Show more

১৯৫২ সালের দমদম এয়ারপোর্ট, কলিকাতা ।

যদিও সেই সময় বলা হত না । বলা হতো । এখন যেমন এত কড়াকড়ি, তখন তেমন টা ছিল না। প্লেনে চড়ার মত রাজকীয় অধিকাংশ সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরে ছিল, ফলে এখনকার মত সেই সময় এয়ারপোর্টে তেমন ভিড় হতনা। হাতে গোনা কিছু মানুষ এই কল্প যাত্রার অধিকারী ছিলেন। সেই সময় কেটে দ্বোতলায় উঠে অনেকেই তখন ওড়া দেখতে যেতেন। অনেক সময় কাউকে ছাড়তে এলেও তাই করতেন। এমনকি কাউকে প্লেনে ছাড়তে এলে বা ফ্লিম স্টার থেকে বড় বা মন্ত্রীরা গাড়ী করে সরাসরি প্লেনের সিঁড়ি অবধি যাবার অনুমতি পেতেন। এটা ৮০ দশকের সময় পর্যন্ত নিয়মিত ছিল পরে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক সময় হয়ে যায় । জানি এমন ও অনেকের আছে যারা শুধু প্লেন ওড়া দেখতে টিকিট কেটে প্রতি সপ্তাহে দমদমে যেতেন এমন কি আমিও অনেকবার গেছি । এখন যা অনেকের কাছে হাস্যকর বলে মনে হবে।

ছবির উৎসঃ সাটারস স্টক

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

একটি রাউটারের মূল্য এক লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা দেখানো টেন্ডার আহ্বান করা লক্ষ্মীপুর ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত এখনও প্রতিষ্ঠানটিতে বহাল তবিয়তে আছেন।

এরাই হলো । এরাই দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে আবার এরাই আমাদের শোনায়।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

ফেইসবুক জুড়ে আহমেদ স্যারের মেয়ে এর একটা বক্তব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে....
বক্তব্য টা অনেকটা এমন ছিলো:

"অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্যারেরা আমাকে আমার বাবার দিয়ে পরিচিত করালেও আমি কিন্তু আমাকে আমার মায়ের বলে মনে করি। আমার চিন্তা চেতনা আমার পথচলা আমি আমার মায়ের অনুসরণ করেছি। আমি যখন পিএইচডি করছিলাম তখন আমার বাবা মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। বাবা আলাদা শুরু করেছিল। ছোটভাই

(নুহাশের কান্নাবিজড়িত লেখা টি পড়ুনঃ qoto.org/@Bangladesh/110547293 )

তখন পড়ালেখা করছিল। আর বাবা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি জানি একজন মৃত মানুষ নিয়ে খারাপ কথা বলা উচিত না কিন্তু ভীষণ করেছি আমরা। অনেক সময় মনে হয়েছে যে আজকের রাতটা বোধহয় আর হবে না।"

নোভার এমন বক্তব্যে অনেকেই তার সাপোর্ট নিয়েছেন আবার অনেকেই তার সমালোচনা করছেন। তাদের ধারণা মতে হুমায়ুন স্যারের সমস্ত সুযোগ সুবিধা তার সন্তানেরা ভোগ করেও মিথ্যে বলছেন! যেটা উচিৎ হয়নি।

কিন্তু আমার কথা হলো- সুযোগ দিলেই কী বাবার পালন হয়ে যায়! এই সমাজে যে তাদের প্রতিটা মুহূর্তে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে তার দায়ভার কে নিবে! তাদের মায়ের সেপারেশন, তাদের বাবার অন্য নারীতে - এবং তার কাছে চলে যাওয়া এবং নতুন ভাবে শুরু করা... এর কী ব্যাখ্যা দিবেন আপনি!

এই যে দৈনিক দিন তাদের মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে- লোক সমাজে ছোট হতে হয়েছে...এর ই বা কী জবাব আছে আপনার কাছে! যারা শাওন কিংবা হুমায়ুন স্যারের হয়ে কথা বলেন তারা নিজেরা সেখানে নিজেদের রেখে করুন তাহলেই বুঝবেন- নইতো বুঝবেন না।

জীবনের উপলব্ধি হচ্ছে- সন্তান মানুষ করার জন্য, বড় করার জন্য মায়ের পাশাপাশি বাবার ও প্রয়োজন পড়ে। যে সমস্ত সন্তান বাবা মায়ের যেকোন একজন কে পায় তারা ই শুধু বুঝে বাবা মা আলাদা থাকার মূল্য কী!

তাই নোভার এমন বক্তব্য শুনতে তিতা হলেও এটাই বাস্তবতা যে- লেখক হুমায়ুন স্যার যতটা ছিলেন হিসাবে- ব্যক্তি হুমায়ুন স্যার ততটাই ব্যর্থ ছিলেন এবং সেটা একজন হিসাবে, হিসাবে এবং অবশ্যই হিসাবে।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

কিছু করার জন্য শত বছর আয়ু দরকার নাই -

১২০ বছর আগে, ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা দান করেছিলেন বুয়েটের (BUET) জন‍্য। তখন সেটার নাম বুয়েট ছিলো না। ছিলো ঢাকা সার্ভে স্কুল। সেটাকে তিনি রূপ দিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে। (খাজা সলিমুল্লাহার বাবার নাম ছিলো আহসানউল্লাহ)

আজ থেকে ১২০ বছর আগে, ১ টাকার মূল‍্য কতো ছিলো ভাবতে পারেন? —আজকের দিনের আনুমানিক কয়েকশ টাকা।

১৯০৮ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক সভায় বিনা বেতনে বাধ‍্যতামূলক শিক্ষার দাবি তুলেন তিনি। —চিন্তা করা যায়!

পূর্ব বাংলায় কোন নেই। সলিমুল্লাহ সেটা মানতে পারলেন না। কি করা যায়, সে নিয়ে ভাবতে থাকলেন। ১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি, তখনকার ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় আসেন। হার্ডিঞ্জের সামনে দাবি নিয়ে দাঁড়ানোর মতো সাহস পূর্ব বাংলায় যদি কারো থাকে, সেটা একমাত্র সলিমুল্লাহর। তার বয়স তখন চল্লিশ । সে সময়ের ১৯ জন প্রখ‍্যাত মুসলিম লিডার নিয়ে তিনি হার্ডিঞ্জের সাথে দেখা করেন। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের দাবি তুলেন। ‍্যালয় প্রতিষ্ঠার অন‍্যতম অগ্রদূত তিনি।

ছিলেন আদ‍্যোপান্ত শিক্ষানুরাগী। পূর্ব বাংলায় শিক্ষার বিস্তারের জন‍্য, পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠিকে শিক্ষিত করার লক্ষ‍্যে তিনি বহু বৃত্তি, বহু চালু করেন। ঢাকা ‍্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা এবং ঢাকা সার্ভে স্কুলকে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে রূপ দেয়া ছিলো তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ‍্য অবদান।

শিক্ষাকে যদি জাতির বলা হয়, তাহলে পূর্ব বাংলার সেই মেরুদণ্ড তৈরিতে সলিমুল্লাহর চেয়ে বড়ো সম্ভবত বিংশ শতকে খুব বেশি কেউ রাখেনি। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো পূর্ব বাংলার শিক্ষার জন‍্য আরো বহুকিছু করে যেতেন।

স‍্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুরের মৃত‍্যুবার্ষিকী (১৬ জানুয়ারি)। তাঁর জন‍্য বিনম্র শ্রদ্ধা।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

একটা জাতিকে করার জন্য যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। আপনি সেই জাতির যুব সমাজকে মাদকে এবং ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিলেই হবে।

দুর্ভাগ্য জনক হলেও আমরা সেদিকেই যাচ্ছি...

আমার অ্যাকাডেমিক তিনটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ছিল। অধিক পেয়ে ফ্যাকাল্টি ফার্স্ট হয়েছি। বিশ্বের প্রভাবশালী বাংলাদেশ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টদের কাছ থেকে গোল্ড মেডেল অর্জন করেছি। আমার বিশ্ববিখ্যাত স্কোপাস (Q2-Q4) ও ওয়েব অফ সাইন্সে কয়েক ডজন আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে।

ইচ্ছে ছিলো দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে করার, এতো এতো পরিশ্রমের ফলাফলে পাত্তায় পেলামই না ঢাবিতে উল্টো বিভিন্ন ক্ষেত্রে লাঞ্ছনা ও অপদস্ততার শিকার হয়েছি। -রাশেদ

অতঃপর তুরস্কের আঙ্কারা থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্ন হওয়ার মাত্র আড়াই মাসের মাথায় সিনেট বোর্ড লেকচারার পদের জন্য নমিনেশন না করে উল্টো অধ্যাপক পদের জন্য চূড়ান্তভাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে সুপারিশ করে। পরে তুরস্কের ইউজিসি সহকারী হিসেবে আমাকে মনোনীত করেন।

একই সাথে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের কাছ থেকে মোস্ট সাকসেসফুল স্টুডেন্ট এ্যাওয়ার্ড-২০১৯ লাভ করি।

হাসান চৌধুরী

শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী অধ্যাপক বারটিন বিশ্ববিদ্যালয়,

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

পুলিশের রাউন্ডের বাংলা যদি রোঁদ হয় তবে পাউন্ডের বাংলা কী ?

এই মানুষটির একখানা বদ অভ্যেস ছিল। ভদ্রলোক অস্থানে কুস্থানে ফাজলামো করতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করতেন না। একবার লীলা রায় হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন।

অন্নদাশংকরের স্ত্রী ছিলেন আদতে বিদেশিনী। জাত ইংরেজ ৷ বাংলা শিখেছেন, কিন্তু তাতে সাধু ভাষা বেশি এসে যায়। এটা অবশ্য তখনকার ইংরেজদেরও হত। বইতে যে ভাষা লেখা থাকত, মুখেও হুবহু সে ভাষা এসে যেত। তো লীলা রায় বাগানে গাছ পরিচর্যা করছেন, এমন সময় আলী সাহেবের আগমন। অমায়িক হেসে জিজ্ঞেস করলেন "আপনার স্বামী কোথায়?"

লীলা রায় হেসে জবাব দিলেন " উনি ঘরে। সৃষ্টির কাজে ব্যাপৃত আছেন।"

চোখ কপালে তুলে আলী সায়েব বললেন, "তাহলে আপনি এখানে কী করছেন ম্যাডাম?" 😆😆

আলী সাহেবের অন্য ফাজলামোও আছে। পুলিশের রাউন্ডের বাংলা রোঁদ করা হলে আলি সায়েব নাকি সবিনয়ে জানতে চেয়েছিলেন পাউন্ডের বাংলাও একই ভাবে করা হবে কিনা। 🤣

ভদ্রলোকের এক কথা। শতং বদ। মা লিখ। বলতেন “সাঁওতালরা হাঁড়িতে ভাত থাকলে কাজে যায় না। আমিও পকেটে থাকলে লিখি না”। কিন্তু আড্ডাবাজ এই মানুষটা একা মাতিয়ে রাখতেন চারদিক। একবার হীরেনবাবু না কে যেন এসেছেন। আলি সাহেব তাঁকে এগিয়ে দিতে দিতে অনেকটা চলে এসেছেন। হীরেনবাবু আর না পেরে বললেন “আলি সাহেব, আপনি কি সবাইকেই এমন এগিয়ে দেন?”

“আজ্ঞে হ্যাঁ।“

“কতটা এভাবে এগিয়ে দেন?”

“যতটা এগিয়ে দিলে সে আবার ঘুরে আমার বাড়ি ফিরে আসতে পারবে না”।

শান্তিনিকেতনের অন্যান্য দর্শনীয় বস্তুর সঙ্গে আলীও একজন দর্শনীয় মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। একবার একটি দলের কাছে জানতে চাইলেন,

"শান্তিনিকেতনে এসেছ কী কী দেখতে? ক্ষিতিমোহনবাবুকে দেখেছ?"

ওরা বললো,দেখেছি ...

"নন্দলাল বসুকে?"

—"হ্যাঁ,দেখেছি।" ....

"হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে?"

"আজ্ঞে, তাঁকেও দেখেছি।"

তারপরেই মুজতবা আলী সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন,"ও,বাঘ সিংহ সব দেখে,এখন বুঝি খট্টাশটাকে দেখতে এসেছ !!"

কথাটার মানে এখন বখাটে বা বাচাল হলেও মূল আরবী ও উর্দুতে এর মানে নিতান্ত জ্ঞানগম্যিওয়ালা মানুষ। ইসালামীয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিন, নিয়মিত পরীক্ষা হয়।

মুজতবা আলীরই কোন এক গল্পে পড়েছিলাম, এক ট্যাক্সি ড্রাইভার এক মহিলা আর তাঁর নিয়ে যাচ্ছে। পথে পড়ল এক লালবাতি পাড়া। শিশুটি মা- কে বলল "মা এই মহিলারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কেন?"

মা বললেন "ওঁরা ওদের স্বামীদের জন্য করছে।"

শুনে ড্রাইভারের একটু ফাজলামোর ইচ্ছে হল।

বলল "কেন বাচ্চাকে শেখাচ্ছেন বউদি? না বাবা। এরা খারাপ মহিলা। এরা টাকার জন্য যে কোন লোককে নিজের বর বানায়।"

এবার জিজ্ঞেস করল "মা, এঁদের যে বাচ্চা হয়, তাঁরা কি করে?"

মা বললেন, " কি আর করবে বাবা, ট্যাক্সি চালায়, আর লোকের কথায় নাক গলায়।"

এমনই মানুষ ছিলেন লোকটা। বাংলায় বা বেলে লেতরের শেষ কথা, কি অনায়াসে বলতে পারেন-

"তুমি আমার বিরহে অভ্যস্ত হয়ে যেয়ো না,

আমার মিলনে তুমি হয়ে যেয়ো না"

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেছেন তাদের করে অবকাঠামো উন্নয়ন করছেন যার সুফল পরবর্তী প্রজন্ম পাবে এবং তারাই এই ঋণ শোধ করবে। এদিকে থেকে প্রকাশিত মন্ত্রীর জীবনী থেকে দেখা যাচ্ছে তার মেয়ে যিনি একজন ডাক্তার, তিনি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। অন্যদিকে তার ছেলে, যিনি বার্ক্লেস ব্যাংকে চাকরি করেন, তিনি থাকেন যুক্তরাজ্যে।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

জানুয়ারি ২০০১ সাল: মানিক মিয়া এভিনিউতে ভক্স ওয়াগন ক্লাব সদস্যরা একটি র‍্যালির আয়োজন করে।

সংসদ ভবনের সামনে সেদিন ৩০টির অধিক ১৯৬৫ সালের মডেল একত্রিত হয়।

সৌজন্যে: বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি রিসার্চ ফেলো মিজানুর রহমান স্যারের লেকচার চলাকালীন হুট করে মামুনের নির্দেশে তার আর্টিকেল প্রেজেন্টেশন করে দেওয়া হয়েছে।

উনার আলোচনার সারকথা বলার সময়ে, উনারা আরকিওলজিকাল গবেষণার ভিত্তিতে একটা মসজিদের পেয়েছেন।

যেটা শুনার সাথে সাথে মুনতাসীর , আহমেদরা নিতে পারেন নাই। কথিত প্রধান অতিথির ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে পেপার বন্ধ করে দেওয়া হয়।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

নবাবজাদি

-----------------------------------

পুরান ঢাকার পরিবারের বিদুষী সদস্যা পরিবানুর জন্ম ১৮৮৪ সালের ১ জুলাই মঞ্জিলে।

পিতা নবাব খাজা আহসান , মাতা বেগম। তিনি গৃহ শিক্ষক ও গৃহপরিচারিকার নিকট আরবি, ফারসি ও ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণ করেন।

দৃঢ় মনোবলের অধিকারী পরিবানু ঘোড়ায় চড়াও শিখেছিলেন। পিতা নবাব আহসান উল্লাহ তাঁকে জমিদারির কাজকর্মও শেখান। তিনি এক পর্যায়ে পরিবানুকে তাঁর উত্তরাধিকারী করার নিয়েছিলেন। কিন্তু নবাব বাহাদুরের আকস্মিক মৃত্যুতে সেটা সম্ভব হয়নি।

নবাব পরিবারের ভোলা মিয়ার পুত্র খাজা বদরুদ্দিনের সাথে পরিবানুর হয় ১৯০০ সালে। তিনি ঢাকার দিলখুশায় বাস করতেন।

১৯১৯ সালে পরিবানু ৬০ বিঘা জমিসহ বাগানবাড়ির দক্ষিণাংশ নবাব হাবিবুল্লাহর কাছ থেকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন।

এরপর থেকে তিনি ঢাকার সম্ভ্রান্ত মহিলাদের বেড়ানোর জন্য প্রতি বাগানটি উন্মক্ত রাখার ব্যবস্থা করেন।

এ বাগান থেকেই পরবর্তীকালে এলাকাটি পরিবাগ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

১৯২৪ সালে ঢাকায় গার্লস হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা ও তার উন্নয়নে পরিবানু এবং তাঁর অপর বোনেরা মিলে লক্ষাধিক ব্যয় করেন।

১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং ঢাকার বেগমবাজারের পরিবারিক গোরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। গতকাল ১ লা জুলাই ছিল শুভজন্মদিন, শ্রদ্ধার্ঘ্য 🙏

তথ্যসূত্র: 'ইতিহাসের বিভিন্ন তথ্য'১ জুলাই ২০০৯।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

শরৎচন্দ্রের সমাজ-চেতনা

শরৎ সাহিত্যকে পূর্বাপর অনুধাবন করলে সেটার মধ্যে চিন্তার কিছু দ্বৈধতা লক্ষ্য করা যায়। ব্যক্তির স্তরে, শরৎচন্দ্র যেখানে ব্যক্তি মুক্তির একজন প্রবল উদ্গাতা; সেখানে পারিবারিক স্তরে, তিনি বেশ কিছু পরিমাণে ; এবং ব্যক্তি ও পরিবার নিয়ে গঠিত যে সমাজ, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কখনও স্বাধীনতার , আবার কখনও রক্ষণশীলতার পক্ষপাতী ছিলেন বলে দেখতে পাওয়া যায়। সমাজের প্রসঙ্গে কখনও তিনি ভাঙনের জয়গান করেছিলেন, কখনও বিদ্রোহের মন্ত্রণা দিয়েছিলেন, আবার কখনও একেবারে বিপরীত প্রান্তে চলে গিয়ে প্রচলিত সামাজিক কাঠামোর সংহতি রক্ষার প্রয়োজনীতার উপরে জোর দিয়েছিলেন। অর্থাৎ, এক কথায় বলতে গেলে, শরৎ সাহিত্যের পরিবেশিত ভাবধারায় পূর্বাপর কোন সামঞ্জস্য দেখতে পাওয়া যায় না; তাঁর এক সময়ের অন্য সময়ের ভাবনার দ্বারা খণ্ডিত, এবং এক বইয়ের বক্তব্য অন্য বইয়ের বক্তব্যে অস্বীকৃত হয়েছিল বলে দেখা যায়। অবশ্য এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই। কারণ, কোন বড় লেখকের মনোজীবনই সবসময় একটা সোজা সরল রেখায় অগ্রসর হয় না। তাঁর জীবনের চলবার পথে বাঁক থাকে, সেই বাঁক কখনও ডাইনে, তো কখনও আবার বাঁয়ে মোড় নেয়; আবার কখনও সেই পথ সম্পূর্ণ উল্টোমুখে ঘুরে যায়। এই অসামঞ্জস্য বা স্বতোবিরোধ লেখককে কখনোই ছোট করে না, বরং শিল্পীর মানসিকতা যে প্রায়শঃ খুবই জটিলতামণ্ডিত, এবং বহু পরস্পর-বিরোধিতার আধারস্থল হয় - সেই সত্যিকেই জানিয়ে দিয়ে যায় মাত্র। চিন্তার অসামঞ্জস্যহীন সরল গতি মাঝারি মাপের শিল্পীর লক্ষণ, কিন্তু একজন মহৎ শিল্পীর ব্যক্তিত্বের বিবর্তনের ছকের ভিতরে কিছু না কিছু আত্মখণ্ডন অবশ্যই থাকবে। এমনকি অনেকে এটাও বলে থাকেন যে, কন্ট্রাডিকশন মহৎ মনের ধর্ম। শরৎ সাহিত্যের এই যে দ্বৈধতা এবং স্বতোবিরোধ - এটার একাধিক কারণ মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের আলোয় নিরূপণ করা সম্ভব; তবে চেষ্টা করলে শরৎচন্দ্রের জীবনীর ছক থেকেই এমন ধরণের অসামঞ্জস্যের কিছু কারণও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।

শরৎচন্দ্র হুগলী জেলার এক নির্বিত্ত কুলীন ব্রাহ্মণ বংশে করেছিলেন। রাঢ়দেশীয় কুলীন ব্রাহ্মণের বহু অন্ধ সংস্কার তাঁর মজ্জার মধ্যে ছিল। নিজের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি সেগুলোকে কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি যেমন ব্রাহ্মণের উপবীতের মহিমায় বিশ্বাস করতেন; ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচিয়ে চলবার সার্থকতায় করতেন; সন্ধ্যাহ্নিক পূজা-অর্চনা, স্বপাক আহার, স্বপাক আহারের অভাবস্থলে কেবলমাত্র স্বজাতির প্রস্তুত আহার গ্রহণ দ্বারা দৈহিক ও মানসিক শুচিতা রক্ষা করবার চেষ্টা প্রভৃতি ব্রাহ্মণোচিত আচার-প্রথা পালনের সার্থকতায় বিশ্বাস করতেন; জাতপাতের ভেদ মেনে চলায় বিশ্বাস করতেন; তিনি অসবর্ণ বিবাহরীতির প্রতি নিতান্ত কুণ্ঠিত সমর্থন জানিয়েছিলেন - ইত্যাদি নানা ধরণের নিদর্শনের মধ্যে দিয়ে শরৎচন্দ্রের সেই গতানুগতিক সংস্কারানুগত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দু ঘরের বিধবার পুনর্বিবাহের যৌক্তিকতাতেও তিনি পুরোপুরিভাবে বিশ্বাস করতেন বলে মনে হয় না; কারণ, তাঁর লেখা এমন একটি গ্রন্থেরও সন্ধান পাওয়া যায় না, যেটার কাহিনী-বৃত্তের ঘটনা সংস্থাপনের মধ্যে বিধবার পুনরায় বিয়ে দেওয়ার মত মনোবল তিনি সংগ্রহ করে উঠতে পেরেছিলেন বলে দেখতে পাওয়া যায়। যদিও সেরকম কিছু ঘটানোর সম্ভাবনা তাঁর একাধিক গল্প-উপন্যাসের কাহিনীর মধ্যেই ছিল। দৃষ্টান্তস্বরূপ, তাঁর পল্লীসমাজের রমা ও রমেশের মধ্যকার ভালবাসার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তিনি তাঁর একাধিক ভাষণে ও প্রবন্ধে বঙ্কিমচন্দ্রের বিধবাদের প্রতি নিষ্করুণতার সমালোচনা করেছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে সেবিষয়ে থেকে যে বেশি উদারতা দেখিয়েছিলেন, এমন কোন প্রমাণ কিন্তু পাওয়া যায় না। যদি বলা হয় যে, শরৎচন্দ্রের প্রতি আরোপিত এই সব মনগড়া কল্পনামাত্র, সেক্ষেত্রে কিছু কিছু উদাহরণের সাহায্যে অভিযোগগুলির সারবত্তা প্রতিপাদনের চেষ্টা করা যেতে পারে। কিছুক্ষণ আগেই বিধবাবিবাহের প্রতি শরৎচন্দ্রের মনোভাব প্রসঙ্গে পল্লীসমাজের রমা-রমেশের কথা বলা হয়েছে।

ছোঁয়াছুঁয়ি তথা আহারের শুচিতা রক্ষা প্রভৃতি সংকীর্ণচিত্ত অভ্যাসগুলি সম্পর্কে শরৎচন্দ্রের মনোভাব বোঝাবার জন্য তাঁর দুটি উপন্যাসের দৃষ্টান্ত দিলেই যথেষ্ট হবে। সেই দুটি উপন্যাস হল - চরিত্রহীন ও পথের দাবী। চরিত্রহীনে সতীশ মদ্যপ, মন্দ বন্ধুর প্ররোচনায় পড়ে অস্থান-কুস্থানে চলে যাওয়ার অভ্যাসও তাঁর ছিল; কিন্তু দু’বেলা নিয়মমাফিক সন্ধ্যাহ্নিক আচমনাদি ইত্যাদি না করলে তাঁর চলত না। আর মেসের ঝি সাবিত্রীর তো একটা প্রধান কাজই ছিল, রোজ সকাল ও সন্ধ্যায় সতীশবাবুর সন্ধ্যাহ্নিকের জায়গাটা নিকানো, পূজার আসন, কোশাকুশি আর গঙ্গাজল এগিয়ে দেওয়া। শরৎ-সাহিত্যে এত আচারনিষ্ঠার বাড়াবাড়ি এক এক সময়ে আদিখ্যেতা বলেই বলে মনে হয়। বলা যেতে পারে যে, সতীশের চরিত্রকে নিখুঁতভাবে আঁকবার জন্য তাঁর ব্যক্তিত্বের ওই দিকটাকে দেখানোর প্রয়োজন ছিল; কিন্তু এই যুক্তির উত্তরে এটাও বলা যেতে পারে যে, সেক্ষেত্রে লেখকের নিজের আচার-মনস্কতাই তাঁর বর্ণিত চরিত্রের উপরে প্রক্ষিপ্ত হয়েছিল, নয়ত অতদূর বাড়াবাড়ি কখনও সম্ভব ছিল না। কিন্তু এই ছোঁয়াছুঁয়ি বিষয়ে শরৎচন্দ্রের পথের দাবী উপন্যাসের অপূর্ব চরিত্রটি সবচেয়ে বেশি অবাক করে। বংশীয় সেই যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ উপাধিধারী আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি কলকাতা থেকে জীবিকার প্রয়োজনে তথাকথিত ম্লেচ্ছের দেশ বর্মা মুলুকে বোখা কোম্পানীর চাকরি নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও ছোঁয়াছুঁয়ির শুচিবাই তাঁর আর কিছুতেই ঘুচতে চায়নি। নিজের আচার-বিচারের খুঁতখুঁতেপনায় তিনি বাংলার শুচিবায়ুগ্রস্ত বিধবাকেও হার মানিয়েছিলেন! তিনি নাকি অত্যন্ত মাতৃভক্ত সন্তান ছিলেন, তাই পাছে মায়ের প্রাণে ব্যথা লাগে সেই কারণে ওই দূর দেশে গিয়েও নিজের আহারে-বিহারে ব্রাহ্মণোচিত আচার-পরায়ণতা রক্ষায় সতত সচেষ্ট ছিলেন। সেই ব্যাপারে তাঁর এমনই সতর্কতা ছিল যে, শুচিতার ক্ষেত্রে পান থেকে চুন খসবার জো পর্যন্ত ছিল না! তাঁর মা ছেলেকে প্রাণ ধরে বর্মা মুলুকে আসতে দেওয়ার সময়ে পরিবারের অত্যন্ত বিশ্বাসী পাচক ঠাকুর তেওয়ারীকে তাঁর সঙ্গে পাঠিয়েছিলেন বলে রক্ষা, নইলে অপূর্বর হয়ত সেই ম্লেচ্ছের দেশে যাওয়াই হত না। সেই তেওয়ারী মায়ের বকলমে অপূর্বকে সতত আগলে রাখতেন, আর অপূর্ব তেওয়ারীর বকলমে অকুস্থলে অনুপস্থিত মায়ের কাছে তাঁর নির্ভেজাল শুচিতার নিত্য পরীক্ষা দিতেন। অমনভাবে প্রভু ও ভৃত্য - দু’জনে মিলে রেঙ্গুন শহরের বুকের উপরে হিন্দুয়ানীর একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ খাড়া করে তুলেছিলেন। অপূর্ব খৃষ্টান ঘরের কন্যা ভারতীকে মনে মনে ভালোবাসলেও তাঁর হাতে খেতে-ছুঁতে তাঁর প্রবল আপত্তি ছিল বলে দেখতে পাওয়া যায়। অপূর্ব সরকার মশাইয়ের পরিচালিত ব্রাহ্মণ হোটেলের কদন্ন খেতে রাজি ছিলেন, কিন্তু তবুও তিনি ভারতীর সযত্নে প্রস্তুত আহার্য মুখে তুলতে রাজি ছিলেন না। অতীতের কয়েকজন সমালোচকের মতে, অপূর্বর আচারের সেই গোঁড়ামির চিত্র পথের দাবী উপন্যাসের গোড়ার দিকের অনেকগুলি পৃষ্ঠা এমনভাবে জুড়ে রয়েছে যে, ওই এককালীন রাজরোষ নিগৃহীত প্রসিদ্ধ উপন্যাসের বৈপ্লবিকতার স্বাদ সেটার ফলে অনেকটাই ফিকে হয়ে গিয়েছে বললেও চলে। অথচ ওই জিনিসটা কিন্তু পথের দাবীর মত একটা বইয়ের পক্ষে অপরিহার্য ছিল না, শুধুমাত্র শরৎচন্দ্রের অতিরিক্ত আচার-বিচারের ‘বাই’ - ব্রাহ্মণত্বাভিমান - কাহিনীর ধারার ভিতর অনুপ্রবিষ্ট হয়ে সেই বিভ্রাটের সৃষ্টি করেছিল।

শরৎচন্দ্রের বিপ্রদাস উপন্যাসেও ছোঁয়াছুঁয়ির প্রসঙ্গ খুব একটা কম কিছু নেই। শরৎ সাহিত্যে প্রসঙ্গটির উপর্যুপরি অবতারণা পৌনঃপুনিকতার একঘেয়েমিতেও রূপান্তরিত হয়েছে বললে অন্যায় কিছু বলা হয় না। শরৎচন্দ্রের গৃহদাহ উপন্যাসের ডিহরী প্রবাসী সদাশয় বাঙালী ব্রাহ্মণ রামচরণ লাহিড়ীর চরিত্র চিত্রণের মধ্যে দিয়ে স্বপাক আহারের মহিমা উদঘোষিত হয়েছে বলে দেখতে পাওয়া যায়। তিনি সচরাচর নিজে রেঁধে খেতেই অভ্যস্ত ছিলেন, পারতপক্ষে অন্যের ছুঁয়ে দেখতেন না। ব্রাহ্মদের প্রতি রামবাবুর বিতৃষ্ণার কোন অন্তঃ ছিল না। সেই বিতৃষ্ণা শরৎচন্দ্রের নিজেরও কিছুটা ছিল, তাঁর দত্তা উপন্যাসের রাসবিহারী চরিত্রটি আর গৃহদাহের কেদারবাবু চরিত্রটি সেটার প্রমাণ দেয়। সেখানেও লেখকের অনীহা তাঁর সৃষ্ট ওই দুই চরিত্রে প্রযুক্ত হয়েছিল বললে অন্যায় কিছু বলা হয় না। যাই হোক, উপন্যাসের রামচরণ লাহিড়ী, যাঁরা হিন্দু সমাজের গণ্ডী ত্যাগ করে নিজেরা একটা আলাদা সমাজ গড়ে তুলেছিলেন, তাঁদের তিনি মনে মনে কোনদিনই ক্ষমা করতে পারেননি। কিন্তু গৃহদাহের উপসংহার অংশে দেখতে পাওয়া যায় যে, রামবাবুর আত্যন্তিক স্বজাতিপ্রীতি আর আচারনিষ্ঠার দুর্গপ্রাকার শেষপর্যন্ত তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়েছিল। এক্ষেত্রে শরৎচন্দ্র আর সংস্কারচালিত কোন লেখক হয়ে থাকেননি, বরং সংস্কারের ঊর্ধ্বে উঠে নিরাসক্ত দৃষ্টিতে সমাজপ্রবাহকে লক্ষ্য করবার মত শিল্পীজনোচিত প্রকৃত শক্তিমত্তাই তাঁর মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল। গৃহদাহে রক্ষণশীলতার উপরে প্রগতির জয় হয়েছিল।

কিন্তু কৌলিক সংস্কারের ঊর্ধ্বে শরৎচন্দ্রের ব্যক্তিত্বের আরেকটি দিক অবশ্যই ছিল, সেখানে তিনি বিস্ময়কররূপে স্বাধীন ও মুক্ত প্রকৃতির ছিলেন। তাঁর ভবঘুরে, বাউণ্ডুলে জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতাই তাঁর সেই মুক্তমনা স্বরূপের কারণ ছিল। চন্দননগরে সঙ্ঘের ডাকা একটি আলাপসভায় (১৩৩৭ বঙ্গাব্দ) আলাপচারীতার প্রসঙ্গে তিনি তাঁর প্রথম জীবনের সেই দিকটির একটি অকপট আভাস দিয়েছিলেন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, “ না থাকলে ভাল কিছুই লেখা যায় না। অভিজ্ঞতা লাভের জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। অতি ভদ্র শান্তশিষ্ট জীবন হবে, আর সমস্ত অভিজ্ঞতা লাভ হবে - তা হয় না। বলেছি - ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক আমাকেও চার পাঁচবার সন্ন্যাসী হতে হয়েছিল। ভাল ভাল সন্ন্যাসীরা যা করেন সবই করেছি। গাঁজা মালপো কিছুই বাদ যায়নি। … বিশ বছর এইটাতে গেল। এই সময় খানকতক বই লিখে ফেললুম। ‘দেবদাস’ প্রভৃতি ঐ আঠার-কুড়ির মধ্যে লেখা। তারপর গান বাজনা শিখতে লাগলুম। পাঁচ বছর এতে গেল। তারপর পেটের দায়ে চলে গেলাম নানা দিকে। প্রচণ্ড অভিজ্ঞতা তাই থেকে। এমন অনেক কিছু করতে হত যাকে ঠিক ভাল বলা যায় না। তবে সুকৃতি ছিল, ওর মধ্যে একেবারে ডুবে পড়িনি। দেখতে থাকতাম, সমস্ত খুঁটিনাটি খুঁজে বেড়াতাম। অভিজ্ঞতা জমা হত। সমস্ত island-গুলা (বর্মা, জাভা, বোর্ণিয়ো) ঘুরে বেড়াতাম। সেখানকার অধিকাংশ ভাল নয় - smugglers; এইসব অভিজ্ঞতার ফল - ‘পথের দাবী’। বাড়িতে বসে আর্মচেয়ারে বসে হয় না, অনুকরণ করা যেতে পারে। কিন্তু সত্যিকার মানুষ না দেখলে সাহিত্য হয় না। ... মানুষ কি, তা মানুষ না দেখলে বোঝা যায় না। অতি কুৎসিত নোংরামির ভিতরও এত মনুষ্যত্ব দেখেছি যা কল্পনা করা যায় না।” এই উদ্ধৃতিটির মধ্যে দিয়ে লেখকের জীবনের যে রূপরেখাটি পাওয়া যায়, সেটা কিন্তু সচরাচর প্রচলিত বাঙালী মধ্যবিত্ত জীবনের ছাঁচের সঙ্গে একেবারেই মেলে না। সেটার জাত-গোত্র সম্পূর্ণভাবে আলাদা। শরৎচন্দ্রের জীবনীর ছাঁচ সম্পূর্ণ ‘unconventional’ বা গতানুগতিকত্বরহিত। তবে সেটাকে শুধু ‘unconventional’ বললেই সবটুকু বলা হয় না, সেটাকে বৈপ্লবিক বলা উচিত। যে মানুষটি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের চলবার পথে সুন্দর-কুৎসিত কালো-সাদা জটিল-অজটিল নানা বিচিত্র বহুমুখী অভিজ্ঞতার উজান ঠেলে এগিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁর গায়ে কৌলিক সংস্কার পুরোপুরি সংলগ্ন হয়ে থাকা কি সম্ভব ছিল? তাঁর জীবনযাপনের ধরনই তো তাঁকে বংশগতির প্রভাব থেকে মুক্ত করবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সহায়ক হয়েছিল। শরৎচন্দ্র তাঁর জীবনের প্রতিটি স্তরে একজন প্রকৃত শিল্পীর জীবনযাপন করে গিয়েছিলেন; আর একথা বলাই বাহুল্য যে, একজন শিল্পীর জীবনে কৌলিক সংস্কারের লেশ খুব একটা অবশিষ্ট থাকে না, থাকলেও সেটা সর্বসংস্কারমুক্তির আবেগের তলায় চাপা পড়ে নিতান্ত পিষ্ট হয়ে পড়ে।

কিন্তু তবুও শরৎচন্দ্রের সত্তায় ব্রাহ্মণত্বের অভিমান যে ঘুচেও ঘুচতে চায়নি, সেটা এই কারণে যে, তিনি তাঁর সমস্ত বিবর্তন-পরিবর্তনের মধ্যেও সেটিকে সজ্ঞানে সযত্নে লালন করেছিলেন। সেটা সম্ভব হয়েছিল, কিছুটা তাঁর বাল্য ও কৈশোর জীবনের প্রতি মমত্ববশতঃ, আর কিছুটা রাঢ়দেশীয় কুলীন ব্রাহ্মণের মজ্জাগত অনুদারতার জন্য। কথাটা খানিকটা প্রাদেশিক শোনালেও একথা বলতেই হবে যে, শরৎচন্দ্রের মত একজন ব্রাহ্মণের মনোগঠনের ভিতরে অন্ধ আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি আসক্তি, ছোঁয়াছুঁয়ি জাত-বিচারের প্রবণতা, পুরনো রীতিনীতিকে আঁকড়ে থাকবার মোহ প্রভৃতি যুক্তিহীন মনোবৃত্তি প্রায় দিনের সঙ্গে রাত্রি অথবা আলোর সঙ্গে অন্ধকার অচ্ছেদ্যভাবে সংলগ্ন থাকবার মত উচ্চশিক্ষা আর সাংস্কৃতিক পালিশ সত্ত্বেও অস্তিত্বের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে লেপ্টে ছিল। সেই কারণেই শরৎচন্দ্রের ব্যক্তিত্বের মধ্যে এক অদ্ভুত দ্বৈধতার সমাবেশ দেখতে পাওয়া যায়। তিনি নিজের বাস্তব জীবনের বহুমুখী অভিজ্ঞতার দৌলতে একজন সর্বসংস্কারমুক্ত পুরুষ যেমন ছিলেন, তেমনি পক্ষান্তরে কৌলিক স্তরে সংস্কারের হাতে-ধরা বশংবদ প্রকৃতির একটি জীবও ছিলেন। নইলে এমন অবিশ্বাস্য, অসম্ভব ব্যাপার কি করে সম্ভব হয়েছিল যে, যিনি বাংলা সাহিত্যে বিপ্লবী ঐতিহ্যের অনুসরণে অভয়া, কিরণময়ী, সব্যসাচী, কমলের মত অবিস্মরণীয় সব চরিত্রের সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁদের কর্ম ও কথার মধ্যে দিয়ে বিদ্রোহের জয়ধ্বজা উড়িয়ে দিয়েছিলেন; সেই তিনিই আবার তাঁর স্নেহের ভগিনীর কাছে অকপট স্বীকারোক্তি করেছিলেন - “দিদি, আমি কোন কালে খাওয়া ছোঁয়ার বাছবিচার করিনে, কিন্তু মেয়েদের হাতে আমি কোনদিন কিছু খাইনে। শুধু খাই তাঁদের হাতে যাঁদের বাপ মা দু’জনেই ব্রাহ্মণ এবং বিয়েও হয়েছে ব্রাহ্মণের সঙ্গে। ... সমাজভুক্ত হোন তাতে আসে যায় না, কিন্তু ঐ রকম মেশানো জাত হলে আমি তাঁদের ছোঁয়া খাইনে। তাঁরা বলে শরৎবাবু শুধু লেখেন বড় বড় কথা, কিন্তু বাস্তবিক তিনি ভারি গোঁড়া। আমি গোঁড়া নই লীলা, কিন্তু শুধু রাগ করেই এঁদের হাতে খাইনে।” (লীলারাণী গঙ্গোপাধ্যায়কে লিখিত পত্রের অংশ) শরৎচন্দ্রের এই স্বীকারোক্তিমূলক পত্রাংশ থেকে দুটি জিনিস দেখতে পাওয়া যায়। প্রথমতঃ, মুখে অস্বীকার করলেও তিনি খাওয়া-ছোঁয়ার বাছবিচার মানতেন। বাছবিচারের বেলায় ব্রাহ্মণের প্রতি তাঁর বিশেষ পক্ষপাত ছিল। দ্বিতীয়তঃ, কোন একটি বিশেষ সমাজভুক্ত নারীদের প্রতি তাঁর অন্তরের বিরাগ ছিল। গঙ্গোপাধ্যায়কে শরৎচন্দ্রের লিখিত সংশ্লিষ্ট ও অন্যান্য চিঠিগুলি (শরৎ-সাহিত্য সংগ্রহ, ত্রয়োদশ সম্ভার দ্রষ্টব্যঃ) পর্যালোচনা করলে একথা বুঝতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না যে, তিনি সেখানে ব্রাহ্মসমাজের নারীদের কথাই বলতে চেয়েছিলেন। একজন বহুদর্শী বহুশ্রুত মানুষের, বিশেষ করে শিল্পী মানুষের জীবনে ওই ধরণের সাম্প্রদায়িক অনুদারতা থাকাটা যে বাঞ্ছনীয় নয়, সে কথা শরৎচন্দ্রের মত সংবেদনশীল লেখকের থেকে আর বেশী কে জানতেন? কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর সেই সংকীর্ণচিত্ত বিরাগকে ভাষা না দিয়ে থাকতে পারেননি। অতি বড় মহৎ লেখকের জীবনেও যে কত সময়ে কত কুসংস্কার বাসা বেঁধে ফেলে, এটা সেটারই একটা প্রমাণ। এখন এটা নিয়ে আক্ষেপ জানানো চলে, কিন্তু তা বলে হয়কে নয় করা চলে না।

অনেকের মতে শরৎচন্দ্রের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে যে অফুরন্ত মালমশলা ছিল, যে সুবিশাল মানবীয় জ্ঞানের পুঁজি ছিল, সেসব ব্যবহার করে তিনি আরও অনেক বড় লেখক হতে পারতেন; একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী মননশীল লেখকরূপে অসংশয় প্রতিষ্ঠা পেতে পারতেন; কিন্তু শুধু তাঁর সেই অনুদার প্রাদেশিকতা আর সাম্প্রদায়িকতাই তাঁকে সেটা হতে দেয়নি, সেগুলোই তাঁকে সেসব পেতে দেয়নি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সেখানেই তাঁর মৌলিক পার্থক্য ছিল। রবীন্দ্রনাথ জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে নিজের জীবনারম্ভ করেছিলেন, তারপরে জীবনের প্রতিটি অভিজ্ঞতার অধ্যায়কে সোপানরূপে ব্যবহার করে সেগুলিকে ধাপে ধাপে পেরিয়ে, জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি যেখানে গিয়ে পৌঁছেছিলেন, সেখানে আন্তর্জাতিকতার বিরাট অঙ্গন বিস্তৃত ছিল, ও তাতে বিশ্বের সর্বজাতির মেলা বসেছিল। সেখান থেকে তাঁর জন্মক্ষেত্র জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িকে সুদূর নীহারিকালোকের ধূম্রপুঞ্জের মত অস্পষ্ট আভাসে চোখে পড়ত মাত্র, তবে সেটার থেকে বেশী অনুভব করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু শরৎচন্দ্রের বেলায় তেমন কিছু ঘটেনি। তিনি বর্মা, জাভা, বোর্ণিয়ো ইত্যাদি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি পরিক্রমা করলেও, এবং নিজের জীবনে বিচিত্র-বিপুল-বিবিধ অভিজ্ঞতার শরিক হয়ে অগুণতি মানুষকে চরে খেলেও, তাঁর মনের এক কোণায় কিন্তু আমরণ জেলার গ্রামই সংসক্ত হয়ে ছিল। সেখানকার পেছুটান তিনি কোন সময়েই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাই তাঁর মধ্যে অত বৈসাদৃশ্য, অত অসামঞ্জস্য, অত স্ববিরোধ দেখতে পাওয়া যায়। তাই তিনি পথের দাবীর মত রাজনৈতিক বিপ্লব আর শেষ প্রশ্নের মত সামাজিক বিপ্লবের বাণীবাহক উপন্যাসের স্রষ্টা হয়েও, বাংলার একজন শ্রেষ্ঠ গার্হস্থ্য জীবনের রূপকার, এবং অতুলনীয় পারিবারিক গল্পোপন্যাসের অমর কথাকার হতে পেরেছিলেন। আরো আশ্চর্যের ব্যাপার হল যে, বাংলার পাঠক-পাঠিকারা তাঁর বৈপ্লবিক রূপটাকে তেমনভাবে নেননি, যেমনভাবে তাঁরা তাঁর সেই সাধারণ সুখ-দুঃখ-বেদনায় ভরা গৃহসংসারের স্নিগ্ধ-মধুর চিত্রগুলিকে নিতে পেরেছেন। তাহলে কি শরৎচন্দ্রের সংস্কারমুক্ত বৈপ্লবিকতা নিষ্ফল হয়েছে? তাঁর সংস্কারানুগত গৃহবদ্ধ পারিবারিক শিল্পীর রূপটাই কি সব কিছুকে ছড়িয়ে বাঙালী পাঠক-পাঠিকার চিত্তজয় করেছে? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া মোটেও সহজসাধ্য নয়। তবে শিল্পের একটি বিচিত্র খেয়াল হল যে, অনেক সময়ে পাঠক-পাঠিকার বিচারে চূড়ান্ত বিপ্লবও উপেক্ষিত হয়, পাঠক-পাঠিকারা তাঁদের গৃহ-সংসারের ছোটখাট সুখ-দুঃখকে সে আঁকড়ে ধরে থাকতে চান, আর তাতেই তাঁরা সমধিক স্ফূর্তি অনুভব করেন। দিগন্তের অভিমুখী বহিরাবেগের থেকে কূপমণ্ডুকতাই যেন তাঁদের বেশী ভাল লাগে, আকাশে হাত বাড়ানো অপেক্ষা তাঁরা যেন গৃহাঙ্গনেই লগ্ন হয়ে থাকতে বেশী পছন্দ করেন। সাগরের উত্তাল তরঙ্গমালায় হুটোপাটি খাওয়ায় তাঁদের আনন্দ নয়, বাড়ির খিড়কি পুকুরের শান্ত স্থির জলে অবগাহন-স্নানেই তাঁদের দেহের আরাম ও প্রাণের তৃপ্তি অনুভূত হয়। শরৎচন্দ্রের শিল্পসৃষ্টিগুলির মূল্যায়ণে অগ্রসর হলে এই মন্তব্যের সার্থকতাই যেন বেশী চোখে পড়ে। শিল্পের মানদণ্ডে তাঁর বিরাজ-বৌ, পল্লীসমাজ, অরক্ষণীয়া, নিষ্কৃতি, পণ্ডিতমশাই, বৈকুণ্ঠের উইল প্রভৃতি পল্লীভিত্তিক পারিবারিক উপন্যাসগুলি যতটা উৎরে গিয়েছে, তেমন সম্ভবতঃ আর কোন উপন্যাস করতে পারেনি। তাঁর লেখা গল্পের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার দেখতে পাওয়া যায়। বিন্দুর ছেলে, রামের সুমতি, মহেশ, অভাগীর স্বর্গ, একাদশী, বৈরাগী প্রভৃতি গল্পের কোন তুলনা হয় না। অথচ সে সব রচনার বিষয়বস্তু কত তুচ্ছ, বহির্জগতে ব্যাপ্ত ভাবনা-ধারণা থেকে সেগুলো কত বিচ্ছিন্ন। যে শরৎচন্দ্র বিপ্লবের বাণীবাহক ছিলেন, সেই শরৎচন্দ্রের চেয়ে সংস্কারাবদ্ধ পারিবারিক অকিঞ্চিৎকর গার্হস্থ্য সুখদুঃখের রূপকার শরৎচন্দ্র বাঙালী পাঠক-পাঠিকার কাছে বেশি প্রিয়। এর থেকে শিল্পের নিজস্ব নিয়মনীতির বৈশিষ্ট্যটাই শুধু ধরা পড়ে। শিল্প ব্যক্তির সুখ-দুঃখ, - , ব্যর্থতা, নৈরাশ্য, আশার উল্লাস ইত্যাদিকেই বড় করে দেখে; ব্যক্তির ভাবজীবনকে বা তাঁর আদর্শবাদকে নয়। আদর্শবাদ মননশীলতার বস্তু, পক্ষান্তরে ব্যক্তির ব্যক্তিগত হৃদয়ের সংবাদ অনুভূতির বস্তু। শিল্পের কাছে এই শেষোক্তেরই আদর বেশী। যেহেতু শিল্প ব্যক্তিভিত্তিক, সামূহিক নয়, তাই সেটার কাছে ভাবজীবনের তেমন দাম নেই, যতটা ব্যক্তিগত প্রেমপ্রণয়-আশা-নিরাশার ছবির রয়েছে। শরৎ সাহিত্যের বেলায় এই কথাটা যত অনুভব করা যায়, তেমন সম্ভবতঃ অন্য কোন সাহিত্যের বেলায় করা যায় না। এক্ষেত্রে কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিলে বিষয়টি সমধিক পরিস্ফুট হতে পারে; এবং সেই সঙ্গে শরৎচন্দ্রের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত ধারণাগুলিরও একটা স্পষ্টতর ছবি পাওয়া যেতে পারে।

শরৎ-সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত সকলেই অবগত আছেন যে, তিনি কয়েকটি বিদ্রোহিনী নারীচরিত্রের সৃষ্টি করেছিলেন। সেগুলির মধ্যে শ্রীকান্ত দ্বিতীয় পর্বের অভয়া, তৃতীয় পর্বের সুনন্দা; চরিত্রহীন উপন্যাসের কিরণময়ী ও শেষ প্রশ্নের কমল সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। তাঁদের মধ্যে অভয়া আবার সবচেয়ে বেশি বিদ্রোহিনী। তিনি শুধু কথায় বিদ্রোহিনী নন, নিজের আচরণেও বিদ্রোহিনী। অভয়া রোহিণীবাবুর সমভিব্যাহারে বর্মা মুলুকে বিবাহের পর থেকেই নিখোঁজ তাঁর স্বামীর খোঁজ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে, তাঁর স্বামী এক বর্মিনীকে বিবাহ করে কাচ্চাবাচ্চা নিয়ে দিব্যি জমিয়ে বসেছেন। অভয়ার স্বামী উচ্ছৃঙ্খল কদর্যরুচি ছিলেন। স্ত্রীর ক্ষীণতম স্মৃতিও তাঁর মনে আর জাগরূক ছিল না ৷ সেসব দেখে অভয়ার সমস্ত অন্তর বিদ্রোহ করে উঠেছিল। ইতিমধ্যে রোহিণী তাঁকে ভালবেসে ফেলেছিলেন, এবং তাঁর সেই কামনা অব্যক্ত থাকেনি। অভয়া স্বামীত্বের আলেয়ার পিছনে আর বৃথা ধাওয়া না করে রোহিণীকে নিয়েই নিজের ঘর বেঁধেছিলেন, এবং তাঁরা স্বামী-স্ত্রীরূপে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। দাম্পত্য আদর্শের অভ্যস্ত মূল্যবোধে লালিত বাঙালী পাঠক-পাঠিকার পক্ষে এটা যে সাংঘাতিক একটা চমক, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই চমক সৃষ্টিকারী আচরণের যুক্তিও শরৎচন্দ্র অভয়ার জবানীতে জুগিয়েছিলেন। উপন্যাসে অভয়া শ্রীকান্তকে বলেছিলেন, “রোহিণীবাবুকে ত আপনি দেখে গেছেন। তাঁর ভালবাসা ত আপনার অগোচর নেই; এমন লোকের সমস্ত জীবনটাকে পঙ্গু করে দিয়ে আমি আর সতী নাম কিনতে চাইনে । … একটা রাত্রির বিবাহ অনুষ্ঠান যা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের কাছে স্বপ্নের মত মিথ্যা হয়ে গেছে, তাকে জোর করে সারা জীবন সত্য বলে খাড়া করে রাখবার জন্য এই এতবড় ভালবাসাটা একেবারে ব্যর্থ করে দেব? যে বিধাতা ভালবাসা দিয়েছেন তিনি কি তাতেই খুসি হবেন?” অন্যদিকে শরৎ-সৃষ্ট প্রখর বুদ্ধিশালিনী প্রদীপ্ত আগুনের শিখারূপিণী কিরণময়ী নামক চরিত্রটি যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত ভারতীয় নারীর পাতিব্রত্যের সংস্কার, আর সেই সংস্কারকে অস্বীকার করবার নির্ভীকতার অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষতবিক্ষত দ্বিধাপীড়িত নারীর একটি চমৎকার আলেখ্য বলে দেখতে পাওয়া যায়। ওই দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভার কিরণময়ীর মত সাহসিকা মননশীল নারীও শেষপর্যন্ত আর সহ্য করতে পারেন নি, তিনি পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর পাগল হওয়ার বীজ তাঁর স্বভাবের অন্তর্নিহিত কনট্র্যাডিকশনের মধ্যেই নিহিত ছিল - সেজন্য শরৎচন্দ্রকে সেই বিষয়ে কোন দোষ দেওয়া বৃথা। সেক্ষেত্রে শরৎচন্দ্র একজন বাস্তববাদী শিল্পীর মতই কিরণময়ীর স্বভাবকে অনুসরণ করে তাঁর পরিণাম যা হতে পারত, সেটাই দেখিয়েছিলেন। নিজের পীড়ণেচ্ছার দ্বারা চালিত হয়ে তিনি কিরণময়ীকে তাঁর স্খলনের জন্য সেই শাস্তি দিতে যাননি, যেটা বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে কল্পনীয় ছিল। (বিষবৃক্ষের কুন্দ আর কৃষ্ণকান্তের উইলের রোহিণীর পরিণাম স্মরণীয়।) কিন্তু কিরণময়ীর জীবন স্বীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের ভারে বিপর্যন্ত হয়ে ব্যর্থ হয়ে গেলেও বাংলা সাহিত্যে সেটা আজও এক অবিস্মরণীয় চরিত্র। কিন্তু এমন চরিত্র শরৎচন্দ্রের কলমেও বেশী ফোটেনি। পক্ষান্তরে শরৎচন্দ্রের কমল অন্ধস্বামীভক্তির একান্ত বশংবদ দাসীসুলভ আদর্শের কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি ইউরোপীয় ক্ষণবাদের পূজারী ছিলেন; ভারতীয় সনাতন আদর্শের শাসিত, মনু প্রভৃতি বিধানদাতাদের দ্বারা জোর-করে-চাপানো পাতিব্রত্যের চিরস্থায়িত্বে তাঁর আস্থা কম ছিল। তিনি স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন অপেক্ষা স্বামী-স্ত্রীর ভালবাসাকে বেশী মূল্য দিতেন, এবং সেই ভালবাসা যদি স্বল্পকালীনও হয়, তাহলেও সেটার উপরেই বেশী গুরুত্ব আরোপ করতেন। প্রেমহীন দাম্পত্যের বোঝা সারাটা জীবন নিষ্প্রাণভাবে বয়ে বেড়ানোর চেয়ে প্রেমপূর্ণ দু’দিনের দাম্পত্য তাঁর কাছে সমধিক কাম্য ছিল। তাঁর প্রতি শিবনাথের ভালবাসা যখন শিথিল হয়ে গিয়েছিল, তিনি তখন পত্নীত্বের দাবীতে শিবনাথের উপরে ভার হয়ে চেপে থাকেন নি, শিবনাথকে তিনি তাঁর নিজের রুচিমাফিক পথ ও প্রবৃত্তি অনুসরণ করবার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। একদিন শিবনাথের সঙ্গে মন্ত্র সাক্ষী রেখে বিয়ে হয়েছিল বলেই সেই নজীরে গোটা জীবন তাঁর উপরে স্ত্রীত্বের অধিকার খাটাতে যাবে, এমন হৃদয়ের সম্পর্ক শূন্য সম্পত্তির বোধ কমলের ছিল না। তাঁর প্রবল আত্মমর্যাদাই তাঁকে সেই অপমানকর অবস্থা থেকে সযত্নে রক্ষা করেছিল। আবার অন্য একদিন তিনি যখন অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, তাঁর প্রতি অজিতের ভালবাসায় কোন খাদ নেই, সেই ভালবাসা নানা কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, তখন অজিতকে গ্রহণ করতে তাঁর আটকায় নি; যদিও কমল জানতেন যে, আশুবাবুর কন্যা মনোরমা এক সময়ে অজিতের বাগদত্তা ছিলেন। মনোরমা ও অজিতের মধ্যেকার ভালবাসার আকর্ষণ ফুরিয়ে গিয়েছিল বলেই কমল সেই শূন্যস্থান পূরণে আপত্তি করেন নি, নয়ত শত প্রলোভনেও তাঁকে সেই কাজে রাজী করানো যেত না।

এখানে শরৎচন্দ্র সৃষ্ট তিনটি বিদ্রোহিনী নারী চরিত্রের যে ছাঁচ আঁকা হল, সেটা থেকে মনে হতে পারে যে, শরৎচন্দ্র ভারতীয় সনাতন পাতিব্রত্য তথা একপত্নীত্বের আদর্শকে আঘাত করবার জন্যই এই চরিত্রগুলির পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেকথা ঠিক নয়। এই সব চরিত্র তাঁর শিল্প-পরিকল্পনার মধ্যে বিচ্ছিন্ন দৃষ্টান্ত হিসাবে এসেছিল; নিজের জীবনে বহুবিচিত্র নারী-পুরুষের সংস্পর্শে তিনি এসেছিলেন, তাঁদের থেকে বেছে এই চরিত্রগুলিকে তিনি বাংলা সাহিত্যে উপহার দিয়েছিলেন। নইলে তাঁর মনের পক্ষপাত কিন্তু বরাবরই ভারতীয় সনাতন হিন্দু একপত্নীত্বের আদর্শের দিকেই ছিল। হিন্দু দাম্পত্য আদর্শকে তিনি অত্যন্ত বড় করে - শুভদা, বিরাজবৌ, অন্নদাদিদি (শ্রীকান্ত প্রথম পর্ব), সুরবালা (চরিত্রহীন), কুসুম (পণ্ডিতমশাই), মৃণাল (গৃহদাহ) প্রভৃতি চরিত্রায়ণের সাহায্যে তুলে ধরেছিলেন। বিধবার পক্ষে প্রত্যক্ষের তো কথাই নেই, চিন্তাতেও পরপুরুষের ধ্যান করা যে অনুচিত, সেই ছবিটা তিনি তাঁর বড়দিদির মাধবী ও পল্লীসমাজের রমা চরিত্রগুলির মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। মৃণাল বিধবা হওয়ার পরে তাঁর উপরেও তিনি একই বরাত চাপিয়ে দিয়েছিলেন। শরৎচন্দ্র পূর্বোক্তা লীলারাণী গঙ্গোপাধ্যায়কে একটি চিঠিতে জানিয়েছিলেন যে, তিনি তাঁর বইতে একজন বিধবারও পুনর্বিবাহ ঘটাননি। কিন্তু কেন ঘটাননি, সেই কারণ তিনি অনুক্ত রেখেছিলেন। কারণটি বিশ্লেষণ করে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেননি। তবে বুদ্ধিগতভাবে তিনি যে বিধবাবিবাহের পক্ষপাতী ছিলেন, সেটার একাধিক নজির তাঁর চিঠিপত্রের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু বুদ্ধির সমর্থন আর হৃদয়ের অনুমোদন কখনোই এক হয় না। মানুষ উপরে-উপরে বুদ্ধি দিয়ে যা বিশ্বাস করে, সব সময় হৃদয় দিয়ে সেটাকে মেনে নিতে পারে না। সংস্কার সহজে মরতে চায় না। তাই কঠিন পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রায়ই সেটা বুদ্ধির যুক্তিকে নাকচ করে দেয়। শরৎচন্দ্রের ক্ষেত্রেও সেরকম কিছু একটা ঘটেছিল কিনা - সেটা একটা প্রশ্নচিহ্ন হয়েই থেকে গিয়েছে।

পথের দাবীর আখ্যানভাগে দেখতে পাওয়া যায় যে, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার জন্য নবতারা তাঁর স্বামীকে ছেড়ে চলে এসেছিলেন। এরপরে কবি ও বেহালাবাদক শশীর সঙ্গে তাঁর বিয়ের সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল; কিন্তু তারপরে হঠাৎই জানা গিয়েছিল যে, আহমেদ নামক এক মিলের টাইম-কিপার মুসলমান যুবককে বিয়ে করে তিনি শশীকে পথে বসিয়ে ছেড়েছিলেন। এই গল্পের সারমর্ম কি হতে পারে সেটা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অবকাশ থাকাই স্বাভাবিক, তবে গল্পটি থেকে লেখকের মনোগত অভিপ্রায়কে বোঝার ভুল সম্ভবতঃ হওয়ার কথা নয়। এটা নবতারা নামক একটি বিশেষ মেয়ের অনুচিত স্বাধীনচারিতার প্রশ্নই শুধু নয়, ন্যায়সঙ্গত কারণ ব্যতিরেকে যেকোন বিবাহিত নারীর স্বামী ত্যাগের অনৈতিকতাকেই সম্ভবতঃ এখানে ইঙ্গিতে সমালোচনা করবার চেষ্টা করা হয়েছে বলে দেখতে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য যে, পথের দাবী উপন্যাসের আর কোথাও কিন্তু কোন মুসলমানের নামোল্লেখ পর্যন্ত নেই, কিন্তু হঠাৎই কথা নেই বার্তা নেই নবতারার কাহিনীতে ওই মেয়েটির স্বভাব-তারল্যকে ফুটিয়ে তোলবার জন্য কেন যে শরৎচন্দ্র একটি মুসলমান যুবকের আমদানী করেছিলেন, সেটা আজও সমালোচকদের কাছে মস্তবড় একটা ধাঁধা হয়ে রয়েছে। আসলে খেলাচ্ছলে অথবা কোন তুচ্ছ কারণে স্বামীকে ছেড়ে চলে আসবার চটুলতাকে শরৎচন্দ্র আদপেই সহ্য করতে প্রস্তুত ছিলেন না। অভয়ার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্তের চিত্র আঁকা সত্ত্বেও এই ব্যাপারে তাঁর মনোভাব আপসহীন ছিল বলেই মনে হয়। পতিগতপ্রাণা নারীচরিত্রগুলিকে প্রাণের সমস্ত দরদ ঢেলে আঁকার মধ্যেই তাঁর সেই মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, অন্নদাদিদিকে তিনি কী মহীয়সী করেই না এঁকেছিলেন। স্বামীর শত অত্যাচারেও অন্নদাদিদির সতীত্ব কিন্তু টোল খায়নি। বিরাজের সতীত্বকে তিনি তাঁর সাময়িক বিভ্রম সত্ত্বেও শেষপর্যন্ত অস্খলিত ও নিষ্কলুষ রেখেছিলেন। বাল্যপ্রণয়ের অজুহাতে পরপুরুষের প্রতি আকর্ষণের আবেগকে অশ্রদ্ধেয় প্রতিপন্ন করে শেষ পর্যন্ত স্বামিত্বের আদর্শকে খুবই বড় করে দেখানো হয়েছিল। অধঃপতিত স্বামীর হাতে বহুবিধ লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সত্ত্বেও শুভদার অপার সহিষ্ণুতা, ক্ষমা-প্রবণতা নারীজাতির পক্ষে এক মহা-অনুকরণযোগ্য গুণরূপে ওই উপন্যাসে কীর্তিত হয়েছে। শুধুমাত্র স্বামীত্বকে গৌরবান্বিত করে তোলবার জন্য সরযূ ও কুসুমের স্বামী-পরিত্যক্তা হওয়ার কষ্ট চরম করে দেখানো হয়েছিল। দীর্ঘদিন বাদে জীবানন্দকে দেখবার ফলে ষোড়শীর মধ্যে লুপ্তপ্রায় স্বামীত্বের সংস্কার জেগে উঠেছিল। কিন্তু এসব বাহ্য ছিল। চরিত্রহীন উপন্যাসের সুরবালার মধ্যে শরৎচন্দ্র স্বামীত্বের গৌরবকে সবচেয়ে বড় করে দেখিয়েছিলেন। সুরবালার পতিভক্তির শক্তি ও পবিত্রতাকে তিনি এতটাই মহিমা দিয়েছিলেন যে, কিরণময়ীর মত বুদ্ধিশালিনী সনাতন শাস্ত্রশাসনের বিধিবিধান লঙ্ঘনকারিণী সাহসিকা রমণী সেই চরিত্রের সংস্পর্শে এসে একেবারেই যেন চকিতে বদলে গিয়েছিলেন। কিরণময়ীর মধ্যে যে অন্তর্সংঘাত দেখানো হয়েছিল, সেটার মূলেও ওই স্বামী অন্তপ্রাণ নারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ছিল। সুরবালার স্বামীভক্তির প্রবলতা দেখে কিরণময়ী তাঁর মরণোন্মুখ স্বামীকে প্রাণভরে সেবা করতে শিখেছিলেন। তাঁর স্বামীকে যদিও বাঁচানো সম্ভব হয়নি, তবুও তখন থেকেই সেই নারীর জীবনে বুদ্ধির সঙ্গে হৃদয়ের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। কিন্তু উপন্যাসটির ট্র্যাজেডি এখানেই যে, কিরণময়ী সেই দ্বন্দ্বের কোন মীমাংসা করতে পারেন নি। ওই দ্বন্দ্বের ফলেই শেষপর্যন্ত তাঁর মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটেছিল।

এই প্রবন্ধের শুরুর দিকেই বলা হয়েছে যে, শরৎচন্দ্র মূলতঃ ব্যক্তির স্বাধীনতার পক্ষপাতী ছিলেন, কিন্তু পারিবারিক ক্ষেত্রে এলেই তাঁকে অন্যরূপে দেখতে পাওয়া যায়। সেখানে তিনি মূলতঃ রক্ষণশীল ছিলেন। সনাতন ভারতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ধর্ম ও আচার-প্রথাই যেন গার্হস্থ্য জীবনের স্তরে তাঁর সবচেয়ে বেশি মনোহরণ করেছিল। যদিও সেই সঙ্গে একথা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তাঁর রক্ষণশীলতাও তাঁর শিল্পসৃষ্টির গুণে পরম আস্বাদ্য হয়ে উঠেছে। পক্ষান্তরে বৃহত্তর সামাজিক প্রশ্নে কখনও তিনি রক্ষণশীল, তো কখনও আবার প্রগতিশীল হয়ে উঠেছিলেন। সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির সংঘাতের প্রশ্নে কখনও তিনি সমাজকে জয়ী করেছিলেন (যেমন, রমার ও সাবিত্রীর ক্ষেত্রে), তো কখনও আবার ব্যক্তিকে জয়ী করেছিলেন (যেমন, অভয়ার ক্ষেত্রে)। এই মিশ্র মানসিকতার জন্য তাঁর ব্যক্তিক স্বভাবের গঠন দায়ী ছিল, যেটার মূলে তাঁর কৌলিক সংস্কার অনেকটাই কাজ করেছিল। তাছাড়া, তাঁর বাস্তববাদও ওই ধরণের দ্বৈধতার একটি প্রধান কারণ ছিল। একজন শিল্পী হিসাবে মূলতঃ বাস্তববাদী ছিলেন। তিনি একাধিক জায়গায় বলেছিলেন যে, তিনি কোন সমাজ-সংস্কারক নন, তখনকার সমাজে সত্যি সত্যি যা ঘটেছিল, সেগুলোকে একটা রূপ দিয়েই তিনি খালাস হয়েছিলেন। সেকালের সমাজে যেসব সমস্যা ছিল, সেগুলোর প্রতি তিনি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন; কিন্তু সেই সমস্যাগুলো সমাধানের ভার তিনি নেননি। অবশ্য একজন শিল্পী হিসাবে সেটা তাঁর কৃত্যও ছিল না। যেহেতু তিনি একজন শিল্পী ছিলেন, সেহেতু সমাজের প্রকৃত চেহারাটা ফুটিয়ে তুলতে পারলেই তাঁর কর্তব্য সমাধা হয়ে গিয়েছিল। তবুও এরই মধ্যে কখনও কখনও শরৎ-মানসের প্রগতিশীল ছবিটি ঝিলকিয়ে উঠেছিল। তিনি যেন কোন কোন ক্ষেত্রে সমাধান দেওয়ার কিনারায় পৌঁছে গিয়েছিলেন বলেই মনে হয়। কৌলীন্য প্রথা যে একটি অত্যন্ত অশ্রদ্ধেয় ক্ষতিকর প্রতিষ্ঠান, সেটা তিনি তাঁর বড় গল্প বামুনের মেয়ে-তে বেশ ভাল করেই দেখিয়ে দিয়েছিলেন। মেল-প্রবর-গাঁই-গোত্র মেলাবার ব্যর্থ চেষ্টায় উদ্যমক্ষেপ ও সময় নষ্ট না করে বর ও কন্যার স্বেচ্ছা-নির্বাচনের ঔচিত্য ও সুস্থতাকে তিনি তাঁর অরক্ষণীয়া উপন্যাসের জ্ঞানদা ও অতুলের পারস্পরিক আকর্ষণকে শেষ পর্যন্ত জয়ী করে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। তেমনি দত্তা উপন্যাসে বিজয়া ও নরেনের পারস্পরিক স্বাভাবিক আকর্ষণকে তিনি মর্যাদা দিয়েছিলেন, ও পরিণামে সেটাকে বিবাহের শীলমোহর দিয়ে বিলাসের সঙ্গে বিজয়ার বাগদত্তা হওয়ার কৃত্রিমতাকে অগ্রাহ্য করে পাকা করে তুলেছিলেন। আহারাদির বাছবিচার নিয়ে তাঁর অত যে খুঁতখুঁতে বাই ছিল, তাঁর গল্পোপন্যাসে ছোঁয়াছুঁয়ির প্রসঙ্গ একটা সদাবিদ্যমান ধুয়োর মত বারেবারেই ফিরে এসেছিল। তাঁর গৃহদাহ উপন্যাসের শেষটি পড়লে কিন্তু মনে হয় যে, ছোঁয়াছুঁয়ির অন্তঃসারশূন্যতাই তাঁর প্রতিবাদ্য ছিল। অন্ততঃ সেই উপন্যাসে সেটা যে প্রতিবাদ্য ছিল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। রামবাবু তো হিন্দুধর্মের মহিমা প্রকটনের উদ্দেশ্যেই অচলার কাছে স্বপাক আহারের উপযোগিতা, শুদ্ধাচারী হয়ে চলবার উপযোগিতা, হিন্দুর স্বধর্মনিষ্ঠায় স্থিত থাকবার সার্থকতা ইত্যাদি বিষয়ে কত গালভরা কথাই বলেছিলেন; কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি যখন জানতে পেরেছিলেন যে, না জেনে তিনি এক বিধর্মী ব্রাহ্মকন্যার হাতের পাক অন্ন গ্রহণ করেছেন, তখন তাঁর সদাশয়তার খোলসটা আর বজায় থাকেনি। সুরেশকে মৃত্যুশয্যায় শায়িত ও অচলাকে নিতান্ত অপরিচিত পরিবেশে অসহায় অবস্থার মধ্যে ফেলে রেখে তিনি তক্ষুণি প্রায়শ্চিত্তবিধানের জন্য তড়িঘড়ি কাশীতে ছুটে গিয়েছিলেন। লেখক সেখানে প্রকারান্তরে সংস্কারান্ধতার ক্রূরতাটাকেই -পাঠিকার চোখে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। ওই কাহিনীর সমাপ্তিতে তিনি মহিমের মুখে যে ভাবনা বসিয়েছিলেন, সেটা থেকেও এই ধারণার সমর্থন পাওয়া যায়। মহিম মনে মনে ভেবেছিল - “কিন্তু এই আচারপরায়ণ ব্রাহ্মণের এই ধর্ম কোন সত্যকার ধর্ম, যাহা সামান্য একটা মেয়ের প্রতারণায় এক নিমিষে ধূলিসাৎ হইয়া গেল, যে ধর্ম অত্যাচারীর আঘাত হইতে নিজেকে এবং অপরকে রক্ষা করিতে পারে না, বরঞ্চ তাহাকেই মৃত্যু হইতে বাঁচাইতে সমস্ত শক্তি অহরহ উদ্যত রাখিতে হয়, সে কিসের ধর্ম এবং মানব-জীবনে তাহার প্রয়োজনীয়তা কোনখানে? যে ধর্ম স্নেহের মর্যাদা রাখিতে দিল না, নিঃসহায় আর্ত নারীকে মৃত্যুর মুখে ফেলিয়া যাইতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করিল না, আঘাত খাইয়া যে ধর্ম এতবড় স্নেহশীল বৃদ্ধকে এমন চঞ্চল প্রতিহিংসায় এরূপ নিষ্ঠুর করিয়া দিল, সে কিসের ধর্ম? ইহাকে যে স্বীকার করিয়াছে, সে কোন সত্য বস্তু বহন করিতেছে? যাহা সে ত বর্মের মত আঘাত সহিবার জন্যই! সেই তো তার শেষ পরীক্ষা!” (শরৎ-সাহিত্য সংগ্রহ, সপ্তম সম্ভার, পৃ: ২৬২-৬৩) এটা থেকে পরিষ্কার মনে হয় যে, শরৎচন্দ্র ধর্মের নামে আচার-বিচার ছোঁয়াছুঁয়ির বাড়াবাড়িকে কখনও যথার্থভাবে সমর্থন করতে পারেননি। তিনি ধর্মের মূলবস্তুকে ধর্মের সারাৎসার বলে নির্দেশ করতে চেয়েছিলেন - সেটার আনুষ্ঠানিকতা কিংবা আচারকে নয়। কিন্তু শরৎ-সাহিত্য পূর্বাপর অনুধাবন করলে এই বিষয়ে সংশয় যেন কিছুতেই ঘুচতে চায় না। উপরের উদ্ধৃতিতে লেখকের যে মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে, সেই মনোভাবের সঙ্গে তাঁর রচনা কিন্তু সর্বত্র সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলেনি বলেই দেখতে পাওয়া যায়। আহারের বাছবিচার নিয়ে তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলির অনেকগুলিরই এত বেশি মাথাব্যথা যে, সন্দেহ হয়, সেই মাথাব্যথার খানিকটা গ্রন্থকারের নিজের মাথাব্যথারই প্রক্ষেপণ ছিল কিনা! শরৎ-সাহিত্যে ব্রাহ্মণত্বের তথাকথিত মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের ভাবটিকে পরিস্ফুট করবার চেষ্টা এতটাই প্রকট, এবং সেটা নিয়ে চিত্র-চরিত্রের এত ছড়াছড়ি যে, কখনও কখনও ওই স্বাজাত্যাভিমান রীতিমত বিসদৃশতার কোঠায় গিয়ে পড়ে। ব্রাহ্মণের পৈতের প্রতি শরৎচন্দ্রের বড় মায়া ছিল - এমনতর মায়ায় বদ্ধ হয়েই তিনি একাধিক বৈপ্লবিক চরিত্রের স্রষ্টা হয়েও সমালোচকদের চূড়ান্ত বিচারে সংকীর্ণ প্রাদেশিকতা কিংবা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উঠতে পারেন নি।

ব্রাহ্ম সমাজের প্রতি তাঁর বড়ই অনীহা ছিল। কথায় বলে, যে যে ভাবে মানুষকে দেখতে চান, সে সেই ভাবেই তাঁকে চিত্রিত করেন। সমাজের প্রতি বিরাগ প্রদর্শনের জন্যই তিনি যেন দত্তার রাসবিহারী চরিত্রটিকে ইচ্ছা করেই বেশি বেশি কালির পোঁচ দিয়ে কালিমালিপ্ত করে এঁকেছিলেন। গৃহদাহের কেদারবাবুর অর্থলোলুপতাকে চিত্রিত করবার পিছনেও তাঁর সেই একই উদ্দেশ্য কাজ করেছিল বলে অনেকে সন্দেহ করে থাকেন। কোন মহৎ শিল্পীর মধ্যে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণচিত্ততা কিন্তু সহজে ভাবতে পারা যায় না। রবীন্দ্রনাথের গোরা উপন্যাসের পরেশবাবুর ঔদার্যের সঙ্গে তুলনা করলেই বুঝতে পারা যাবে যে, এই চরিত্র দুটির অসম্পূর্ণতা ও অসঙ্গতি কোথায়। কুটকচালে বুদ্ধি ও অর্থলোলুপতা কোন একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেই নয় যে, সেই দুটি দোষ দেখাবার জন্য একটি বিশেষ সম্প্রদায়কেই বেছে নিতে হবে। ব্রাহ্ম সমাজের নেতারা হিন্দু সমাজের প্রচলিত গণ্ডী ত্যাগ করে বাইরে বেরিয়ে এসে ধর্মসংস্কার করতে চেয়েছিলেন বলে শরৎচন্দ্র কোন সময়েই তাঁদের ক্ষমা করতে পারেননি। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে একবারও তাঁর এই কথাটা খেয়াল হয়নি যে, শতাব্দীর বঙ্গদেশে শিক্ষায়, সমাজ সংস্কারে, রাজনৈতিক চেতনার জাগরণে, সাহিত্যে, স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারে, একাধিক কুপ্রথার (যথা - বাল্যবিবাহ, নারীনিগ্রহ, সুরাপান ইত্যাদি) মূলোচ্ছেদ করবার চেষ্টায় ওই ব্রাহ্ম সমাজই সবচেয়ে অগ্রণীর ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। যে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাংলার মানুষের গর্বের কোন শেষ নেই, তিনিও ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত মানুষ ছিলেন। যদিও একথা বলাই বাহুল্য যে, কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মসম্প্রদায়ের ছাপ দিয়ে রবীন্দ্রনাথের মত বড় মনের একজন মানুষকে চিহ্নিত করতে যাওয়ার চেষ্টা বৃথা। শরৎচন্দ্র অনেক জায়গায় ঘুরে অনেক মানুষের সঙ্গ ও অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবার পরেও কেমন করে অমন অনুদার থেকে যেতে পেরেছিলেন - সেটা অবশ্যই একটি স্থায়ী প্রশ্ন। যাই হোক, এই সব ত্রুটি-বিচ্যুতি অসম্পূর্ণতা অসঙ্গতির প্রশ্ন বাদ দিলে শরৎচন্দ্র সত্যিই কিন্তু এক অসামান্য । তাঁর দরদের কোন তুলনা হয় না। তাঁর ভাষা ও ভঙ্গি চেখে চেখে ভোগ করবার মত এক পরম স্বাদু বস্তু। পল্লীভিত্তিক উপন্যাস-গল্প রচনাতেই তাঁর সৃষ্টির শিল্পোৎকর্ষ সবচেয়ে বেশী প্রকাশ পেয়েছিল, কিন্তু তাঁর ভাষাটি পুরোপুরি নাগরিক মেজাজের ছিল। তাঁর সম্পর্কে হতবুদ্ধি হয়ে লক্ষ্য করবার মত একটা অদ্ভুত ব্যাপার হল যে, যে-গোঁড়ামি ও সংরক্ষণকামিতার জন্য সমালোচকরা বারে বারে তাঁর সমালোচনা করেছেন, সেই গোঁড়ামি ও সংরক্ষণশীলতার আধারে রচিত তাঁর পারিবারিক গল্প-উপন্যাসগুলিতেই কিন্তু তাঁর শ্রেষ্ঠ শিল্পোৎকর্ষ ব্যঞ্জিত হয়েছে বলে দেখতে পাওয়া যায়। অন্যদিকে তাঁর মননশীল বইগুলি কিন্তু পাঠক-পাঠিকা চিত্তের উপরে তেমনভাবে দাগ কাটতে পারেনি। তাঁর পথের দাবী উপন্যাসটিকে সেই ব্যর্থতার একটি নিদর্শন হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে। সমালোচক নারায়ণ চৌধুরীর বক্তব্যে, “উপন্যাসটির আরম্ভ হয়েছিল অতি চমৎকারভাবে, সেই যেখানে সব্যসাচী গেঁজেল গিরিশ মহাপাত্র রূপে রেঙ্গুনের জেটিতে আত্মপ্রকাশ করছে ও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে সটকে পড়ছে, সেই অংশটির কোন তুলনা নেই। কিন্তু তার পরেই যেন বইটি কেমন মিইয়ে গেছে। রাষ্ট্র-বিপ্লব সম্পর্কে সব্যসাচীর গালভরা বুলিগুলিও পড়তে ভালই লাগে, কিন্তু ভারতীর সঙ্গে বসে বসে অন্তহীন কথার কচকচি এক এক সময়ে রীতিমত বিরক্তিকর ঠেকে। সব্যসাচীকে যদি একজন দরদী মানবতাবাদী চরিত্র রূপে আঁকাই লেখকের উদ্দেশ্য ছিল, তাহলে সূচনায় এমন কঠিন বিপ্লবের গৌড়-চন্দ্রিকা ফাঁদা হয়েছিল কেন? বইটা একেবারেই মাঠে মারা গেছে অপূর্ব-ভারতী জুটির তুচ্ছ আকর্ষণ-বিকর্ষণের পালার বর্ণনায় পাতার পর পাতা ভরাতে গিয়ে। … তবু সব্যসাচীর কথাগুলির দাম আছে। এই থেকে শরৎচন্দ্রের রাষ্ট্রিক চিন্তার কাঠামোর একটা আভাস পাওয়া যায়। এই উপন্যাসের বক্তব্য ও অন্যান্য রচনাংশ থেকে মনে হয়, শরৎচন্দ্র অহিংসা তত্ত্বের বিশেষ অনুরাগী ছিলেন না, দেশের স্বাধীনতা ও তৎপরবর্তী সমাজ বিপ্লব সাধনের জন্য সশস্ত্র পন্থার কার্যকারিতাতেই তাঁর সমধিক বিশ্বাস ছিল। তবে তাঁর চোখে রক্তারক্তিটাই বিপ্লব নয়, বিপ্লব মানে একটা ‘দ্রুত আমূল পরিবর্তন’ (সব্যসাচী)। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিচার করলে দেখা যায়, তাঁর এই বক্তব্যের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক উপন্যাসগুলির দৃষ্টিভঙ্গির আদৌ কোন মিল নেই। শরৎচন্দ্রের পারিবারিক উপন্যাসগুলির পটভূমিকায় পথের দাবী বা এই জাতীয় রচনা যেন একটা বিচ্ছিন্ন শিল্পকর্ম রূপে আলাদা হয়ে ঝুলে আছে। শরৎচন্দ্র মূলতঃ সামন্ততান্ত্রিক ভূমিব্যবস্থায় লালিত ছায়াচ্ছন্ন পল্লীর গার্হস্থ্য জীবনের শিল্পী, তাঁর শিল্পের পরিকল্পনার মধ্যে একটা পথের দাবী কিংবা একটা শেষ প্রশ্ন উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এই দুই ধরনের রচনা কর্মের মধ্যে না আছে মেজাজের মিল, না চিত্তা-কল্পনার সামঞ্জস্য। একের বক্তব্য অন্যে খারিজ হয়ে যাচ্ছে। নিষ্কৃতি-পল্লীসমাজ-পণ্ডিতমশাই-অরক্ষণীয়ার লেখকের সঙ্গে পথের দাবী-শেষ প্রশ্নের লেখককে ঠিক কেমন যেন মেলানো যায় না।”

(তথ্যসহায়ক গ্রন্থাবলী:

১- শরৎ-সাহিত্য সংগ্রহ।

২- শরৎচন্দ্র সমালোচনা সাহিত্য, সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত।

৩- শরৎ-সাহিত্যের মূলতত্ত্ব, বিশু মুখোপাধ্যায়।

৪- শরৎচন্দ্রের চিঠিপত্র, গোপালচন্দ্র রায়।

৫- শরৎচন্দ্র, গোপালচন্দ্র রায়।

৬- কথা সাহিত্য, নারায়ণ চৌধুরী।)

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

বিবর্তন......।

গত শতকের নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত তোপখানা রোডের মাথায় প্রেসক্লাবের ঠিক বিপরীতে কিছু যাদুকর বসতেন। তাঁরা করতেন টাইপরাইটারে। পেশাটি হয়ে গেছে।

থিন পেপার, রিবন, কার্বন পেপার শব্দগুলো জাগানিয়া, ঠিক ততোটাই যতটা জাগায় রেমিংটন

১৯৮০ সালে ছবিটি তুলেছিলেন টম লিয়ার।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

কেন বাংলাদেশে চায়?

২০০১ সালে ১/১১ এর পরে তৎকালীন ইউএস জর্জ ডব্লিউ দেশগুলোর মধ্যে একপ্রকার ক্রুসেড ঘোষণা করেন।

যদিও হামলায় অভিযুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন সৌদি আরবের , বাকি ২ জন ইয়েমেনের

অনেকে এও বলে থাকেন থেকেই এর অর্থায়ন হয়েছে। যেহেতু সৌদ রাজপরিবার বহুদিন ধরেই ওয়াহাবি -সালাফি দের সাহায্য করে আসছেন।

দক্ষিণ
, আফগানিস্তানের কথা ইতোমধ্যে জানেন। তাই আর বলছি না।

যাই হোক, সারা জুড়ে ইসলামী দলগুলো কে নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এখন পুরো বিশ্ব কে সে একলা তান্ডব চালাতে পারবে না।

এর জন্য দরকার।

দক্ষিণ এশিয়ায় এই তালুকদারির দায়িত্ব দেওয়া হয় মালাউস্তান কে ।

যদিও মালাউস্তানের সাথে পশ্চিমাদের সম্পর্ক অতীতে অম্লমধুর ছিল।

কিন্তু কোপানোর সাথে তাদের সাথে নেয় ।

বাংলাদেশে মালাউস্তানের জায়গীরদারি

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ বিষয়ে মালাউস্তান /হাগুস্তানের সিদ্ধান্ত কে চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয় ।

অর্থাৎ রা মালাউস্তানের স্বার্থকে বিবেচনা নিয়েই বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের পদক্ষেপ নিবে ।

জামায়াতের ধূলিসাৎ করার ষড়যন্ত্র
জিয়া পরিবারের সাথে মালাউস্তানের সম্পর্ক শুরু থেকেই খারাপ ছিল।

সাথে । যেহেতু জামায়াত ইসলামপন্থী ও কট্টর ভারত বিরোধী এবং পাকিস্তানের সাথে ভালো সম্পর্ক চায়।

তাই মালাউস্তানিরা তাদের নিশ্চিহ্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাথে সাথে গোয়েন্দা সংস্থা গুলো র উপর আইএসআই এর প্রভাব বেড়ে যায় ,এটা সত্যি কথা।

নিশ্চিহ্ন করার পদক্ষেপ
জঙ্গি জঙ্গি খেলা, , মুক্তিযুদ্ধের এইসব বোগাস কাল্পনিক কিছু জিনিস সামনে নিয়ে আসে।

যদিও অদ্যবধি, নবী রাসুল দের যুদ্ধ ব্যতীত খুব অল্প যুদ্ধ ই পাওয়া গেছে। যেখানে ধর্ষণ, গনহত্যা হয় নি।

এদিক দিয়ে সোভিয়েত রা জার্মান দের, বৌদ্ধ জাপান চীনাদের, কিংবা হিন্দু মারাঠারা হিন্দু বাঙালি দের ছাড় দেয় নি।

যার যে সময় শক্তি ছিল সে অন্যদের শোষন করেছে। কিন্তু দুনিয়ার সব দোষ চাপানো হয় পাকদের উপর।

৩ লক্ষ কে ৩০ লক্ষ বানিয়ে ভারত থেকে আজব কাহিনী বাজারে ছাড়া হয়। সবগুলো র ভিলেন আবার কোন মাওলানা অথবা পীর ।

বিএনপির ভুল সিদ্ধান্ত
বিএনপি শুরুতে জামায়াত কিংবা ইসলামী স্ট দের রক্ষা করার পদক্ষেপ নেয় নি।

এর কারণ হতে পারে রহমান ও কে নিস্ক্রিয় করে ফেলা।

র এজেন্ট দের ফাঁদে পড়া। কিংবা বিএনপি তে বামেদের ডুকে পড়া

ড. কামালের
২০১৮ সালে নির্বাচনে ভারত ও আওয়ামী লীগ কাজে লাগায় এক বাটপার কামাল কে । এবং বাঙ্গু পোগতিশীল ড। জাফরুল্লাহ চৌধুরী কে ।

যদিও জাফরুল্লাহ মানুষ হিসেবে খারাপ না । কিন্তু স্ট দের প্রতি তার বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি অজানা নয়।

বিএনপি কে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় তাদের ৭০-৮০ টা আসন দেওয়া হবে। ২০২৩-২৪ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচন করবেন না।

বিএনপি ফাঁদে পড়ে যায়।

ভারত থেকে ফেরার সময় পকেটে করে এক সংবিধান নিয়ে আসেন।

সেটা কে ঘষামাজা করে নিজের নামে চালান কামাল।

তার যোগ্যতা বলতে ১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবুরের ছেড়ে দেওয়া আসনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জিতা।

নিজের মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এক ইহুদী র কাছে ।

, এরদোয়ান ও ইরানের উত্থান ও আমেরিকার টনক নড়া
যার শুরু আছে, তার শেষ ও আছে।

আফ্রিকান মাগুর ওবামা প্রশাসন দেশে দেশে আরব বসন্ত নামে গনতন্ত্রপন্হীদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করে ।

এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নতুন বোতলে পুরাতন মদ ঢেলে আবার পরিবেশন করা।

কিন্ত সবসময় ত এক দ্বান্ধামি কাজে লাগে না।

সেই পরিকল্পনায় পানি ঢেলে এক ব্রিলিয়ান্ট মিলিটারি কমান্ডার কাসেম সোলাইমানী।

এককথায় , সিরিয়া ও লেবানন থেকে পশ্চিমাদের বিতাড়িত করতে ভূমিকা পালন করেন।

রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ ও আমেরিকার টনক নড়া
অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি ,২০২২ সালে আক্রমণ করে।

আমেরিকা এবার ও মনে করেছিল সেই পুরনো ট্যাগ ও ডায়লগ দিয়ে সবাইকে এক কাতারে আনবে ।

কিন্তু এসবের কিছুই ঘটে নি। মুসলিম বিশ্ব, আফ্রিকা, ল্যাটিন কেউ না।

না রাশিয়া কে ফাঁদে ফেলে কুপোকাত করা যায় নি। বরং ইউরোপ কুপোকাত হচ্ছে।

তাই এবার সে তার অনেক পুরনো ভুল সংশোধন করছে ।

দক্ষিণ এশিয়ায় টেররের সমাপ্তি
অবশেষে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালে ট্রাম্প প্রশাসন তালিবদের সাথে চুক্তি করে ওয়ার অন টেররের টানেন হয় , যার আনুষ্ঠানিক সম্পন্ন হয় ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

৯/১১ এর যে প্রশ্নগুলোর উত্তর হয়ত কখনও খুজে পাওয়া যাবেনা

১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ৯/১১ এর হামলার ১১ তম বার্ষিকী। এ দিনে ২ হাজার ৭৫১ জন মারা যায় এই ঘটনায়। দায়ী করা হয় "আল কায়েদা"কে।সেই থেকে সন্ত্রাসী সংগঠনকে নির্মূল করার অভিপ্রায়ে আজ দুটি স্বাধীন মুসলিম দেশ ও ইরাক ধংশপ্রায় , পিছিয়ে গিয়েছে কমপক্ষে ১০০ বছর। লক্ষ লক্ষ নিরীহ নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষকে উদ্বাস্তু বানানো হয়েছে। কালিমা লেপন করা হয়েছে মুসলমানদের উপর !!! বিশ্বব্যাপী ইসলামকে "সন্ত্রাসী ধর্ম" " বাদী ধর্ম" হিসেবে পরিচিত করা হয়।। কিন্তু ভিতরের সত্য কি, কেউ কি কোনদিন জানতে পারবে?? নিরপেক্ষ ভাবে চিন্তা করে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানা দরকারঃ

যে চারটি হয়েছিল সেগুলোর Black Box কোথায়? ১৭ জন হাইজাকারের মধ্যে ৭ জন এখনো জীবিত কেনো? ৯/১১ এ সালমান রুশদীর ফ্লাইট কেনো স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বাতিল করে? তাহলে কি তারা আগের থেকেই জানত এমন হতে যাচ্ছে? এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনো অমিমাংশিত বা বলতে পারেন US. Govt. এগুলোর সমাধান দিতে পারে নাই। আমার আপনার মতো সাধারন মানুষ যদি এ প্রশ্নগুলো করতো তাহলে জনগন থোরাই কেয়ার করত, কিন্তু সমস্যা হলো রবার্ট ফিস্ক, গ্রিফিন ট্রাপলে - ডেভিড রে গ্রিফিন এর মতো অসাধারন প্রতিভাবান journalist- মনে করেন ৯/১১ আমেরিকার উচ্চ পদস্হ কর্মকর্তাদের করা inside job. এমন আরো কতোগুলো অমিমাংসিত প্রশ্ন গুলো নীচে দেয়া হলো:

পেন্টাগন:

পেন্টাগনের যে অংশে প্লেন হিট করেছে তার কোনো ভিডিও নেই কেনো ? অথচ ঐ মুহুর্তে সেই অংশে ৫টি ভিডিও ছিল?

পেন্টাগনে হিট করার কোনো বোয়িং এর ছবি নেই কেনো?

বুশ এবং War on Terror:

৩) বুশকে যখন প্রথম কানে কানে খবর দেয়া হয়েছিল (যেটার ভিডিও হয়ত আপনারা দেখে থাকবেন) তখন বুশের ভাষ্য অনুযায়ী তাকে বলা হয়েছিল America Under Attack. অথচ যারা Leap Reader Expert তারা বলেছিল এধরনের কোনো কথা তার কানে বলা হয়নি। তাহলে কি বলা হয়েছিল?

৪) এটাকের সংবাদ পাবার পরে কিভাবে স্কুল ভিজিট চালিয়ে গেলো? এবং এরপরে কিভাবে তার হাস্যরত ছবির পোজ দিয়েছিলো?

হাইজাকার এনালিসিস:

৫) ১৭ জন হাইজাকারের মধ্যে অন্ততপক্ষে ৭ জন এখনো জীবিত আছে বলা যায়, যারা বিভিন্ন দেশ থেকে দাবী জানিয়েছে? এ সম্বন্ধে US Govt. নীরব কেনো বা কোনো উত্তর দেয় না কেনো?

৬) বলা হয়, মোহাম্মদ আতা ছিল পাইলট এবং সে-ই বোয়িং ৭৫৭ চালিয়ে World Trade Center আঘাত করে। এরকম কোনো প্রুফ আছে কি যে মোহাম্মদ আতা efficient pilot? তদন্তে যেটা পাওয়া গেছে, যে aviation company থেকে আতা ট্রেইনিং নিয়েছে সেটা False. তাহলে একজন অদক্ষ পাইলটের পক্ষে কি সম্ভব এমন নিখুতভাবে World Trade Center হিট করা?

৭) ১৭ জন মুসলমান ৩টা এয়ারপোর্ট থেকে প্লেন হাইজাক করে নিয়ে যায় ... এখন প্রশ্ন হলো ২০০-৩০০ জন যাত্রীর মধ্যে ঠিক ১৭ জন হাইজাকার ছিল এই কিভাবে বের করা হলো?

৮) ১৭ জন হাইজাকারের মধ্যে মোহাম্মদ আতা টিম লিডার এটা কিভাবে বের করা হলো?

৯) মোহাম্মদ আতার এয়ারপোর্টের তে সি,সি ক্যামেরার যে ছবি পাওয়া যায় সেটা মুভিং কেনো? সি,সি ক্যামেরার ভিডিও কি দর্শকের পিছু পিছু মুভ করে?

১০) হাইজাকার সকলেই Credit Card এর মাধ্যমে টিকিট পারচেজ করেছে। এটার কোনো প্রুফ আছে কি? এই ১৭ জনের এমন কোনো প্রুফ নেই কেনো যে তারা পারচেজ করেছে?

১১) কেউ কোনো প্লেনে ফ্লাই করলে বোর্ডিং লিস্টে তাদের নাম থাকে। যে ১৭ জন হাইজাকার ছিল তাদের বোর্ডিং লিস্ট নেই কেনো?

বোয়িং এবং ফ্লাইট এনালিসিস:

১২) হাইজাক হবার পরে যারা যাত্রি ছিল , বলা হয় তাদের কেউ কেউ মোবাইল ফোনে তাদের আত্নিয় স্বজন দের সাথে কথা বলেছে। পরবর্তিতে তদন্ত করে দেখা গেছে সেই সব কলের কোনো বিল চার্জ করা হয় নাই। কেনো?

১৩) ৪টি প্লেনের ব্লাক বক্স কোথায়? কিছু কিছু উদ্ধার কর্মি বলেছে এগুলো FBI seize করেছে, তাহলে সেগুলো কেনো করা হলো না।

১৪) কন্ট্রোল করে FFA, আর কোনো সমস্যা হলে সেটা হ্যন্ডেল করে NORAD। Flight 77 আকাশে ওড়ার পর 8:46 - ডিরেকশন change করল অথচ FFA, NORAD কে জানালো 9:24 মিনিটে। এখন প্রশ্ন হলো ৩৮ মিনিট FFA-র বুঝতেই লাগলো শুধুমাত্র notification পাঠানোর জন্য? এটার জন্য কারা দায়ী? সেই সব অফিসারদের বিরুদ্বে কোনো case হয়েছে কি?

১৫) হিট করেছে WTC1 এবং WTC2 কে। WTC7 তার থেকে অনেক দুরে অবস্হান করা সত্বেও সেটা ভেংগে পড়ল কিভাবে?

১৬) আসলে কি কোনো বোয়িং হিট করেছিল? তাহলে ক্লোজ ক্যামেরার সাহায্যে যে বিমান গুলো দেখা যায় সেটা US Air Force plane এর মতো দেখা যায় কেনো?

১৭) বোয়িং ৭৫৭ WTC হিট করার পর এত তারাতারি ভেংগে পড়ে কিভাবে? যারা WTC আর্কিটেক্ট তারা বলেছে এই বিল্ডিং গুলো বোয়িং প্রুফ ছিল অর্থ্যাত ৮৬ হাজার গ্যালন তেলে যে তাপ উতপন্ন হয় সেটাতে স্টিল গলার কথা নয়, এমনকি এত তারাতাড়ি কোনো মতেই সম্ভব নয়। তদুপুরি আশেপাশে সেই মুহুর্তে যারা ছিল তারা ডিনামাইট বিস্ফোরনের শব্দ শুনেছে। তাহলে কি Control Demolition?

১৮) কাজে কারা ছিল? যে ধংশস্তুপ ছড়িয়ে ছিল সেটা উদ্ধার কার্যে যারা ছিল তাদের কেনো O গ্রাউন্ডে স্বাধিনভাবে কাজ করতে দেয়া হয়নি।

হাজার হাজার সেখানে কর্মরত থাকা সত্ত্বেও সেদিন কেন কেউ কাজে যোগ দেয় নি? কেন একজন ইহুদি ও মারা যায় নি?

অন্য কেউ কি জড়িত ছিল? কোনো প্রমান?:

১৯) Flight 175, Flight 11 যেদুটো প্লেন টুইন টাওয়ারে হামলা করে সেটার এয়ারপোর্টের দায়িত্বে ছিল ICTS নামক Jews company। এবং এই কম্পানির দায়িত্বে ছিল Ezra Harel নামক ব্যক্তি যে Mossad এর একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব। সবই coincidence?

২০) কম্পানি odigo কিভাবে WTC attack এর ২ ঘন্টা আগে জানতে পারলো ..

সন্দেহের তীর মোসাদের দিকেঃ

সম্প্রতি ?আমেরিকার ফ্রি প্রেস উইকলি'-তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৯/১১-এ নিউ ইয়ার্ক বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রে চালিয়েছে ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। এ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ৯/১১-এর বিমান হাইজ্যাকার হিসেবে অভিযুক্ত জিয়াদ আল-জাররার কাজিন দীর্ঘদিন ধরে মোসাদ-এর এজেন্ট হিসেবে আমেরিকায় তৎপর ছিলেন। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, মার্কিন ভূমিতে বিমান হামলায় ইসরাইলী সংস্থা মোসাদ জড়িত।

টাইমস, সম্প্রতি অপর এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, লেবাননী, নাগরিক আলী আল জাররা দৃশ্যত ফিলিস্তিনীদের সমর্থক হিসেবে বিগত দু'দশক ধরে মোসাদের পক্ষে উঁচুমানের গোয়েন্দা এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন।

ইটালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফার্নেসকো কোসিগা বলেছেন, ৯/১১-এর ঘটনা সিআইএ মোসাদ-এর গোপন পরিকল্পনার যৌথ প্রযোজনার ফসল। মার্কিন ও ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভালোভাবেই অবহিত যে, ৯/১১ এর বিমান হামলা ঘটিয়েছে মার্কিন সিআইএ ও ইসরাইলী মোসাদ।

৯/১১ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত:

২১) ৯/১১ নিয়ে যে সকল সাংবাদিক তদন্ত করতে চায় তাদের কেনো U.S Govt. স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয় না। কেনো Cristofer bollyn ৯/১১ নিয়ে কাজ করতে যেয়ে হুমকির সম্মুখিন হয়েছে?

২২) ৯/১১ commision report বের হবার আগে কেনো আফগানিস্হান আক্রমন করা হলো। তদন্তের রিপোর্ট বের হবার আগে কি একশনে যাওয়া যায়?

২৩) যে সব কম্পানি উদ্ধার কার্যে (Engine 331) ছিল তারা কেনো এখন কোনো তদন্ত টিমকে interview দেয় না (Referencethepowerhour.com) তারা কি লুকাতে চায়?

মালেশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী এর কয়েকটি কথাঃ

বিশ্ববিখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক, ভিডিও এর এক সেকেন্ড কে হাজার ভাগ করে দেখিয়ে দিয়েছেন, বিমান দালানে আঘাত করার আগেই সেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে। সেটা কিভাবে সম্ভব হলো? এ দুই দালান আশেপাশে হেলে বা কাত হয়ে পড়ার বদলে ভেঙ্গে নিচের দিকে ডেবে গেছে। বিমানের আঘাতে এ ভবন দু'টি ধসে পড়েছে বলে মনে হয়নি বরং মনে হয়েছে, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের সাহায্যে ভবন দু'টি ধসিয়ে দেয়া হয়েছে।

ওই এলাকায় তৃতীয় আরেকটি ভবনও একইভাবে ধ্বসে পড়েছে, কিন্তু ওই ভবনে কোনো বিমান আঘাত হানেনি। আশেপাশের ভবনগুলোর কোনো রকম ক্ষতি ছাড়া কী করে তৃতীয় ওই ভবনটি ধ্বসে পড়লো।।

আঘাত করলে, সেখানে বিমানের বা যাত্রীদের কোন ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় নি কেন?? বিধ্বস্ত হওয়ার পর একটি বিমান কি শূন্যে মিলিয়ে যেতে পারে?

উপসংহার:

অনেকে হয়ত বলতে পারেন মাস মিডিয়ায় কেনো এসব আসে না? এটাও একটা প্রশ্ন যেটার উত্তর আপনি সহজে পাবেন না। আসলে করপোরেট গ্রুপ যাদের গ্রেটার ইন্টারেস্ট- এ এবিষয়টি জড়িত ছিল তারা কখনও চায় না সবাই আসল ব্যাপারটা জানুক। আর মাস মিডিয়া CNN, Fox News, New york Times এগুলোতে না পেলেও অসংখ্য গবেষনামুলক লেখা, বই, নেট এ প্রচুর রেফারেন্স পাবেন যেটা আসলে কি হয়েছিল তা জানার জন্য যথেষ্ঠ। তবে একটা কথাই বলা যায়, সাম্রাজ্যবাদীদের এক সফল প্রহসন নাটক মঞ্চস্থ হয়ে ছিল সেদিন।

(একটি সংগৃহীত ও সংকলিত লেখা)

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

বাংলাদেশের প্রথম

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কুষ্টিয়ার জগতি স্টেশন। এটিই এদেশের প্রথম রেল স্টেশন। আমলে কলকাতার থেকে কুষ্টিয়া পর্যন্ত যাতায়াতে ১৮৬২ সালে এ স্টেশনটি চালু করা হয়।

১৮৪৪ সালে আর. এম স্টিফেনসন কলকাতার কাছে হাওড়া থেকে পশ্চিম বাংলার সমৃদ্ধ রানীগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি গঠন করেন। এ কোম্পানি ১৮৫৪ সালে থেকে হুগলি পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার রেললাইন চালু করে। এরপর ১৮৬২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকাতা থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত রেলপথ চালু করে। এই লাইনকেই বর্ধিত করে ওই বছরের ১৫ নভেম্বর কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন শাখা উন্মোচন করা হয়। সে সময়ই প্রতিষ্ঠিত হয় পূর্ববঙ্গের প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতি। পরে ঢাকার সঙ্গে কলকাতার ব্যবস্থা সহজতর করতে ১৮৭১ সালের ১ জানুয়ারি জগতি থেকে বর্তমান জেলার পদ্মানদী তীরবর্তী গোয়ালন্দঘাট পর্যন্ত রেললাইন চালু করা হয়।

সে সময় মানুষ কলকাতা থেকে ট্রেন করে জগতি স্টেশন হয়ে গোয়ালন্দঘাটে যেতেন। সেখান থেকে স্টিমারে পদ্মানদী পেরিয়ে চলে যেতেন ঢাকায়। কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে দেশের সেই প্রথম রেলওয়ে স্টেশন জগতি।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

১৯৬৯ সালে বিশ্বাবিদ্যালয়ের বিভাগের শিক্ষার্থী।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

ভারতবর্ষের প্রথম 'সেলফি'

প্রাথমিক যুগে ভারতবর্ষে ফটোগ্রাফির চর্চা সীমাবদ্ধ ছিল দেশীয় রাজা, নওয়াব, জমিদার ও অবস্থাপন্ন ব্যক্তিবর্গের মধ্যে। ফটোগ্রাফারদের বিপুল অর্থব্যয়ে নিজ দরবারে নিয়ে আসলেও এদের অনেকে পরে ছবি তোলার কায়দা শিখে নেন। দীর্ঘ অলস সময়ে কে হিসেবে গ্রহণ করে তারা ব্যাপক আনন্দ পেয়েছিলেন। চর্চায় নিবেদিত এমন একজন রাজা ছিলেন ত্রিপুরার মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য। প্রথম দিকে তৈলচিত্র অঙ্কনের কাজে সুবিধা হবে ভেবে ফটোগ্রাফির প্রতি আকৃষ্ট হন। নিজে ইংরেজি ভাল জানতেন না। একান্ত সচিব তাঁকে বিদেশী ফটোগ্রাফির বই অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিতেন। বীরচন্দ্র ধীরে ধীরে প্রথমে দ্যাগারোটাইপ এবং পরে ক্যালোটাইপ তোলায় পারদর্শী হয়ে উঠেন। আশপাশের প্রকৃতি, আপনজন, সভাসদ, সকলকিছুই করতে চেয়েছেন তিনি। নিজ ক্যামেরায় তুলেছেন প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথের ছবি। আগরতলার রাজপ্রাসাদে তিনি নিয়মিত ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীর আয়োজন করতেন। তাঁর তোলা বেশ কিছু ছবির প্রিন্ট উদ্ধার করা গেছে। স্ত্রী মহারাণী মনোমোহিনী দেবীও চর্চা করতেন। ১৮৮০ সালের দিকে শাটারে বেঁধে সস্ত্রীক এক ছবি তুলেছিলেন মহারাজা বীরচন্দ্র । জানামতে এটি ভারতবর্ষের প্রথম ‘ ' ’।

সূত্র:

🔺বইঃ সেকালের ছবিওয়ালা

🔺লেখক: তারেক আজিজ

প্রকাশকাল : মে, ২০২২

প্রকাশনী : কবি প্রকাশনী

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:


চুলের মুঠি ধরে উঠোনে এনে রামদায়ের এক কোপে গলা কেটে ফেলে -
স্মরণ -

বাংলাদেশের

---------------------------------------------------

কবি মেহেরুন্নেসার জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ আগস্ট কলকাতার খিদিরপুরে।

মেহেরুন্নেসার কবি প্রতিভার প্রকাশ ঘটে খুব ছোট বেলায়।

১৯৫২ সালে মাত্র দশ বছর বয়স থেকেই অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দেন তার খুরধার লেখনীর মাধ্যমে এবং জায়গা করে নেন সংগ্রাম, , দৈনিক , অনন্যা, , বেগম, যুগের দাবিসহ তৎকালীন প্রায় সকল পত্রিকায়।

মাত্র দশ বছর বয়সে ১৯৫২ সালে তার সংবাদ এর ‘’ পাতায় প্রকাশিত হয়। তিনি বড়দের জন্য লেখা শুরু করেন ১৯৫৪ সালে ‘কাফেলা’ পত্রিকার মাধ্যমে।

কবি মেহেরুন্নেসার রুচি, ব্যক্তিত্ব, সৌন্দর্য ও কবিতা সমান্তরাল। তার কর্ম, বিশ্বাস এবং বিবক্ষাই তার কবিতা।

প্রথমে তার কবিতায় ফররুখ আহমদের প্রভাব, ইসলামী ভাবধারা, আরবী-ফার্সী শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। জাগে মখলুখ জাগে ফুল পাখি জেগেছে সুরুজ ইত্যাদি।

তার বেশিরভাগ কবিতা প্রকাশিত হয় ‘বেগম’ পত্রিকায়। বেগম পত্রিকার সম্পাদক নূরজাহান বেগমের পরামর্শে তিনি স্বদেশ, প্রেম ও প্রকৃতি বিষয়ে আরবী-ফার্সী শব্দের ব্যবহার বর্জন করে কবিতা লিখতে শুরু করেন।

তিনি রানু আপা নামে ‘পাকিস্তানি খবর’ এর মহিলা মহল পাতার সম্পাদনা করতেন। কবি হিসেবে তিনি ছিলেন সত্যিকার কবিতাকর্মী।

খুব আত্মবিশ্বাস ও সাহসিকতা, তার কবি প্রতিভা আদায় করে নিয়েছিল কবি কামালের স্নেহ আনুকূল্য।

১৯৬১ সালে যোগ দেন ফিলিপস রেডিও কোম্পানিতে। এছাড়া তিনি ইউএসআইএস লাইব্রেরিতেও অনুলিখনের কাজ নিয়েছিলেন।

উল্লেখ্য যে, সে সময় ফিলিপস ও উর্দুতে মুখপত্র ছাপাত, কবি মেহেরুন্নেসার চেষ্টায় বাংলা ভাষায় রচিত পত্রিকাও প্রকাশে বাধ্য হয় ফিলিপস কর্তৃপক্ষ।

কবিতার প্রতি , বাংলা সাহিত্যের প্রতি অকৃত্রিম আকর্ষণ তাকে সাহিত্য চর্চা থেকে দূরে থাকতে দেয়নি।

'রানু আপা' ছদ্মনামে রাজনৈতিক প্রবন্ধ লিখেছেন ৬৯ এর আইয়ুববিরোধী উত্তাল গণআন্দোলনে।

নিজের চেষ্টায় তিনি মিরপুরের ৬ নং সেকশনে, ডি ব্লকের ৮ নং বাড়িটি বাবার নামে বরাদ্দ পান।

১৯৬৩ সালে কবি মেহেরুন্নেসা সপরিবারে বসবাসের জন্য ওই বাড়িতে ওঠেন। ১৯৬৫ সাল থেকে তারা থাকতে শুরু করেন মিরপুরে। সে সময় মিরপুর ছিল বিহারী অধ্যুষিত এলাকা।

বাঙালি পরিবার বিহারীদের তুলনায় নগণ্য। এর কিছু দিনের মধ্যে তার বাবা অসুখে পড়েন। তখন তাকে আরও বেশি পরিশ্রম করতে হয় পরিবারের জন্য।

৭১ এ বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে কবি কাজী রোজীর (প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য) নেতৃত্বে এ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সক্রিয় সদস্য ছিলেন কবি মেহেরুন্নেসা।

১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ। বাংলা প্রাঙ্গণে লেখক সংগ্রাম শিবির আয়োজিত বিপ্লবী কবিতা পাঠের আসরে হাসান হাফিজুর রহমান, আহসান হাবীব, রাহমান, সৈয়দ শামসুল হক, আলাউদ্দিন আল আজাদ, হুমায়ুন কবিরসহ অন্য কবিদের সঙ্গে স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন মেহেরুন্নেসা।

এ আসরে সভাপতিত্ব করেছিলেন ড. আহমদ শরীফ। সেই অনুষ্ঠানে তিনি 'জনতা জেগেছে' কবিতাটি আবৃত্তি করেন।

বিহারী অধ্যুষিত মিরপুরে তিনি ও তার পরিবার অনেক আগে থেকেই চিহ্নিত হয়ে ছিলেন মুক্তিকামী বাঙালি হিসেবে।

২৭ মার্চ এলো, দুদিন আগেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তখন একতরফা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

কবি মেহেরুন্নেসা বিহারীদের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে, তার দুই ভাই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সদস্য রফিক ও টুটুলকে নিয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকা কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ২৩ মার্চ সকাল ১০টায় মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লক, ১২ নম্বর রোডে নিজ বাড়িতে বাংলাদেশের খচিত পতাকা উত্তোলন করেন।

এবং ওইদিন বেগম পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তার লেখা শেষ কবিতা (তাকে মারার মাত্র তিন দিন পূর্বে)। আর এই অপরাধে কাদের মোল্লার নির্দেশে ২৭ মার্চ তার মা, দুই ভাই ও তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার সময় তার বয়স হয়েছিল ঊনত্রিশ বছর।

মেহেরুন্নেসার ছোট দুই ভাইয়ের কাটা মাথা দিয়ে ফুটবল খেলা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী মিরপুরের আলী আহাম্মদের ভাষ্য মতে কবি মেহেরুন্নেসাকে চুলের মুঠি ধরে উঠোনে এনে রামদায়ের এক কোপে গলা কেটে ফেলে।

মেহেরুন্নেসার কাটা মাথার বেণী করা চুল ফ্যানের সঙ্গে ঝুঁলিয়ে ফ্যান ছেড়ে দেয়া হয়। উল্লাস করা হয় কাটা মস্তকের রক্ত ছিটিয়ে। এভাবেই কবি মেহেরুন্নেসা হন স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মহিলা কবি।

মিরপুরের সংগ্রামী হিসেবে তার নাম চিরকাল উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। কিন্তু এই মহান কবির বাংলাদেশে এক বোন ছাড়া কোন আত্মীয় নেই এবং তার বোন মোমেনা বেগম রক্ষণশীল পরিবারের গৃহবধূ হওয়ায় মেহেরুন্নেসাকে নিয়ে আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য তেমন কিছুই করা হয়নি।

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

জন্মদিনে লহ সালাম - সৈয়দ মুজতবা আলী

তিনি বলেছিলেন-"বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না!" প্রতিজ্ঞা করেছিলেন সাহেব ক্ষমা না চাইলে স্কুলে যাবেন না। বাবা রেগে গিয়ে তাঁকে এক মোজা তৈরির কারখানায় ঢুকিয়ে দিলেন। আবার বাবা নিজে বলেছিলেন একটা কিছু তো পড়তে হবে। তিনি তখন নির্দ্বিধায় পিতার কাছে শান্তিনিকেতনে পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ছাত্রটির নাম ,যার রচনা পড়লে ঘরে বসেই হয়ে যায় ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

জন্ম ১৯০৪ সালে জন্মাষ্টমীর দিন। বলতেন

তিথি মানলে হয় কখনো ১৩ই সেপ্টেম্বর কখনো ২৩শে সেপ্টেম্বর। আদতে শিলেটি মানে শ্রীহট্টের বাসিন্দা। পিতা ছিলেন করিমগঞ্জের কোর্ট রেজিস্ট্রার। ভর্তি হলেন সেখানকার এক স্কুলে। একবার সরস্বতী পূজার দিন স্কুলের ছেলেরা ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেটের বাংলোয় ঢুকে না বলে অনেক তোলে। সাহেব তো রেগে আগুন, হুকুম দিলেন ছেলেদের ধরে মারতে। সে সময়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে দেশ এমনিতেই ছিল গরম। ছাত্রদের বেত মারার জন্য স্কুলে হয়ে গেল হরতাল, কেউ ক্লাস করবে না। ক’‌দিন স্কুল বন্ধ থাকলো। এদিকে অভিভাবকদের অধিকাংশই ছিল কর্মচারী। সরকারের চাপে একসময় আন্দোলন মিটল। সব ছাত্ররা ক্লাসে যোগ দিলেও তিনি কিন্তু অটল। সাহেব ক্ষমা না চাইলে স্কুলে যাবেন না। বাবা রেগে গিয়ে তাঁকে এক মোজা তৈরির কারখানায় ঢুকিয়ে দিলেন।

এর কিছুদিন আগে রবীন্দ্রনাথ করিমগঞ্জে এক সাহিত্যসভায় এসেছিলেন। বক্তৃতায় তিনি এক প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যথার্থ মানুষ হতে হলে আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করতে হবে। ওই বয়সেই তিনি রবীন্দ্রনাথকে চিঠি লেখেন, আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করতে হলে কী করা উচিত। উত্তরে লেখেন, আকাঙ্ক্ষা উচ্চ করতে হলে আত্মস্বার্থ ছেড়ে অপরের জন্য, দেশের জন্য ভাবতে হবে।এদিকে মোজার কারখানায় ঢুকিয়ে দিয়ে পিতা তো আর নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন না। পুত্রকে জিজ্ঞেস করেন, একটা কিছু তো পড়তে হবে।তিনি তখন নির্দ্বিধায় পিতার কাছে এ পড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। পিতা লেখালেখি করে ব্যবস্থা করে দিলেন।

© ধ্রুবতারাদের খোঁজে

শান্তিনিকেতনে পড়তে এসে তাঁর সামনে বিশ্বসভার দুয়ার খুলে গেল। তখন দেশি–বিদেশি পণ্ডিতদের উপস্থিতিতে শান্তিনিকেতন উজ্জ্বল। একদিকে যেমন বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন, দিনু ঠাকুর শেখাচ্ছেন, অন্যদিকে বগ্‌দানব, ভিনটারনিৎস, হিডজিভাই মরিস প্রভৃতি বিদেশি পণ্ডিত। এখানেই তিনি পেলেন তাঁর আজীবনের সুহৃদ প্রমথনাথ বিশীকে। আসার পর রবীন্দ্রনাথ তাঁকে একদিন যে কোনও একটা কবিতা আবৃত্তি করতে বলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথেরই একটি কবিতা করলেন। কবি শুনে বললেন, তোর মুখে এখনও শ্রীহট্টের কমলালেবুর রস লেগে আছে। ওটা মুছতে হবে।

পরে উনি স্মৃতি চারণায় বলেছিলেন, সিলেটে আমরা ও–কার উচ্চারণে গোলমাল করি। ও–কার উচ্চারণে উ–কার উচ্চারণ করি, চোরকে বলি ‘‌চুর’‌। গুরুদেব এইটাই সংশোধন করত বলেছিলেন।

শান্তিনিকেতনের তিনিই প্রথম ভিন রাজ্যের । পাঁচ বছর পড়াশোনার পর আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু আলিগড়ের পরিবেশ তাঁর ভাল লাগেনি। শেষে কাবুলের শিক্ষা বিভাগে পেলে নির্দ্বিধায় সেখানে চলে যান। কাবুলে তিনি আনন্দেই দিন কাটাচ্ছিলেন। এমন সময়ে সেখানে বাচ্চাই সাকোর অভ্যুত্থানে ভারতীয়দের জীবন বিপন্ন হলে, বাধ্য হয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

আফগানিস্তানে যাওয়া ও থাকা নিয়েই তাঁর গ্রন্থ ’‌–বিদেশে’‌। নামকরণ নিয়ে বলেছিলেন, যেহেতু বইয়ের খানিকটা লেখা ভারতের বিষয়ে, বাকিটা আফগানিস্তানের তাই নাম দিলাম ‘‌দেশে ’‌।

১৯২৯ সালে, দেশে ফেরার পর তিনি যান। আদ্যন্ত নাস্তিক মানুষটি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে তুলনামূলক ধর্মশাস্ত্রে ডক্টরেট পান। ও শিখে নেন। সেখানকার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখলেন আরো এক অনবদ্য গ্রন্থ ‘‌চাচাকাহিনী’‌। সেখান থেকে ফিরে তিনি বরোদা কলেজের অধ্যক্ষ হন। অনেকদিন কাটিয়েছেন কায়রোতে, ছিলেন ফ্রান্সেও। এক জায়গায় লিখেছিলেন, তিনি চাকরী পেলে লেখেন না! চাকরী না থাকলে লেখেন। এই চাকরী তিনি বারবার কেন খুইয়েছেন,সেটাও খুব সহজ! কয়েক ডজন গণ্ডমূর্খের সঙ্গে তিনি চাকরী করতে পারতেন না! আর অবধারিত ভাবে তার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষই হতেন সেই ছাগল! স্বাভাবিক ভদ্রতাবশে তিনি ঝগড়া না করে, চাকরীটাই ছেড়ে দিতেন!

ভাগ্যিস ছাড়তেন, আর তাই বাংলা পেল অনবদ্য এক .... সৈয়দ মুজতবা আলী।

তার সব ও আড্ডার অনবদ্য ছড়িয়ে আছে ‘‌পঞ্চতন্ত্র’‌, ‘‌ময়ূরকণ্ঠী’‌ প্রভৃতি গ্রন্থে। মুজতবা আলীর রচনা পড়লে ঘরে বসেই হয়ে যায় বিশ্ব ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।

তাঁর কথায় "বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না!" এই মুসাফিরের চোখ দিয়ে যদি আজ সবাই দুনিয়াটা দেখতো.......…. ‌

আজ সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্মদিবসে আমাদের

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

ষাটের দশক। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। সে সময় এক ধরণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলছিল ঢাকায়। পুরান ঢাকার এক হিন্দু বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্য এক বন্ধুর সাথে সেই বাড়িতে গিয়েছিল ছফা। তার বন্ধুর আত্মীয়ের বাড়ি ছিল সেটা। সারারাত জেগে ছিলেন বাড়িটাতে।

সেই বাড়িতে ছিল পুরানো ধুলোয় জমা এক বুকশেলফ। সেখান থেকে বেছে একটা বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করেছিলেন ছফা। ছেড়া বই। কাভার নেই। বইটার নামটাও ছিল না কোথাও। তারপরও অদ্ভুত এক মুগ্ধতা নিয়ে পড়তে থাকেন বইটা।

এরই মধ্যে রাত্রী শেষে ভোর হয়। বইটাও পুরোটা পড়ে শেষ করতে পারেনি ছফা। বন্ধুর সাথে আবারও ফিরে আসেন হলে। কিন্তু মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে সেই বইয়ের লাইন-

"All theory, dear friend, is grey, but the golden tree of actual life springs ever green. "

কয়েকটা দিন যায় এভাবে। নাহ! বইটা মাথা থেকে যাচ্ছেই না। বইটা পুরোটা পড়ে শেষ করতেই হবে। কিন্তু ছফা তো নাম জানে না বইটার। কোথায় পাবে আর সেই বই?

দ্বারস্থ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইংরেজির অধ্যাপকের। ভীষণ রাগী ছিলেন সেই শিক্ষক। ধুকপুক বুকে সাহস সঞ্চয় করে অধ্যাপকের সামনে গিয়ে বলেন, " স্যার কয়েকদিন আগে আমি একটা বই পড়েছি, পুরোটা শেষ করতে পারিনি। বইটাও নেই আমার কাছে। বইটার নামও জানি না। কে লিখেছেন তাও জানি না। কিন্তু বইটা আমি পড়তে চাই। বইটাতে একটা লাইন আছে এমন, 'all theory is grey...' ছেড়া বই হওয়ায় নাম লেখা ছিল না বইটাতে। তবে হ্যাঁ, ফোলিও লাইনে লেখা ছিল ফাউস্ট।"

একথা শুনে অধ্যাপক সাহেব রক্তচক্ষু করে ছফার দিকে তাকায়। বলেন, "আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে জার্মান কবি গ্যোটেকে চিনো না। ফাউস্ট গ্যোটের বিখ্যাত মহাকাব্য।"

ছফার এক প্রবন্ধে এই ঘটনা পড়ার সময় ঠিক এই জায়গায় এসে শিউরে উঠেছিলাম আমি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জার্মান কবি গ্যোটেকে চেনে না, এটা মেনে নিতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।

আর আজ? কে-ই বা কাকে চেনে, কাকেই বা পড়ে!

পরের গল্পটা তো সবারই জানা। গ্যোটের প্রেমে পড়ে ছফা বেশ কয়েকবার গেছেন গ্যোটের শহরে। জার্মানিতে ছিলেন অনেকদিন। অনুবাদও করেছেন ফাউস্ট।

সেদিন ফেসবুকে দেখলাম। জার্মানির ভেৎসলার শহরের মহাকবি গ্যোটের স্মৃতিবিজড়িত কিয়স্কটি(পানশালা) আহমদ ছফার নামে নামকরণ করা হয়েছে। খবরটা পড়ে ভীষণ আনন্দ হয়েছে আমার।

৩০ জুন ছিল ছফার জন্মদিন।

শুভ জন্মদিন মৌলবী সাব।

লেখা কৃতজ্ঞতা - আঞ্জুমান লায়লা নওশিন

@bengali_convo
@masindia

নিচের হ্যাস ট্যাগ গুলো ব্যবহার করুন:

Show more
Qoto Mastodon

QOTO: Question Others to Teach Ourselves
An inclusive, Academic Freedom, instance
All cultures welcome.
Hate speech and harassment strictly forbidden.