলে অল্প দিনেই খুব নামি জহুরত বনে গেল। দূর দূরান্ত থেকে লোক তার কাছে সোনাদানা বানাতে ও পরীক্ষা করাতে আসত। খুবই প্রসংশীত হচ্ছিল তার কাজ।

একদিন ছেলেটির কাকা বললো-- তোমার মাকে গিয়ে বলবে যে এখন বাজারের অবস্থা বেশ ভালো, তাই সেই হারটা যেন তোমার হাতে দিয়ে দেন। এখন এটা বিক্রি করলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।

ছেলেটি ঘরে গিয়ে মায়ের কাছ থেকে হারটি নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলো যে এটা একটা নকল হীরের হার। তাই সে হারটা আর কাকার কাছে না নিয়ে বাড়িতেই. রেখে দিলো।

জিজ্ঞেস করলো-- হারটি এনেছো ?ছেলেটি বললো-- না কাকা পরীক্ষা করে দেখলাম এটা একটা নকল হার।

তখন কাকা বললো- তুমি যেদিন আমার কাছে হারটি প্রথম নিয়ে এসেছিলে সেদিন আমি দেখেই বুঝে নিয়েছিলাম যে এটা নকল, কিন্তু তখন যদি আমি তোমাকে এই কথাটা বলে দিতাম, তাহলে তোমরা হয়তো ভাবতে যে আজ আমাদের মন্দা বলেই কাকা আমাদের আসল জিনিষকে নকল বলছে।

আজ যখন এ ব্যাপারে তোমার পুরো জ্ঞান হয়ে গেছে, তখন তুমি নিজেই বলছো এটা নকল হার।

এই দুনিয়াতে প্রকৃত ছাড়া তুমি যা কিছু দেখছো যা কিছু ভাবছো সবটাই এই হারের মতই , মিথ্যে।

জ্ঞান ছাড়া কোন জিনিসের সম্ভব নয়। আর এই ভ্রমের শিকার হয়েই অনেক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। তোমাদের সাথে আমার সেই সম্পর্কটা নষ্ট হোক আমি তা চাইনি।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

১৩৫০ বঙ্গাব্দে ( খ্রি. ১৯৪৩) এই হয়েছিল বলে একে 'পঞ্চাশের মন্বন্তর' বলা হয়। বিশেষ করে দুই বাংলায় দুর্ভিক্ষের করাল থাবা ছিল সবচেয়ে করুণ। এই করুণ পরিণতির জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলকে সরাসরি দায়ী করা হয়েছে একটি নতুন বইয়ে। সিক্রেট ওয়ার শীর্ষক বইটি লিখেছেন ভারতীয় লেখিকা মধুশ্রী মুখার্জি। বইটিতে লেখিকা এই দুর্ভিক্ষকে মানবসৃষ্ট বলে নিন্দা করেছেন। চার্চিলের বিরুদ্ধে বইটিতে তিনি অভিযোগ তোলেন, এই দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির পেছনে বর্ণবৈষম্যও তাকে কিছুটা উসকে দিয়েছে। জাপান প্রতিবেশী দেশ (তৎকালীন বার্মা) দখল করে নেওয়ার পর তেতাল্লিশের মন্বন্তর শুরু হয়। ওই সময় ছিল চাল আমদানির বড় উৎস। এই মন্বন্তরে বাংলাজুড়ে প্রায় ৩০ লক্ষ লোক না খেয়ে মারা যান। ভারতবর্ষের তৎকালীন ঔপনিবেশিক নিয়োজিত কর্মীদের জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য মজুদ করায় এই দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। মজুদ করার কারণে হু হু করে বেড়ে যায় চালের দাম। একই সঙ্গে বাজারে তা দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। জাপান ভারত দখল করলে খাদ্য যাতে শত্রুর হাতে না পৌঁছায়, এ জন্য ব্রিটিশ সরকার আগাম কিছু ব্যবস্থা নেয়। বাংলাজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ও গরুর গাড়ি হয় বাজেয়াপ্ত—নয় তো করে ফেলে তারা। এতে চাল বা খাদ্য বিতরণ-ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ে। বাঙালির প্রধান খাবার চালের আকাল দেখা দেওয়ায় ভাতের জন্য সারা বাংলায় হাহাকার পড়ে যায়। গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে দুর্ভিক্ষ। পথে-প্রান্তরে লুটিয়ে পড়তে থাকেন না খাওয়া মানুষ। এখানে-ওখানে পড়ে থাকতে দেখা যায় হাড্ডিসার । এ সময় জরুরি খাদ্য সরবরাহের জন্য চার্চিলের কাছে আবেদন করেও বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন ভারতের তৎকালীন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। বিভিন্ন থেকে তখন বুভুক্ষু হাজার হাজার মানুষ একমুঠো অন্নের আশায় স্রোতের মতো ধাই করেছেন কলকাতার দিকে। দেখা গেছে, এসব অভাগা দলে দলে পথের ওপর পড়ে ধুঁকছেন আর আবর্জনার পাশে উচ্ছিষ্টে ভাগ বসাতে পরস্পর লড়ছেন। একই সময় ব্রিটিশ কর্মকর্তা এবং তাদের তোষামুদে অবস্থাপন্ন ভারতীয় বাড়িতে বসে ভূরিভোজ করছেন। মধুশ্রী মুখার্জির মতে, ব্রিটিশরাজের শাসনামলের এই অন্ধকারতম অধ্যায়টি এত দিন ছিল আড়ালে পড়ে। তিনি তা আলোতে নিয়ে এসেছেন। মধুশ্রী তার বইয়ে এমন সব তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরেছেন, এতে ওই দুর্ভিক্ষের দায়ভার সরাসরি চার্চিলের ওপর চেপেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মন্ত্রিসভার যেসব বৈঠক হয়েছে, এসব বৈঠকের বিশ্লেষণ রয়েছে বইয়ে। রয়েছে মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন নথিপত্রের তথ্য। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মধুশ্রীর ব্যক্তিগত সংগ্রহশালার তথ্য। এসব তথ্যপ্রমাণ থেকে জানা যায়, চালে ঠাসা ব্রিটিশ জাহাজগুলো থেকে এসে ভারতের পাশ দিয়ে চলে গেছে ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার দিকে। ওই এলাকায় খাদ্যশস্যের বিশাল মজুদ গড়ে তোলা হয়। এক সাক্ষাৎকারে মধুশ্রী মুখার্জি সাংবাদিকদের বলেন, চার্চিল যে ত্রাণ-সহায়তাদানে অক্ষম ছিলেন, এ প্রশ্নই ওঠে না। তিনি ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্ররা বারবার এ ধরনের ব্যর্থ করে দিয়েছেন। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া সহায়তার হাত বাড়াতে চেয়েছিল, কিন্তু চার্চিলের মন্ত্রিসভা তা মেনে নেয়নি। এমনকি এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজের জাহাজে করে খাদ্য পাঠাতে চেয়েছে, ব্রিটিশ শাসক তাও গ্রহণ করেননি। জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এই দুর্ভিক্ষের পেছনে প্রাকৃতিক কারণ খুঁজে পায়নি ভারতীয় ও মার্কিন গবেষকদের একটি দল। অর্থাৎ এই দুর্ভিক্ষের জন্য আবহাওয়া নয় বরং তৎকালীন বৃটিশ উইনস্টন চার্চিলের অমানবিক নীতিই দায়ী ছিলো।

সূত্র :

* পঞ্চাশের মন্বন্তের চার্চিলের ষড়যন্ত্র - মধুশ্রী মুখোপাধ্যায়

* দৈনিক মানবজমিন, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ঈসায়ী।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

যে বাংলাদেশি পাইলট ইসরায়েলের ৪ টি বিমান ধ্বংস করেছিলেন!!

সাইফুল আজম ১৯৪১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার (বর্তমান বাংলাদেশ) জেলার খগড়বাড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নুরুল আমিন। বাবার কর্মসূত্রে তাঁর ছোটবেলা কেটেছিল ভারতের কলকাতায়। ১৯৪৭ সালের ভাগের সময় তার পরিবার ফিরে আসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ)। ১৫ বছর বয়সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে, ১৯৫৬ সালে উচ্চতর শিক্ষার জন্য পশ্চিম পাকিস্তান যান। ১৯৫৮ সালে তিনি ভর্তি হন পাকিস্তান এয়ার ফোর্স ক্যাডেট কলেজে। দুই বছর পর ১৯৬০ সালে তিনি পাইলট অফিসার হয়ে শিক্ষা সম্পন্ন করেন। একই বছর তিনি জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হয়ে যোগ দেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে।

সাইফুল আজমের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ হয় মার্কিন সেনাদের প্রশিক্ষণ বিমান সেসনা টি-৩৭ বিমান দিয়ে। প্রশিক্ষণ ও অ্যারিজোনার লুক এয়ার ফোর্স বেসে এফ-৮৬ সেব্রেসের উপর উচ্চ প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন। এই কোর্সে তিনি সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে টপ গান হিসেবে পাশ করেন। আরও পড়াশোনার পর ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ঢাকার কেন্দ্রে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি করাচির মৌরিপুর বর্তমানে যা মাশরুর এয়ার বেস এর টি-৩৩ বিমানের প্রশিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন। এখানে কর্মরত থাকার সময় ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সাইফুল আজম পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের হয়ে যোগ দেন। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ফ্লাইট অফিসার বিজয় মায়াদেবের বিমানকে তিনি ভূপাতিত করেন। পরে বিজয় মায়াদেবকে হিসেবে আটক করা হয়। ফলে তাকে পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক সিতারা–ই–জুরাত(সাহসিকতার তারকা) প্রদান করা হয়। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ২য় স্কোয়াড্রনের কমান্ড লাভ করেন।

১৯৬৬ সালের নভেম্বর মাসে জর্দানের বিমানবাহিনী রয়্যাল জর্দানিয়ান এয়ার ফোর্সে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে যান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সাইফুল আজম। প্রতিনিধি পাঠানো দুজন পাকিস্তানি অফিসারের মধ্যে তিনি একজন ছিলেন। অন্যজন ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট এম. সরোয়ার শাদ। সেখানে তিনি জর্দানের বিমানবাহিনীতে উপদেষ্টা হিসেবে পাইলটদের প্রশিক্ষণের কাজ করেন।

১৯৬৭ সালের ৫ জুন তৃতীয় আরব-ইসরায়েলি ছয়দিনের যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী বোমাবর্ষণ করে মিশরীয় বিমান বাহিনীর সব বিমান অচল করে দেয়। বিমান বাহিনীর হামলা থেকে জর্দানের মূল বেস মাফরাকের প্রতিরক্ষার জন্য তাকে ডাকা হয়। সেসময় জর্দান বিমানবাহিনীর হয়ে সাইফুল আজম হকার হান্টার বিমান নিয়ে ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর আক্রমণের আগমূহুর্তে জর্দানের বিমান বাহিনীর পক্ষে উড্ডয়ন করেন। তিনি অসামান্য এবং সাহসিকতার দৃষ্টান্ত রেখে তার বিমানের চেয়ে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির দুইটি ইসরায়েলি মিরাজ ফাইটার বিমান ভূপাতিত করেন।

দুইদিন পর তাকে ইরাকে জরুরি ভিত্তিতে বদলি করে পাঠানো হয়। তিনি ইরাকি বিমান বাহিনীর হয়ে ইসরায়েলি ফাইটারের মোকাবেলা করেন এবং ডগ ফাইটে একটি ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করেন। আক্রমণের সময় তিনি পশ্চিম ইরাকে ছিলেন। ইসরায়েলি পাইলট ক্যাপ্টেন গিডিওন ড্রোর সাইফুল আজমের উইংমেনসহ দুজন ইরাকি যোদ্ধাকে গুলি করতে সক্ষম হন, এর বিপরীতে সাইফুল আজম তাকে গুলি করতে সক্ষম হন। তিনি ক্যাপ্টেন গোলানের বোমারু বিমানকেও ভূপাতিত করতে সক্ষম হন। পরে দুই ইসরায়েলি বৈমানিককে যুদ্ধবন্দী হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয়।

এটি একটি রেকর্ড। দুই দিনের ব্যপ্তিতে তিনি দুইটি ভিন্ন স্থানে আক্রমণ পরিচালনা করে ৪টি ইসরায়েলি ভূপাতিত করেন। এজন্য তাকে জর্দানের অর্ডার অব ইস্তিকলাল ও ইরাকি সাহসিকতা পদক নুত আল সুজাত প্রদান করা হয়।

১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তানে ফিরে আসেন। পাকিস্তানে ফেরার পর ১৯৬৯ সালে শেনিয়াং এফ-৬ জঙ্গি বিমানের ফ্লাইট কমান্ডার হন সাইফুল আজম । এরপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ফাইটার লিডারস স্কুল-এর ফ্লাইট কমান্ডারের দায়িত্ব নেন তিনি।

সাইফুল আজম ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের প্রশিক্ষক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগ পর্যন্ত সময় ফ্লাইট কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হবার আগেই আজম নিজেও পাকিস্তান এয়ারলাইন্স ও বিমান বাহিনীতে তার সহকর্মী বাঙালিদের সাথে গোপনে পরিকল্পনা করছিলেন করাচি থেকে পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের একটি জেটবিমান ছিনতাই করার। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চের ৬ তারিখেই তিনি তার ও সন্তানকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকায়। পরবর্তীতে সে আর সফল করতে পারেন নি।

১৯৭১ সালে সাইফুল আজম মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের শুরুতেই তাঁর ওপর পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে সাময়িকভাবে উড্ডয়নে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। রহমানের টি-৩৩ জঙ্গী বিমান নিয়ে পালিয়ে যাবার সময় মতিউর শহীদ হবার পর পাকিস্তানের সংস্থা সাইফুল আজমকে রিমান্ডে নেয় এবং টানা ২১ দিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মতিউর রহমানের মৃত্যুর পরপর তাকে তার ব্যাচমেট পাকিস্তানি অফিসার সেসিল চৌধুরী করে নিয়ে যান এবং ১৯৭২ সাল পর্যন্ত অজ্ঞাত স্থানে বন্দি করে রাখেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৭৭ সালে উইং পদে উন্নীত হন। তাকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঢাকা ঘাঁটির অধিনায়ক করা হয়েছিল। বিমান বাহিনীতে ডিরেক্টর অব সেফটি ও ডিরেক্টর অব অপারেশন্স হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি ঢাকা বিমানঘাঁটির কমান্ড লাভ করেন এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি পান। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন তিনি

তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৪ এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ক্যাব) চেয়ারম্যান হিসেবে দুইবার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের (এফডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়াও তিনি নাতাশা ট্রেডিং এজেন্সির ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে ও নিজ স্ত্রীর সাথে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে ব্যবসায় যোগ দেন।

সাইফুল আজম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে রাজনীতি করতেন। তিনি পাবনা-৩ আসন থেকে (চাটমোহর উপজেলা, ফরিদপুর উপজেলা ও ভাঙ্গুরা উপজেলা) পঞ্চম ও ষষ্ঠ জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল ফখরুল আজম (মেয়াদ ২০০২-২০০৭) সম্পর্কে তাঁর চাচাত ভাই ছিলেন। সাইফুল আজম নিশাত আজমকে বিবাহ করেন। নিশাত আজম একজন আইনজীবী। তাঁদের পুত্র এবং কন্যা সন্তান ছিলো।

সাইফুল আজম ২০২০ সালের ১৪ই জুন দুপুর ১টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকায় (সিএমএইচ) মৃত্যুবরণ করেন। ১৫ জুন ২০২০, সোমবার দুপুর পৌনে ২টায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার এর প্যারেড গ্রাউন্ডে (বিগটপ হ্যাঙ্গার) সাইফুল আজমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শাহীন কবরস্থানে তার মরদেহ সমাহিত করা হয় এবং একটি যুদ্ধবিমানের ফ্লাইপাস্ট আয়োজন করা হয়।

কৃতিত্বঃ
সাইফুল আজম একমাত্র পাইলট, যিনি যুদ্ধে চারটি বিমান বাহিনীর (বাংলাদেশ, জর্দান, ইরাক ও পাকিস্তান) হয়ে কাজ করেছেন। সেই সঙ্গে দুইটি ভিন্ন প্রতিপক্ষের (ভারত ও ইসরায়েল) বিরুদ্ধে লড়াই করার অনন্য কৃতিত্ব রয়েছে তার। ২০১২ সালে পাকিস্তান সরকারের মতে যেকোনো পাইলটের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলি ভূপাতিত করার রেকর্ড তার রয়েছে। তিনি মোট চারটি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেন, যা এখন পর্যন্ত যেকোনো পাইলটের জন্য সর্বোচ্চ। ১৯৬১ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার লুক বেস থেকে নেওয়ার পর মার্কিন বিমান বাহিনী সাইফুল আজমকে টপ গান উপাধি দেয়।
১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কৃতিত্বের পুরস্কার স্বরূপ পাকিস্তানের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক সিতারা–ই–জুরাত পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
একক ব্যক্তি হিসেবে আকাশপথের যুদ্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরায়েলি বিমান ভূপাতিত করার কৃতিত্ব স্বরূপ জর্দান থেকে তাকে হুসাম-ই-ইস্তিকলাল সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
১৯৬৭ সালে ছয়দিনের কৃতিত্ব স্বরূপ ইরাকি সাহসিকতা পদক নুত-আল-শুজাত পুরস্কারে ভূষিত করা হয় তাকে।
যুদ্ধক্ষেত্রে অনন্য সব অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে সাইফুল আজমকে ২০০১ সালে মার্কিন বাহিনী বিশ্বের ২২ জন লিভিং ঈগলসের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
সাইফুল আজমের আটটি দেশের আটটি পৃথক বিমান বাহিনীতে পরিচালনার প্রশংসাপত্র রয়েছে। দেশগুলো হলো, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জর্দান, ইরাক, রাশিয়া, চীন এবং বাংলাদেশ।

ফিলিস্তিনের ইতিহাসবিদ ওসামা আল-আশ্কার প্রশংসা করে বলেন, “তিনি ছিলেন একজন মহান বৈমানিক”। তিনি আরো বলেন, “জেরুজালেমের পবিত্র স্থান আল-আকসা মসজিদকে প্রতিরোধ ও রক্ষার জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ভ্রাতৃদ্বয় আমাদের অংশীদার ছিলো”। ফিলিস্তিনি অধ্যাপক নাজি শৌকরি বলেন, “সাইফুল আজম ফিলিস্তিনকে ভালোবাসতেন এবং জেরুজালেমের স্বার্থে লড়াই করেছিলেন”। খ্যাতনামা ফিলিস্তিনি তামির আল মিশাল তাকে “আকাশের ঈগল” বলে অভিহিত করেন।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

ডাক্তার বলেছেন গরুর টাটকা দুধ পান করতে 😂 😂

উসমানী শাসকদের সর্বশেষ উত্তরাধিকার খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মজিদ'র সর্বশেষ পরিণতি কি হয়েছিল?

১৯৪৪ সালের ২৩ আগস্ট ফ্রান্সের রাজধানী মৃত্যুবরণ করেন। শাসকদের সর্বশেষ খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল মজিদ। জীবনের শেষ দিনগুলোয় কষ্ট ও মনোবেদনায় ভুগে নির্বাক হয়ে পড়েছিলেন তিনি। চোখের সামনে তাঁর পূর্বসূরিদের ৬২৪ বছরের কীর্তিময় শাসনের করুণ তাঁকে প্রতিনিয়ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত করে রাখত।

মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছা ছিল, তাঁর লাশ যেন তুরস্কের কবরস্থানে করা হয়। কারণ, এই কবরস্থানে চিরশয্যায় সমাহিত হয়েছেন তাঁর পিতা সুলতান আব্দুল আজিজ,

পিতামহ সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ এবং চাচাতো ভাই সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ। থেকে নির্বাসিত হলেও অন্তত মৃত্যুর পর যেন পরিবারের পাশে নিজের জন্মভূমিতে তাঁর শেষ স্থন হয়, এটা ছিল তাঁর জীবনের শেষ চাওয়া।

পিতার মৃত্যু ব্যথিত করে তোলে দুররে শাহওয়ারকে। বাবার শেষ স্বপ্ন পূরণে তিনি ছুটে যান তুরস্কে, অনেক বছর আগে মাত্র ১০ বছর বয়সে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল যে থেকে। তুরস্কের তৎকালীন ইসমত ইতুনুকে দুররে শাহওয়ার অনুরোধ করেন, তাঁর মরহুম পিতা এবং উসমানি সাম্রাজ্যের সর্বশেষ খলিফার লাশ যেন তুরস্কের মাটিতে দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।

তত দিনে অনেক বদলে গেছে তুরস্ক। শাসকদলের সদস্যদের মনে তখনো উসমানি পরিবারের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ জমে আছে। কাজেই খলিফা কন্যার এই আকুতি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী নির্দয়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। বিষণ্ণ মনে ফ্রান্সে ফিরে আসেন দুররে শাহওয়ার। পিতার প্রতি গভীর ভালোবাসার শপথ নেন দীর্ঘ প্রতীক্ষার। যে করেই হোক, পূর্বপুরুষের মাটি

তুরস্কে পিতাকে দাফন করার ইচ্ছায় অপেক্ষায় থাকেন সময়ের পালাবদ বাবার স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশায় দীর্ঘ ১০ বছর খলিফা আব্দুল মজিদের মৃতদেহ প্যারিসের একটি মসজিদে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন দুররে শাহওয়ার। ১৯৫৪ সালের ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটে তুরস্কে।

নতুন নির্বাচিত হন ডানপন্থী দলের নেতা । খবর পেয়ে দুররে শাহওয়ার আবারও ছোটেন তুরস্কের উদ্দেশে। নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাকে সবিনয় অনুরোধ করেন, তাঁর মরহুম বাবার যেন তুরস্কের মাটিতে দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়। উসমানি পরিবারের এই রাজকন্যার আকুতি শোনেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় পরিষদের সম্মতি পেলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন, আশ্বাস দেন তাঁকে।

তুরস্কের জাতীয় পরিষদে প্রস্তাব তোলা হলো সর্বশেষ উসমানি খলিফা আব্দুল মজিদের লাশ দাফনের। উসমানি পরিবারের প্রতি বিরাগভাজন কয়েকজন সদস্য এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। ফলে প্রস্তাবটি আর পাস হলো না। আধুনিক তুরস্কের সংকীর্ণতার কাছে আবারও হেরে গেলেন দুররে শাহওয়ার। খেলাফত ব্যবস্থা পতনের পর কয়েক দশক পেরিয়ে যাওয়ার পরও উসমানি পরিবারের এক খলিফার লাশ তুরস্কের মাটিতে দাফনের সুযোগ দেয়নি তুরস্কের জাতীয় পরিষদ ।

ক্ষোভে ও দুঃখে কান্নায় ভেঙে পড়েন দুররে শাহওয়ার। এই অপমান ওলাঞ্ছনা আর পিতার স্বপ্নপূরণে এক দশকের ব্যর্থতা বুকে চেপে শেষবারের মতো তুরস্ক ত্যাগ করেন দূররে শাহওয়ার।

তাঁর এমন করুণ দুঃসময়ে এগিয়ে আসেন আরবের বাদশাহ সউদ বিন আব্দুল আজিজ। পরিবারের এই মরহুম মুসলিম প্রতি সম্মান দেখিয়ে পবিত্র নগরী মদিনার জান্নাতুল বাকিতে তাঁর লাশ দাফনের অনুমতি দেন তিনি। পূর্বপুরুষদের কবরস্থানে জায়গা না পেলেও পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব নবিজির রওজা মুবারকের প্রতিবেশী হয়ে পবিত্র মাটিতে পেলেন মুসলিম জাহানের এই সর্বশেষ উসমানি । ১৯৫৪ সালের ৩০ মার্চ তাঁকে দাফন করা হয় জান্নাতুল বাকিতে।

পিতার প্রতি তুরস্কের এই অন্যায় ও প্রতিহিংসামূলক নির্দয় আচরণের প্রতিবাদে পরে সুযোগ পেয়েও আর কোনো দিন তুরস্কের জাতীয়তা ফেরত নেননি দুররে শাহওয়ার। মৃত্যু পর্যন্ত ইংল্যান্ডের জাতীয়তা নিয়ে বেঁচে ছিলেন তিনি।

লন্ডনে থাকাকালে ২০০৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে ৯২ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান ইতিহাসের সাক্ষী এই । মৃত্যুর আগে দুই পুত্রকে তিনি অসিয়ত করেছিলেন, তাঁর লাশ যেন লন্ডনের এক মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয়। গুণী ও সংগ্রামী রাজকন্যা পুররে শাহওয়ার ছিলেন চিত্রশিল্পী হওয়ার পশপাশি প্রচণ্ড মেধাবী। পৃথিবীর আটটি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা ছিল তাঁর। তাঁর একমাত্র ভাই ওমর ফারুক ১৯৬৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সমাহিত হন।

ভাবতেই অবাক লাগে, যে উসমানীয় খিলাফতের শাসকরা ৬২৪ বছর তিন মহাদেশ দাঁপিয়ে বেড়িয়েছিলেন তাদের বংশধররাই কিনা মৃত্যুর পর লাশ দাফনের জন্য তুরস্কের ভূখন্ডে সামান্য একটু জায়গা পাননি। জীবনের শেষ মুহুর্তগুলো কিনা অতিবাহিত করে গেছেন অন্যান্য মুসলিম শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে.... 😢

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে সকল বীর বাঙালি ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিয়েছেন।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

যে একটা মানি অর্ডার আসার জন্য তীর্থের কাকের মত জনতারা করত,সেটা আজ পরিত্যক্ত।

যেই ছেলে ১৩ টাকার কিনে বন্ধু'দের সামনে অহংকারের ধোঁয়া ছাড়তো...সেই ছেলে এখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মানুষের কাছে দোয়া চায়...!!

ন্যায্যমূল্যে ৫ কেজি মোটা কেনার জন্য যেই লোক'টা কাঠফাটা রৌদ্রে ২০ জনের পিছনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতো দুই-আড়াই ঘন্টা, আজ উনার বাড়ীর সামনে লোকজন লাইন ধরে বসে থাকে পেটভরে খেতে পাবে সেই আশায়...!!

মাসের ৫ তারিখের মধ্যে দিতে না পারলে,বাড়ী ছেড়ে দেয়ার হুমকি দিতেন যেই হাজীসাহেব..উনি আজকে শ্বশুরবাড়ীতে নিয়েছেন নিলামের শিকার হয়ে...!!

যে ক্লাসের সবচেয়ে অপছন্দের ছেলেটা কে অমানুষ বলে প্রতিদিন অপমান করত সেই ছেলেটাই আজকে নিয়েছে শিক্ষকের সন্তানকে মানুষ বানানোর বৈশ্বিক চ্যালেন্জের...!!

এক সময়কার নামকরা বিউটি সোপ আজ ব্যবহৃত হচ্ছে। পূর্ব পুরুষ হতে প্রজন্ম ধরে যারা আপনার বাড়িতে কাজ করে পেটের জ্বালা মিটাত তাদের সন্তানেরা আজ আপনার বংশধরদের ভিটেছাড়া করতে চায়!!

খুব'ই নির্মম,খুব'ই অমানবিক আবার মাঝে মাঝে খুব'ই রোমান্টিক! কখন কি উপহার নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে আপনার সামনে,আপনি টেরই পাবেন না...!!

সময় কখনোই স্থির নয়, সব-সময় আপনার নয়, আপনার পক্ষেও নয় আবার বিপক্ষেও নয়! সুতরাং এই সময়'কে সুযোগ দম্ভ, প্রতিশোধপরায়ন, কিংবা আনন্দিত হবার কিছুই নাই, কিংবা দাম্ভিকতারও কিছুই নাই... চিরকাল কারো সমান নাহি যায়। আপনার এই কষ্টের সময়ও ফুরিয়ে যাবে । শুধু ধৈর্য্য দরে সময়ের সৎ ব্যবহার করে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে পরিশ্রম করাই আমাদের কাজ।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

কুমিল্লার গুনবতী বাজারের ব্যবসায়ী মরহুম আমীর হোসেন সওদাগরের হচ্ছে।

জানাজাতে উপস্থিত মুসল্লীদের পিছনে বিমর্ষ হয়ে বসে থাকা এই ব্যক্তির নাম সুধীর বাবু।

মৃত আমীর সওদাগর এবং সুধীর বাবু ছোট বেলার বন্ধু। গুনবতী বাজারে দীর্ঘ বছর একসাথে - বানিজ্য করে আসছেন উনারা।

আজ সেই বন্ধুর মৃত্যুর পর সুধীর বাবু জানাজার পিছনে উপস্থিত হয়ে ঝরাচ্ছেন।

সত্যিকারের আসলেই এমন হয়।

যে বন্ধুত্ব দেখে না, দেখে না,ধনী-গরিবের ভেদাভেদ চিনে না।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

America will not give visas to Bangladeshis involved in vote robbery in the next election.

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

চরম দুর্ভাগ্যকে সাথে নিয়ে জম্মেছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন । অপরিমিত ঐশ্বর্য আর বিলাসে কাটে তাঁর বাল্যজীবন। সিরাজ ছিলেন চরম বিদ্বেষী। আর তাই ইংরেজ সরকারি কর্মী আর ঐতিহাসিকরা এই মানুষটিকে নারীলোলুপ এক অপরিনত নৃশংস দানবিক চরিত্রে পরিনত করেছিলেন। যার সাথে দেশীয় ঐতিহাসিকরাও গলা মেলান।

অন্ধকুপ হত্যার মত মিথ্যাচার নির্দ্বিধায় প্রচার করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। সাম্প্রদায়িক, সাম্রাজ্যবাদী এবং মুসলমান বিদ্বেষী ইংরেজ, মার্সম্যানের 'বাংলার ইতিহাস 'হুবহু অনুবাদ করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র। বই অনুদিত হওয়ার সাথে সাথে তা পাঠ্যপুস্তক হিসাবে নির্বাচিত হয়। বছরের পর বছর বিদ্যাসাগরের ছাপাখানায় ছেপে সারা বাংলার স্কুলে পাঠ্যপুস্তক হিসাবে পঠিত হয়। বাংলার সরলমতী ছাত্র ছাত্রীরা মিথ্যা এবং বিকৃত ইতিহাস পড়ে সিরাজ এবং বাংলাকে জানে।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় ১৮৯৭ খ্রীস্টাব্দে, পলাশীর অন্যায় যুদ্ধের প্রায় ১৫০ বছর পরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে অন্ধকারের কালিকামুক্ত করেন।

বিদ্যাসাগরের লাইব্রেরিতে যথেষ্ট বই মজুত ছিল যার ভিত্তিতে সিরাজের বিরুদ্ধে বৃটিশ অপপ্রচারের জবাবী লিখতে পারতেন বিদ্যাসাগর। কিন্তু তার সে দায় ছিল না। তার আনুগত্য ছিল সাম্রাজ্যবাদের প্রতি আর নজর ছিল পুস্তক ব্যবসার মাধ্যমে অর্থউপার্জন। হোকনা তা মিথ্যা ইতিহাস প্রচার।

অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয়ের 'সিরাজদ্দৌলা' একটি ব্যতিক্রমী ইতিহাস। সিরাজের প্রতি অন্যায়ের বাঙালীর প্রথম পাপস্খলনে'র প্রয়াস। একটি অবশ্যপাঠ্য পুস্তক।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:


বীর্য স্খলনের পর যদি মানুষটাকে অসহ্য লাগা শুরু হয়, তাহলে আপনি কামুক, এখনো হয়ে উঠতে পারেননি!

প্রেমিক হলে, মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বিপরীত মানুষটার নিদ্রা পর্যন্ত করতেন।

একটা বয়সে আমরা প্রেমের পাশাপাশি শরীরটাকেও ভীষন ভাবে প্রত্যাশা করি!

আবার একটা সময় পাশাপাশি আমাদের প্রেমটাও ভীষন প্রয়োজন হয়!

নগ্ন দেহে কোন মুগ্ধতা নেই!

মুগ্ধতা পাওয়া যায় প্রেমিকার চুলে, গালের টোলে, কপালের টিপে, চোখের কাজলে!

মানে "তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে ২৫৬ বার মরে যাওয়া যায়"!

প্রেম মানে "তুমি ঘুমাও, আমি একটা আস্ত রাত জেগে থেকে তোমাকে দেখি"!

ভালোবাসার জন্য আপনি শরীরকে অস্বীকার করতে পারবেন না, তাহলে শরীরের জন্য কিভাবে ভালোবাসাকে অস্বীকার করেন!

ভালোবাসায় শরীর আসবেই, তবে শরীরেও যাতে ভালোবাসা আসে। আমরা হৃদপিন্ডের গভীরতা অনুসন্ধান করতে শিখিনি!

একটা রাত কাপড় খুলে শুয়ে না থেকে, মানুষটার হাত ধরে বসে থেকে দেখুন!

দু চারটা সুখ-দুঃখের কথা শুনুন! বিপরীত মানুষটাকে একটু সময় দিন!

মানুষটার বুকের ভেতর আপনার জন্য একটু আসুক!

মুগ্ধতাহীনতায় আক্রান্ত হৃদপিন্ড একসময় আপনার লং টাইম ডিউরেশনাল যৌনতার প্রতিও আর আগ্রহবোধ করবে না!

যার প্রতি প্রেম থাকে না, তার জন্য কাম ও জাগে না!

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

কাজী নজরুল ইসলামের, পুত্র বধূ উমা কাজী ❤️

বিদ্রোহী কবি সেবিকার যত্নে, মায়ের স্নেহে আগলে রেখেছিলেন যিনি, তিনি কাজী। এই ব্রাহ্মণ-কন্যাটি ছিলেন কবির পুত্র কাজী সব্যসাচীর স্ত্রী, কবি নজরুলের

“যেখানেতে দেখি যাহা;

মা-এর মতন আহা।

একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,

মায়ের মতন এত

আদর সোহাগ সে তো

আর কোনোখানে কেহ পাইবে, ভাই !”

কাজী নজরুল ইসলাম নিজের ""বাদেও আর একজন নারীর মধ্যে নিজের মাকে খোঁজে পেয়েছিলেন ! যে নারী সন্তানের মতো নির্বাক ও প্রায় স্মৃতিশক্তিহীন কবি নজরুলকে মায়ের ভালোবাসায় আবদ্ধ রেখেছিলেন। আর স্নেহ-মায়া, ভালোবাসায় দিয়ে, যে সমস্ত রকম ভেদাভেদ দূর করা যায়, তার উদাহরণ উমা কাজী এই মানুষটি!

কাজী নজরুল-এর বড় ছেলে কাজী , অর্থাৎ নজরুলের পুত্রবধূ।

আসলে, তিনি ছিলেন উমা মুখোপাধ্যায়। পরিবারের কন্যা হয়েও পরিবারের পুত্রবধূ হয়েছিলেন ! সেই অনেক বছর আগে। উমার বাবা ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং মা বাদলা মুখোপাধ্যায়। তার জন্ম বর্ধমানের কাটোয়া অঞ্চলে।

লেখাপড়া শেষ করে কলকাতার ‘লেডি ডাফরিন হাসপাতাল’ থেকে ট্রেনিং নিয়ে নার্স হয়েছিলেন উমা মুখোপাধ্যায়। থাকতেন সেখানকার নার্সিং হোস্টেলেই। ছোটকাল, থেকেই সেবিকা হতে চাইতেন তিনি। সেখানকারই এক হেড নার্স ঊষা দিদি, উমাকে এক নতুন পথের দিশা দেখান। উমাকে তিনি নিয়ে যান বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামের বাড়ীতে। কবির সেবা করার জন্য প্রয়োজন ছিল এক নার্সের। নির্বাক কবি তখন কলকাতার মানিকতলায় থাকতেন। নানা অসুস্থতায় জর্জরিত হলেও, দুই বাংলাতেই সমান্তরারালে তখন কবিকে নিয়ে কোনো অংশে উন্মাদনা কম নয়!

এমনই সময়ে কবির মাথার কাছে গিয়ে বসলেন উমা। নজরুলের স্ত্রী দেবী বলেছিলেন, “তুমি কি পারবে 'মা' কবির সেবা করতে ? ঐ যে দ্যাখো, উঁনি খবরের কাগজ ছিঁড়ছেন। উঁনি এখন শিশুর মতো।” এ প্রশ্নের উত্তরে উমা বলেছিলেন, “আমরা তো কলকাতার হাসপাতালে শিশু বিভাগেই ডিউটি করেছি। কবি যদি শিশুর মতো হন, তবে নিশ্চয়ই পারবো।”

ও স্নেহের পথ পরিক্রমায় উমাই হয়ে উঠলেন কবি নজরুলের প্রিয় মানুষ। তাঁকে স্নান করানো, খাওয়ানো, দেখ-ভাল করা, গল্প শোনানো। উমার হাতের স্পর্শ যেন কবির কাছে মায়ের আঁচলের মতো হয়ে ওঠে। কিন্তু এরই মধ্যে উমার সেবার মনোবৃত্তি দেখে, মিষ্টি ব্যবহার দেখে কবির বড় ছেলে কাজী সব্যসাচী,উমার প্রেমে পড়ে গেলেন । উমাও সব্যসাচীকে মন-প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে ফেললেন।

হল ব্রাহ্মণের মেয়ের সঙ্গে মুসলিম ছেলের। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রেখে, উমা মুসলিম পরিবারকে আপন করে নিলেন। মুসলিম ধর্মান্তরে উমা মুখোপাধ্যায় হয়ে গেলেন, উমা কাজী। কবি ও কবিপত্নী প্রমীলা নজরুলও এমন এক মেয়েকে ঘরের বৌমা হিসেবে পেয়ে খুশি হলেন। উমা মুসলিম পদবী গ্রহণ করলেও, তাঁর নামে থেকে গেল দুর্গা'র চিহ্ন।

প্রমীলাদেবী উমা বৌমাকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসতেন। এদিকে কবি নিজেও বৌমা অন্তঃপ্রাণ। বৌমা চন্দন সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে না দিলে স্নান করবেন না নজরুল, দাঁড়ি বৌমাই কেটে দেবে, খাইয়ে দেবে বৌমা। আদরের বৌমার কাছে শিশুর মতো আবদার বায়না করতেন কবি। এমনকি পরিধেয় জামাকাপড়ে নীল বোতলের আতর-সুগন্ধিও বৌমাকেই লাগিয়ে দিতে হবে।

উমা একদিকে নিজের নতুন সংসার সামলাচ্ছেন আর অন্যদিকে কবিকেও সামলাচ্ছেন। ধীরে ধীরে এল সব্যসাচী-উমার ঘরে তিন সন্তান,

- মিষ্টি কাজী,

- খিলখিল কাজী এবং

- বাবুল কাজী। তিন নাতি-নাতনি দাদা নজরুলের কাছেই থাকত বেশি সময়। কবিও তো শিশুর মতোই। সন্তানদের সঙ্গেই কবিকেও আসন পেতে বসিয়ে ভাত খাইয়ে দিতেন উমা কাজী।

পরবর্তীতে, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সুস্থ করতে দুটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়, যে বোর্ডের সদস্যদের কবির সমস্যাগুলি বুঝিয়ে দিতে যেতেন, উমা নিজেই । কিভাবে কবির ফেরানো যাবে, কথা বলানো যাবে, এ সব ভাল করে শুনে সেবার ধরণও বুঝে নিতেন উমা। পাশাপাশি স্বামীর খেয়াল রাখা থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সবটাই দেখতেন উমা কাজী।

এরি মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। শাশুড়ির সব দেখভালের দায়িত্বও নিলেন উমা কাজীই। কবির আগেই চলে গেলেন কবিপত্নী। দীর্ঘ ৩৮ বছরের সংসার জীবনের পর, ১৯৬২ সালের ৩০শে জুন মাত্র ৫২ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন প্রমীলা কাজী। তাঁকে কলকাতা থেকে চুরুলিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাজী পাহালোয়ানের দরগার পাশে কবিপত্নীকে সমাহিত করা হয়।

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর উদ্যোগে স্বপরিবারে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয়। ধানমন্ডির ২৮ নম্বর রোডে (বর্তমান নজরুল ইনস্টিটিউট সংলগ্ন) কবি ভবনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁরা বসবাস শুরু করেন। কাজী কর্মসূত্রে কলকাতায় থেকে গেলেও উমা কাজী কবিকে দেখার জন্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। ধানমণ্ডির বাড়িতে নজরুল নাতি-নাতনি নিয়ে খেলা করতেন, বাগানে ঘুরে বেড়াতেন।

কবির জন্মদিন পালন হতো বেশ বড় করে। অতিথিরা আসতেন, কবিকে সবাই মালা পরাতেন । কবি সেইসব মালা পরে খিলখিল করে হাসতেন। হারমোনিয়াম দেখিয়ে সবাইকে বলতেন গান করতে। নাতি-নাতনিরাও নজরুল সঙ্গীত গাইতেন। নির্বাক কবিই কখনও হেসে উঠতেন আবার কখনও নির্বাক হয়ে অঝোর ধারায় কেঁদে যেতেন। একটার পর একটা নিজের সৃষ্টি শুনে। সব যন্ত্রণা যেন গানে গানে ঝরে পড়ত কবির চোখের জলে।

জীবনের দিকে বিছানাতে স্থায়ী ঠিকানা হলো কবির। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতেন উমা। তিনি যে সেবিকা থেকে ততদিনে তিনি যে কবির 'মা' হয়ে গিয়েছিলেন ! তাই, তো এত কিছুর মধ্যেও এতটুকু ফাঁক-ফোঁকর পড়েনি! ছেলে-মেয়েদেরকে বড় করার বা শাশুড়ির অবর্তমানে সমগ্র সংসার সামলানোর বা কাজী সব্যসাচীর যোগ্য সহধর্মিণী হয়ে উঠার।

২৯ আগস্ট ১৯৭৬ ইং বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল হন। চির বিদায়ের শেষ সজ্জায় কবিকে সাজিয়েও দিয়েছেন উমা কাজী। তিন বছর পরে ১৯৭৯ সালের ২ মার্চ কলকাতায় মারা যান আবৃত্তিকার স্বামী কাজী সব্যসাচী। অকালেই চলে যান অসুখে। ফলে আরও কঠিন দায়িত্ব এসে পড়ে উমার কাঁধের উপর। তখন ম্লান হয়ে আসছে কাজী পরিবারের যশ-খ্যাতি। একা হাতে বিখ্যাত কবি পরিবারকে কঠিন লড়াইয়ের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করেন উমা। তিনি না থাকলে কাজী পরিবার আজ খ্যাতি আর পরিচিতির জায়গাটা হয়তো ধরেই রাখত পারতো না। বিখ্যাত পরিবারে বিখ্যাত সদস্যদের পেছনে কাণ্ডারীর মতো শক্তির উৎস হয়ে উঠেছিলেন এই উমা মুখোপাধ্যায় তথা উমা কাজী।

উমা নিজেই যখন দাদী-নানী হলেন, তখন তিনিও কবির মতই তাঁর নাতি-নাতনিদের গল্প বলতেন। কাজী নজরুল, প্রমীলাদেবী, কাজী সব্যসাচী সকলের কথা তিনি বলতেন নাতি-নাতনিদের। তারাও কাজী নজরুলকে ছুঁতে পারত উমার গল্পে। উমা জানতেন, উত্তরাধিকারী নবীন প্রজন্মকে কবির কাজে আগ্রহী করলে কবির কাজ বেঁচে থাকবে, আরও এগুবে তাঁর সৃষ্টি। উমা যেন সারাজীবন কবির সেবিকা ও সাধিকা হয়ে রইলেন। এইভাবেই ৮০টি বসন্ত পেরিয়ে প্রয়াত হলেন উমা কাজী। বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতার পাশাপাশি হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে আর শেষ দিকে স্মৃতিভ্রংশতায় ভুগছিলেন, কবির মতোই। ১৫ জানুয়ারি ২০২০ইং সালে ঢাকার বনানীতে 'কবি ভবন'-এ প্রয়াত হন ভালোবাসার মনুষ্যত্ব ও সেবার ধর্ম সারাজীবন ধরে পালন করা মানুষ উমা কাজী। বনানীতেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।

কাজী বংশের এই শ্রেষ্ঠ "মা"কে বর্ণনা করা যায় নজরুলের কবিতা দিয়েই !

“হেরিলে মায়ের মুখ

দূরে যায় সব দুখ,

মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরাণ,

মায়ের শীতল কোলে

সকল যাতনা ভোলে

কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।

কত করি উৎপাত

আবদার দিন-রাত,

সব স'ন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!

আমাদের মুখ চেয়ে

নিজে র’ন নাহি খেয়ে,

শত দোষী তবু মা তো ত্যাজে না।”

অভিনন্দন ❤️🌸❤️

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

Show older
Qoto Mastodon

QOTO: Question Others to Teach Ourselves
An inclusive, Academic Freedom, instance
All cultures welcome.
Hate speech and harassment strictly forbidden.